বিএনপি জামায়াত কর্তৃক রাষ্ট্র মেরামতের অভিন্ন রুপরেখা অবাস্তব

news paper

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ১-৬-২০২৩ দুপুর ৪:৮

76Views

সমমনা দলের দফাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে রাষ্ট্র মেরামতের অভিন্ন রূপরেখা খসড়া চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। সমমনাদের তথা জামায়াতের বেশ কিছু প্রস্তাব সংযোজন বিয়োজন করে বিএনপির ২৭ দফার সঙ্গে নতুন ৪টি দফা যুক্ত করা হয়েছে। এতে রূপরেখা এখন পরিনত হচ্ছে ৩১দফায়। কিন্তু আসলেই এসব রূপরেখা তারা পূর্বের নির্বাচনী সময়গুলোতে কতটুকু পূরন করতে পেরেছে? বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০০১-২০০৬ সাল বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারণে চিহ্নিত হয়ে থাকবে সবসময়।

একটি দেশকে ক্ষমতাসীন দল চাইলে কতটা নারকীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, তার নিদর্শন বিএনপি-জামায়াতের এই শাসনামল। সমমনা দলগুলোকে নিয়ে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের অভিন্ন রূপরেখা অবাস্তব ও অসাংবিধানিক। দালাল আইন বাতিলের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি এবং সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এবার তার দল বিএনপি 'রেইনবো নেশন'-এর মাধ্যমে পরাজিত শক্তি, খুনি, যুদ্ধাপরাধীদের আরেক দফা রাষ্ট্র ও সমাজের স্বীকৃতি দিচ্ছে। বিএনপি ২৭ দফায় বর্তমান সরকারের মৌলিক সংশোধনের কথা বলেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা আসলে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখল নিস্কণ্টক করতে চাইছে। বিএনপির এ রাজনীতি অতীতের মতো এবারও জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে। বিএনপি আগে ১০ ও ১৪ দফা দিয়েছিল। ২৭ দফাও নতুন কিছু নয়। যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা যারা দেয়, তারা প্রগতির ধারার মধ্যে আছে বলে মনে হয় না। বিএনপির কথিত রাষ্ট্র মেরামতের 'রেইনবো নেশন' রাজাকার, জঙ্গি, জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের ঐক্যের কালো দলিল। এই কালো দলিল যারা সমর্থন করছে, তারা বিচ্যুত।  

বিএনপির রূপরেখা যুদ্ধাপরাধীদের আরেক দফা স্বীকৃতির দলিল। বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র। বিএনপি ও জামায়াত ইতোমধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, সেই ষড়যন্ত্র যতক্ষণ না ছাড়ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কথা শোনার মতো অবস্থা নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানার প্রশ্নই আসে না। এটা ডেড ইস্যু। বিএনপির ১০ দফার পর ২৭ দফায় আবার প্রমাণ করল যে, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতা পুনর্দখলই তাদের মূল উদ্দেশ্য। বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা একটা স্টান্টবাজি। বিএনপি নেতাদের মুখে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা হাস্যকর। এই রাষ্ট্র মেরামত মানে হচ্ছে বিএনপি যেমন সংবিধান চায় এবং যেভাবে দেশ পরিচালনা করতে চায়, সেই লক্ষ্যগুলো কার্যকর করা। অতীতে জিয়াউর রহমান একইভাবে  রাষ্ট্র মেরামত করার নামে সংবিধান থেকে চার মুলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে উঠিয়ে দিয়েছিল। সংবিধানের ১২ বিধিকে বাদ দিয়ে দিয়েছিল। এবং ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে পুনর্প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এটা হলো তাদের অতীতের ইতিহাস। সুতরাং সেই ইতিহাস থেকেই বোঝা যায়, এই ধরনের মেরামতের অর্থ কী তারা বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িকতা এবং মূলভিত্তি থেকে সরিয়ে নিতে চায়। এর বাইরে সংবিধান সম্পর্কিত যে কথাগুলো বলেছে, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্যের বিধান এটা তো তাদের মুখের কথা। তারা বরঞ্চ খালেদা জিয়ার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য আরো শক্ত অবস্থান নিয়েছিল। ৭০ বিধির ব্যাপারেও একই কথা। তাদের এই মেরামতের প্রস্তাব মূলত বাংলাদেশের অর্জনগুলোকে, মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র। জামায়াতকেও তারা সঙ্গে নিয়েছে। সুতরাং এটা তো পুরনো ব্যাপার।  বিএনপি জামায়াত জোট এখন আলাদা আলাদভাবে একই কাজ করবে। তাদের দাবি হলো, এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এসব কথা বলার মানে হচ্ছে একটি অসাংবিধানিক পথের দিকে অগ্রসর হওয়া। এ অসাংবিধানিক পথে যাওয়ার উদ্যোগ যারা  গ্রহণ করে, তারা যতই ভালো কথা বলুক, সেটা কখনও ভালো হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। এসব পথ তাদের ছাড়তে হবে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশেনের অধীনে যথাসময়ে নির্বাচনে আসতে হবে। সুতরাং সেই জিনিসগুলো বিবেচনা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছি  তার প্রতি এটা একটা চপেটাঘাত। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারা তাদের আগের অবস্থাতেই আছে। এই যে রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে তাদের যে রাজনীতি ছিল-তার কিছুই তারা ছাড়েনি। এ গুলো যতক্ষণ তারা না ছাড়ছে,  যতই ভালো কথা বলুক সেসব ভালো বলে বিবেচিত হবে না। পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নষ্ট করার চক্রান্তকরছে। বিশ্বের বুকে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটা মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং ২০৪১ সালের উন্নত দেশে গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন, তখনি বিএনপি-জামায়াত আবারও ষড়যন্ত্র শুরু করছে। বিএনপির জন্মই বন্দুকের নলের সাহায্যে, একটি অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। তারা কিভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে?

২০০১ সাল থেকে ২০০৬ এই পাঁচ বছর বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের কথা মানুষ ভুলে যায় নাই। তারা আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীদেরকে হামলা-মামলা দিয়ে বাড়িঘর ছাড়া করেছিলো। জাতীয় নেতা শাহ এমএস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে নির্যাতন করে পঙ্গু করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্র যারা করে, তাদের জন্মই হয়েছিল ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। তারা সেই ষড়যন্ত্র থেকে দূরে আসতে পারেনি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে পূর্তির শুভক্ষপে স্বপোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে বাংলাদেশের। অজস্র বাধা অতিক্রম করে ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে চলছে লাল-সবুজের এই দেশ। বিশে^র মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি আজ স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। একটি যুদ্ধবিদ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সাহসী ও গতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহনের ফলে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। বাংলদেশের এ রূপান্তরের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ^ সভায় আপন মহিমায় স্থান করে নেওয়া একজন বিচক্ষন ও সফল রাষ্ট্র নায়ক।
আওয়ামী লীগ একটি গনতান্ত্রিক দল, এই দলের শিকড় অনেক গভীরে। একদিন সমাবেশ করেই এই দলকে নাড়ানো সম্ভব না। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্ম নেওয়া দলটির হাত ধরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ সময় কেটেছে লড়াই-সংগ্রামে। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র-সবই দেখেছে দলটি। সবকিছু মোকাবিলা করে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটি টানা এক যুগ ক্ষমতায় রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগের টানা এক যুগের শাসনামলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন দেশ-বিদেশে আলোচিত হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে সাফল্য এসেছে। জঙ্গি দমনে সাফল্য সারাবিশ্বে আলোচিত। করোনাকালে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে। দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন, তরুণ ও মেধাবীদের সুপথের রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, জঙ্গি নির্মূল, স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য মর্যাদা, দেশ ও জনগণের ভাগ্যের আমল পরিবর্তন এবং বিশ্বদরবারে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগ।
বর্তমানে শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে, ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপির নিরিখে বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুরের মতো দেশ যেখানে বাংলাদেশের পেছনে থাকবে। উন্নয়নের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ২০৫০ সালে ১২তম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বাংলাদেশও শেখ হাসিনার গত এক যুগের শাসনামলে এগিয়ে গেছে দুর্বার গতিতে। বেশকিছু সামাজিক সূচকের পাশাপাশি অর্থনীতির সূচকেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। এমডিজি সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে, এসডিজি বাস্তবায়নের পথে। মাত্র এক যুগ আগেও যে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি প্রায় দ্বিগুণ ছিল, তারাও পেছনে পড়ে যাচ্ছে। একসময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আজ বিশ্ব দরবারে উদীয়মান অর্থনীতির রোল মডেল যার নেতৃত্বে, কৃতিত্ব তো সেই ‘ক্যারিশমাটিক’ নেত্রী শেখ হাসিনাকে দিতে হবেই।

বাংলাদেশ আজ দু’ভাগে বিভক্ত, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষশক্তি। বহু রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন মানচিত্র পেয়েছি। বিপক্ষশক্তি আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, এদেরকে প্রতিহত করতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ অনুসরণ করে তাহলেই ৩০ লক্ষ শহীদ এবং ৪ লক্ষ মা-বোনের আত্মা শান্তি পাবে। বিজয়ের মাসে যুদ্ধ অপরাধীদের সঙ্গে সুযোগ্য আন্দোলনের ঘোষনা মূলত: জাতির সাথে তামাশার নামান্তর। এদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। দেশের সকল শ্রেণীর মানুষ এদের প্রতিহত করবে এটা দৃয়ভাবে বিশ^াস করি।  


আরও পড়ুন