মায়ের কোলে উঠে ভর্তি পরীক্ষায় স্বর্ণা,স্বপ্ন পাবলিকে পড়ার

news paper

জাকির হোসেন, ববি

প্রকাশিত: ২৭-৫-২০২৩ রাত ৯:৩৪

12Views

জন্ম থেকেই শরীরের নিচের অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত নাজমুন্নাহার স্বর্ণার। ছোটথেকেই মায়ের কোলে চড়ে সব কাজ। পেরিয়েছেন স্কুল-কলেজের গণ্ডি। মায়ের কোলে চড়েই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছিলেন শনিবার।শনিবার ২০২২-২৩ সেশনের গুচ্ছের ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে অংশ নেন জেলার স্বরূপকাঠিতে বেড়ে ওঠা স্বর্ণা। পরে মায়ের কোল থেকে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি সদস্যদের সহায়তায় হুইলচেয়ারে চেয়ারে করে স্বর্ণা যান পরীক্ষা কেন্দ্রে।
 
মা মনিজা বেগম বলেন, ‘মেয়ে এমন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ তার। ওর স্বপ্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবে।’কথা হয় স্বর্ণার সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহের কথা। আমার বন্ধুরা অনেকে প্রথম প্রথম ভিন্নভাবে নিলেও আস্তে আস্তে তারা আমাকে সাহায্য করা শুরু করে। আমার সংগ্রামের সারথি আমার মা। মায়ের কোলে উঠেই আজকে আমার এই পর্যন্ত আসা।’
 
তিন বোনের মধ্যে স্বর্ণা সবার ছোট। পিতা বৃদ্ধ শাহাদাৎ হোসেন হাওলাদার একজন দিনমজুর। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ, মা বৃদ্ধা মনিজা বেগম গৃহিণী। স্বর্ণা উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেছেন করেছেন স্বরূপকাঠি সরকারি কলেজ থেকে। এসএসসিতে তার জিপিএ ৪.৭৫ এবং এইএসসিতে ৪.৫৯।মা মনিজা বেগম বলেন, ‘জন্ম থেকেই স্বর্ণার শরীরের নিচের অংশ অচল। ছোটবেলা থেকে আমি কোলে করে স্কুল-কলেজে নিয়ে যেতাম। আজও আমি কোলে করে তাকে নিয়ে এসেছি ভর্তি পরীক্ষা দেয়ানোর জন্য। স্কুল কলেজ সবজায়গায় পরীক্ষায় সে ভালো ফলাফল করত। ছোটকাল থেকেই ও পড়াশোনায় মনোযোগী। ওর বাপের বয়স হয়েছে তিনি অসুস্থ, আমারও বয়স হয়েছে আগের মত আর শক্তি নেই। সবমিলিয়ে চলছে কষ্টের উপরে। আল্লাহ যদি মেয়েটার স্বপ্ন পূরণ করে এতেই আমাদের শান্তি।’
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন ও সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কমিটির মিটিং এ নির্দেশনা ছিল প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা৷ তারই ধারাবাহিকতায় আজ একজন ভর্তি পরীক্ষার্থী তার মায়ের কোলে উঠে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের  বিএনসিসির সদস্যদের সহায়তায় তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেই এবং ওই কক্ষের শিক্ষকেরা পরীক্ষা দেয়ার জন্য সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন। আশা করি, এই শিক্ষার্থীর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন যেন পূরণ হয়৷

আরও পড়ুন