উন্নয়ন ও অগ্রগতির অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে শিক্ষা

news paper

রায়হান আহমেদ তপাদার

প্রকাশিত: ৩-৬-২০২৩ দুপুর ১:৮

60Views

আধুনিক পৃথিবীতে ভালোমতো ঠিকে থাকতে হলে শিক্ষা ছাড়া বিকল্প কিছুই নেই। তাই বাঁচতে হলে জানতে হবে, জানতে হলে শিখতে হবে। কারণ একমাত্র শিক্ষাই পারে আলোকবর্তিকা হয়ে জীবন চলার পথ দেখাতে। একটি দেশ, একটি জাতির অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি হলো শিক্ষা। এই বিবেচনায় বলা হয়, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। অর্থাৎ একজন মানুষ যেমনি মেরুদণ্ড সোজা করে স্থির দাঁড়াতে পারেন, ঠিক তেমনি একটি জাতির ভিত্তিমূল, উন্নয়ন,অগ্রগতি এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া নির্ভর করে তার শিক্ষার উপর। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত,সভ্য এবং অগ্রসর। শিক্ষা অর্জন মানুষের জন্মগত মৌলিক অধিকারও বটে। আমাদের দেশে যে ৫টি মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে কিন্তু শিক্ষা একটি।

শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সার্বজনীন,অপরিহার্য,ব্যাপক। একজন মানুষকে প্রকৃত মানবিক ও সামাজিক গুণাবলী সম্পন্ন ব্যাক্তি হতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে মানুষের মন-মানসিকতার উৎকর্ষ সাধন সম্ভব হয়। একটি কুপিবাতি যেমন তাহার পার্শ্ববর্তী এলাকাকে আলোকিত করে তোলে, ঠিক একজন মানুষ যখন সমাজে বিকশিত হয়ে উঠেন তখন তার সাথে তার পরিবার,সমাজ এবং রাষ্ট্রও আলোকিত হয়ে উঠে। এতে করে আরো সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা আলোকিত হবার সুযোগ লাভ করে। শিক্ষা ও দারিদ্র্যের মধ্যে দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক বিরাজমান। প্রজন্মের পর প্রজন্ম দরিদ্র জনগোষ্ঠী কি অশিক্ষিতই থাকবে? দারিদ্র্য দূর করার জন্য চাই শিক্ষা। তাই আর্থিক ও মানসিক দারিদ্র্য দূর করার জন্য আনুষ্ঠানিক বা অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রকৃত ফলপ্রসূ সম্মিলন প্রয়োজন। বিশ্বায়ন এই ক্ষেত্রে বিশাল সুবিধা হিসেবে কাজ করার কথা থাকলেও, নানা কাঠামোগত বাধার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে উপযুক্ত কাজ এবং উপযুক্ত শ্রমিক একে অপরের নাগাল না পাওয়ায় তৈরি হচ্ছে একধরনের কূটাভাসের। এই সমস্যা সমাধানের পথগুলো আমাদেরকে ই খোঁজে বের করতে হবে। 

দেশের উন্নয়নের স্বার্থে মানব উন্নয়নে জোর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পূর্ব এশিয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। যেখান থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, শিক্ষা খাতে বর্ধিত বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে কীভাবে রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে সুফল বয়ে আনতে পারে। শিক্ষা হচ্ছে এমন একটি সম্পদ যার মালিকানা, মালিকের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। শিক্ষা এমন একটি সম্পদ যা ব্যবহার করলে তার দক্ষতা ও দীপ্তি আরও বৃদ্ধি পায়। জ্ঞান বা শিক্ষা অর্জনের খরচ ক্রমশ কমছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে শিক্ষা এখন নখাগ্রে এসে উপস্থিত হয়েছে। অন্য সব সম্পদের উৎপাদনশীলতা তাদের ক্রমপুঞ্জীভবনের সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পায়। অথচ শিক্ষা যত ব্যবহার করা হবে তত তার দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। তাই অন্যান্য সম্পদের তুলনায় শিক্ষার নিম্নমুখী, মধ্যমুখী সম্প্রসারণ আমাদের জন্য বৈষম্য কমানোর বিষয়েও সহায়ক হতে পারে। যেহেতু দরিদ্রের জ্ঞানসম্পদকে ধনী ব্যবহার করতে পারে কিন্তু দখল বা লুট করে নিতে পারে না। বিশেষত ইস্ট এশিয়ার মডেলে শিক্ষা ও সম্পদ প্রবাহকে বাজার ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের যুগপৎ ব্যবহারে দরিদ্র ও ধনী উৎপাদনশীল খাত অভিমুখে এমনভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়েছিল যে সেখানে একই সঙ্গে সমতা ও প্রবৃদ্ধি দুই-ই অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল। তবে শিক্ষার বৈষম্যহীন বিকাশকে থামানোর জন্য আমাদের দেশে শিক্ষাকে শাসককুল প্রথমে সুযোগে পরিণত করে ফেলেছে। তারপর আর্থিক বাধ্যবাধকতার দরুন বেশির ভাগ জনগণের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে এক বিশেষ ধরনের নিম্নমানের শিক্ষা এবং ধর্মীয় শিক্ষা। শিক্ষার মধ্যে এই বিভাজন, সমাজের মধ্যেও বিভাজন, বৈষম্যকে ত্বরান্বিত করছে। আধুনিক বিশ্বায়নের ফলে মানুষের অবাধ গতি বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে পুঁজি ও পণ্যের পাশাপাশি শ্রমেরও আদান-প্রদান বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা যদি আরও অবাধ হতো, সত্য সত্যই যদি আমরা একটি ভিসামুক্ত পৃথিবী পেতাম তাহলে জনসংখ্যা কোথাও কোনো সমস্যা হিসেবে বিরাজ করত না। 

তাছাড়া জনাকীর্ণ দেশ থেকে জনহীন দেশে সহজেই বহির্গমন সম্ভব হতো। পুঁজিঘন দেশ থেকে শ্রমঘন দেশে পুঁজি যেমন অবাধে চলে আসছে, তেমনি শ্রমঘন দেশ থেকে শ্রমও অবাধে পুঁজিঘন দেশে চলে যেত। ফলে উভয়েরই লাভ হতো-অব্যবহৃত পুঁজি ও অলস শ্রম উভয়ই ফলপ্রসূভাবে ব্যবহারের সুযোগ মিলত। কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। বিশ্বায়নের ফলে এই স্বতঃস্ফূর্ত সমাধানের পথে অনেকগুলো কাঠামোগত বাধা বর্তমানে গড়ে উঠছে। যেমন: জাতীয় রাষ্ট্রের মধ্যে শ্রম-পণ্য-পুঁজির গতিবিধির অবাধ নিয়মগুলো সুষম নয়। পুঁজি ও পণ্য যত অবাধে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আসতে পারে, শ্রম তত অবাধে উন্নত দেশগুলোতে প্রবেশ করতে পারে না। প্রযুক্তি, পুঁজি ও জ্ঞানের অসম বিকাশের কারণে সব পুঁজি বা সব মানুষ সব জায়গায় সমানভাবে খাপ খাওয়াতেও পারে না। যেমন অতীতে অটোমেটিক তাঁত ভারতবর্ষে যখন ইংল্যান্ড থেকে রপ্তানি শুরু করেছিল বা অটোমেটিক তাঁতটাই ভারতে আমদানি হয়েছিল তখন অসংখ্য ভারতীয় তাঁতি প্রতিযোগিতায় হেরে যান ও মৃত্যুবরণ করেন। এমনকি ভারতীয় তাঁতির হাড়গোড়ের ওপর ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আবার বর্তমানে উল্টোদিক থেকে আমাদের অশিক্ষিত লোকেরা যখন বিদেশ যাচ্ছেন তখনো সেখানে সবচেয়ে নিচু কাজগুলোই তাঁদের ভাগ্যে জুটছে! তাই অসম সম্পর্কের ফাঁদের কারণে বিশ্বায়নের প্রকৃত সুফল সুষমভাবে বণ্টিত হচ্ছে না। আমরা যখন উন্নয়নের কথা বলি তখন প্রায়ই ভুলে যাই যে বস্তুগত উন্নয়নই একমাত্র উন্নয়ন নয়। বস্তুগত উন্নয়ন শেষ বিচারে মানবিক উন্নয়নে কতটুকু পরিণত হলো তা দিয়েই বস্তুগত উন্নয়নের সার্থকতা পরিমিত হয়। এ জন্যই বর্তমান বিশ্বে বিশ্বব্যাংকের নিম্ন আয়, মধ্যম আয়, উন্নত আয় ইত্যাদি অভিধার পাশাপাশি প্রতিযোগী আরেকটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যার ভিত্তি মানব উন্নয়ন সূচক। এই সূচকের একটি অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে শিক্ষা। 

তবে এ কথা সত্য যে বাংলাদেশ সম্প্রতি তার আপেক্ষিক নিম্ন মাথাপিছু আয় সত্ত্বেও কতিপয় মানব উন্নয়ন সূচকের ক্ষেত্রে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছে। যেমন, প্রাথমিক শিক্ষা, নারী শিক্ষা, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ইত্যাদি। বাংলাদেশের একটি বাড়তি সুবিধা হচ্ছে এর জনসংখ্যার ঘনত্ব। এখানে অল্প জায়গায় অনেক লোক জড়াজড়ি করে বাস করে। তার ফলে এখানে যেকোনো কথা, যেকোনো জ্ঞান দ্রুত বিদ্যুতের বেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এখানে প্রায় এগার কোটি মোবাইল এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বহু কম্পিউটার সেন্টার তৈরি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কীভাবে বাংলাদেশে আইসিডিডিআর কর্তৃক আবিষ্কৃত ওরাল স্যালাইন জ্ঞানটি এ দেশে শিশুমৃত্যুর হার অতি দ্রুত কমিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল! তাই বলা হয়ে থাকে যে বাংলাদেশের সামাজিক খাতে আপেক্ষিকভাবে অধিকতর অগ্রগতি অর্জন করার পেছনে বাংলাদেশের বিস্তৃত সামাজিক নেটওয়ার্ক বা সামাজিক পুঁজির একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এই বিস্তৃত সামাজিক নেটওয়ার্কে যদি আপনি বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও মহৎ চিন্তার বীজ বপন করতে শুরু করেন তাহলে কল্পনা করুন তা কত দ্রুত এ দেশে নতুন নতুন সৃজনের অঙ্কুর সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এখনই জ্ঞান বিচ্ছুরণের যে প্রক্রিয়া চালু রয়েছে, যে প্রাণশক্তির বলে বাংলাদেশের কৃষিতে, পোশাকশিল্পে, নানা ধরনের বিচিত্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের মধ্যে এবং প্রবাসী শ্রমিকের শ্রমের মধ্যে উৎপাদন ও সৃজনের বিশাল একটি সক্রিয় প্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে তা আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে, যদি রাষ্ট্র এই সমস্ত ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে আরও বেশি শিক্ষা ও সম্পদের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এরপরও সারা পৃথিবীতে আজ স্বীকৃত হয়েছে যে প্রত্যেক শিশুকে উন্নতমানের একটি ন্যূনতম সাধারণ শিক্ষা দিতে হবে, যাতে সে পড়তে পারে, নিজের ভাষায় লিখতে পারে এবং সব রকম সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ সঠিকভাবে করতে ও বুঝতে পারে। যদি এটুকু ঠিকভাবে করা যায়, বাকিটুকু সে নিজেই করে নিতে পারবে।

আর আর্থসামাজিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার চাহিদারও উন্নতি হবে এবং ধাপে ধাপে আমাদেরও মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা এবং স্নাতক ডিগ্রিকে সর্বজনীন অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এবং শিক্ষা বিনিয়োগ বৃদ্ধির 
ব্যাপারে আরো মনোযোগ একান্ত প্রয়োজন। যা আমাদের সমাজের মনোজগতের আঁধার দূর করে বস্তুজগতের আঁধারও ত্বরান্বিত হারে দূর করার শুভসূচনা ঘটাতে সক্ষম হবে।এ কথা সত্য যে আপেক্ষিকভাবে উদ্বৃত্ত জনসংখ্যা যত দিন বেকার থাকবে তত দিন তাদের দারিদ্র্য থেকে মুক্তি অসম্ভব। সুতরাং, তাদের জন্য উপযুক্ত কাজ সৃষ্টিই দারিদ্র্য থেকে মুক্তির প্রাথমিক পূর্বশর্ত। এই সমস্যা পরস্পরবিচ্ছিন্ন উদ্যোক্তানির্ভর বাজার অর্থনীতিতে অনিবার্য।বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের অনুধাবন করতে হবে যে দারিদ্র্য ও অশিক্ষার এই মেলবন্ধন ভাঙতে না পারলে আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম দরিদ্র ও অশিক্ষিতই থেকে যাব। তাই এই বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে হবে। সুতরাং সামগ্রিকভাবে বলা যায় যে আমাদের অর্ধসমাপ্ত গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার জন্য দেশের বিভিন্ন শ্রেণিকে নিজ নিজ ভূমিকা সম্পর্কে আত্মসচেতন ও সুশিক্ষিত করে না তুলতে পারলে আমরা সত্যিকার অর্থে মধ্য আয় এবং পরবর্তী সময়ে উন্নত আয়ের দেশে পরিণত হতে পারব না।শিক্ষা যেহেতু একটি সর্বজনভোগ্য দ্রব্য সে জন্য তার সরবরাহের দায়িত্বও বর্তায় সার্বজনীন কর্তৃত্বের কাঁধে অর্থাৎ সরকার বা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব হচ্ছে অর্থনীতির প্রয়োজনমতো একটি ফলপ্রসূ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলে সবার জন্য শিক্ষা ও সেই অনুযায়ী কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করা ও দারিদ্র্য দূর করা। আর সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে যথাসময়ে যথাযথ মাত্রায় জোগান দেওয়া। পরিকল্পিত কর্মসংস্থান, পরিকল্পিত শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হলেও যদি শিক্ষার গুণগত মান ও উৎপাদনশীলতা যথেষ্ট না হয় তাহলে উপার্জিত আয় দ্বারা দারিদ্র্য দূরীভূত হবে না, আরও খারাপও হতে পারে। 

অর্থাৎ কম উৎপাদনশীল কম আয়ের ভারসাম্য ফাঁদেই আমরা দীর্ঘকাল আটকে থাকতে পারি। রাষ্ট্র চাকরি সৃষ্টি করে বেকারত্ব দূর করার নামে শূন্য উৎপাদনশীল অতিরিক্ত ছদ্মবেশী বেকারও তৈরি করতে পারে। সুতরাং শিক্ষাকে যদি সত্যিই দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চাই তাহলে আমাদের একই সঙ্গে শিক্ষার পরিমাণগত মাত্রা, শিক্ষার বিশেষ ধরন এবং শিক্ষার গুণগত মান এসবের দিকেরই ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন অর্জন করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষাই শক্তি, শিক্ষাই মুক্তি। মেরুদণ্ড ছাড়া দেহ অচল। তবে মেরুদণ্ড দৃশ্যমান বস্তু। অপর দিকে শিক্ষা বা শক্তি অদৃশ্য ক্ষমতা। শক্তিকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি প্রাণশক্তি, দৈহিক শক্তি ও মেধাশক্তি। প্রাণশক্তি ও দৈহিক শক্তির মাধ্যমে মেধাশক্তির বিকাশ হয়। বিকশিত শক্তি এক চলমান প্রক্রিয়া, যা কোনো অবস্থায়ই থেমে থাকে না। শিক্ষা মেধাশক্তি বিকাশের চলমান ধারা অব্যাহত রাখে। মূলত মেধাশক্তিই মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। আদিকাল থেকে মানবজাতি মেধাশক্তিতে বলীয়ান হয়ে অন্যান্য প্রাণীর ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে চলেছে। মানবজাতির মধ্যেও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায় মেধাশক্তিই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। শিক্ষা মেধাশক্তির উৎকর্ষ ঘটায়। ফলে দেখা যায়, পৃথিবীতে যে জাতি শিক্ষায় যত বেশি অগ্রগামী, সে জাতি মেধাশক্তিতে তত বেশি বলীয়ান। সে কারণে শিক্ষার উৎকর্ষ ঘটিয়ে সংখ্যালঘিষ্ঠ ইহুদি জাতি পৃথিবীতে সমগ্র মানবজাতির ওপর সার্বিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে চলেছে। মূলকথা, শক্তি অদৃশ্য। মেরুদণ্ড দৃশ্যমান। দৃশ্যমান বস্তু সহজে ধ্বংস করা যায়। অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায় না, তাকে ধ্বংস করা যায় না। ভঙ্গুর মেরুদণ্ড নিয়ে অসুস্থ প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে। চলৎশক্তিহীনভাবে অপরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সম্পাদন করতে পারে। অথচ শিক্ষাবিহীন মেধাশক্তিহীন মানুষ পৃথিবীতে অগ্রগতি লাভ করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে মানসিক রোগী হিসেবে পরিচিতি পায়। সমাজে সে অবহেলিত ও অবাঞ্ছিত। সে কারণে শিক্ষাকে মেরুদণ্ডের সাথে তুলনা না করে মেধাশক্তির সাথে তুলনা করা অধিক বাঞ্ছনীয়।


আরও পড়ুন