চাকরি ছেড়ে ব্যবসা
উদ্যোগে আত্মবিশ্বাসই মূল’
প্রকাশিত: ২০-৫-২০২৩ রাত ৯:৩৩
খালেদুর রহমান জুয়েল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এক্টিভিস্ট কমিউনিকেশন লি.
শিশুসাহিত্যিক খালেদুর রহমান জুয়েল। ছড়া লেখেন। গল্প লেখেন। তাঁর লেখা ছড়ার বই- ‘একটি ছড়া ভূতের জন্য অন্যগুলো তোমার’ গল্পের বই ‘চারটি বিড়াল ডার্টি বিড়াল’ কিশোর উপন্যাস ‘ফার্স্টবয়দের বন্ধু হয় না’ পাঠকের কাছে খুব গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সাংবাদিকতার মাধ্যমে পেশাজীবন শুরু হয়েছিল এ শিশুসাহিত্যিকের। এক সময় ছোটদের কাগজ ও প্রিয়জন এর সহকারী সম্পাদক ছিলেন। একুশে টেলিভিশন এর প্রতিষ্ঠাকালীন তিনি ছিলেন গবেষক ও সহকারী প্রযোজক। এরপর পেশাজীবনের ঢেউ খেলায় তিনি যুক্ত হলেন বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। দেশের প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপীতে কপি রাইটার হিসেবে নতুন কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে ক্যারিয়ারের চুড়ায় উঠে চাকরি জীবনের ইতি টানেন তিনি। এরপর নিজেই শুরু করেন ব্যবসা। খালেদুর রহমান জুয়েল তাঁর চাকরি জীবন ও উদ্যোক্তা জীবনের গল্প বলেছেন সকালের সময় এর কাছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- ফয়েজ রেজা।
সকালের সময়: সাংবাদিকতা পেশায় আপনার পেশাজীবন শুরু হয়েছিল। বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কিভাবে এসেছিলেন?
খালেদুর রহমান জুয়েল: বিপদে পড়ে। বিজ্ঞাপনি সংস্থায় এসেছিলাম, প্ল্যান করে নয়। ২০০১ সালে তৎকালীন টেরিস্টেরিয়াল টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশন সরকার পরিবর্তনের পর বন্ধ হয়ে গেলে বিপদে পড়ি। ম্যানেজমেন্টের ধারণা ছিল, খুব দ্রুত সময়ে হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই তখনও আমাদের চাকরি বহাল ছিল। অফিসে যাই। বেতনও পাই মাস শেষে। একটি বন্ধ টেলিভিশনে প্রতিদিন হতাশাব্যঞ্জক আলোচনা ছাড়া আর কীইবা চলতে পারে! ভালো লাগত না। সহকর্মী নবনীতা চৌধুরী এই অবসরে বিটপী অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেডে একটি বিজ্ঞাপনী কোর্সে অংশ নেয়। কোর্স শেষে তাকে অফার করলে একুশে টেলিভিশন ছেড়ে বিটপীতে যুক্ত হন। কয়েক মাস পর বিটপীতে ঠিক আমার যোগ্যতার একজন কপিরাইটারের দরকার পড়ে। ইন্টারভিউ দিয়ে বিটপীতে জয়েন করি। শুরু হয় আমার বিজ্ঞাপনী তরঙ্গের নতুন জীবন।
সকালের সময়: বিজ্ঞাপনী সংস্থায় ক্যারিয়ারের চুড়ায় উঠার পর কেন মনে হলো চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করা দরকার?
খালেদুর রহমান জুয়েল: ২০১৫ সালে আমি যখন চাকরি ছাড়ি, তখন আমি একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর। প্রতি মাসে বেতন প্রায় তিন লাখ টাকা। অফিসিয়াল পলিট্রিক্স আর কাজের অমানবিক চাপে ভালোই কাটছিল জীবন। হঠাৎ সিদ্ধান্তে চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় আসি। সাধে চাকরি ছাড়িনি। পারফরমেন্স অনুযায়ী প্রতিবছর ২০ থেকে ৫০ শতাংশ হারে আমার বেতন বাড়ছিল। চাকরি ছাড়ার বড় কারণ ছিল অফিসের পলিট্রিক্স। পলিটিক্সের চাপ নিতে পারছিলাম না আর। তাই হুট করেই চাকরি ছাড়ার প্ল্যান। চাকরি ছেড়ে আবার চাকরিতে না গিয়ে ব্যবসা শুরু করি, যা এতদিন করেছি বা শিখেছি সেই ব্যবসা।
সকালের সময়: ব্যবসা শুরু করার পর কোন ধরণের চ্যালেঞ্জ আপনার সামনে এলো?
খালেদুর রহমান জুয়েল: ব্যবসা শুরুর পর প্রথম চ্যালেঞ্জ এল আমি আসলে ক্রিয়েটিভ, ব্যবসায়ী না। এটি এখনও ঠিক করতে পেরেছি কিনা জানি না। এ ছাড়া তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। কাজ পেতে সমস্যা হয়নি। ছোট টিম নিয়ে অনেক বড় বড় ইভেন্ট নামিয়েছি একই দিনে একাধিক। ক্যাশ-ক্যাপিট্যাল নিয়েও সমস্যা হয়নি। ভেন্ডররা ক্রেডিট সাপোর্ট দিয়েছে, ক্লায়েন্ট অ্যাডভান্স দিয়েছে।
সকালের সময়: দেড়িতে উদ্যোগ শুরু করার সুবিধা-অসুবিধা কি?
খালেদুর রহমান জুয়েল: উদ্যোগ শুরু করার কোনো সময় নেই। সেলফ কনফিডেন্সটাই আসল, সেটি দেরিতে হোক বা প্রপার টাইমে।
সকালের সময়: বিজ্ঞাপনী সংস্থায় যারা নতুন উদ্যোক্তা হতে চায়, তাদের বিষয়ে আপনার পরামর্শ।
খালেদুর রহমান জুয়েল: নতুন উদ্যোক্তা হওয়া বিষয়ে আমি এখন যা বলব, কোভিডের আগে হলে হয়ত অন্য অনেক সুন্দর পজেটিভ কথা বলতাম। এখন বলব ‘ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম’ এর মতো করে ‘ব্যবসার চেয়ে চাকরি উত্তম’। ব্যাঙের ছাতার মতো এজেন্সি গজিয়েছে। প্রতিদিন ২টি এজেন্সীর জন্ম হয় তো ৪ টি বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ে উদ্যোক্তা হতে হলে কনফার্ম ৫ টি ক্লায়েন্ট হাতে থাকলে তবেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখা উচিত। অন্যথায় নয়।