ভারতে সিসিএনের প্রতিনিধি দলে কুবি অধ্যাপক; ছুটি নিয়েছিলেন স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলে

news paper

ইকবাল হাসান, কুবি

প্রকাশিত: ১৭-৫-২০২৩ দুপুর ৩:২৩

23Views

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেবের ‘স্ত্রী অসুস্থ’ তাই তিনি ছুটি নিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। উদ্দেশ্য, ভারতে করাবেন স্ত্রীর উন্নত চিকিৎসা। কিন্তু এই ছুটি চলাকালীন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে অধ্যাপকের ছবি পাওয়া গেল আগরতলায় ভ্রমণরত কুমিল্লার সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দলের সাথে। 
 
ঘটনাটি বুঝতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরে খোঁজ নিলে জানা যায়, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব গত ১৯ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি চেয়েছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাতদিনের ছুটি মঞ্জুর করলে তিনি ২৬ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত ছুটি কাটয়েছেন স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলে।
 
তবে স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলে ভারত ভ্রমণের ছুটি নিয়ে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সিসিএনের প্রতিনিধি দলের সাথে ছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। 
 
সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের  বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মেম্বার ইফতেখারুল ইসলাম চৌধুরী সিয়ামের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টে দেখা যায়, গত ৩০ এপ্রিল থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দলের সাথে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ভারতের আগরতলায় ছিলেন। এ সময় তিনি ওই প্রতিনিধি দলের হয়ে  ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি পলিটেকটিক  কলেজ দলের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। 
 
এ বিষয়ে সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মেম্বার ইফতেখারুল ইসলাম চৌধুরী সিয়ামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ স্যারকে ফেসবুকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে উল্লেখ করলেও তিনি আমাদের অফিসিয়াল প্রতিনিধিদের কেউ না। 
 
তাহলে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ সেখানে কী করছিলেন? জানতে চাইলে সিয়াম বলেন, 'ওনার সাথে আমরা পূর্ব পরিচিত। ফলে যখন জানতে পারি তিনি আগারতলায় আছেন তখন আমরা যোগাযোগ করি ওনার সাথে। এর বাইরে কিছু না।'
 
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরী বলেন,  'উনি ছুটি নিয়েছে স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলে। এর মধ্যে তিনি  অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করেছেন এটা আমার জানা ছিল না।'
 
অধ্যাপক বিশ্বজিৎ বলছেন, তিনি ভারতে স্ত্রীকে নিয়ে গেছেন এবং চিকিৎসা করিয়েছেন। তাহলে সিসিএনের দলের সাথে কী করছিলেন জানতে চাইলে বলেন, 'আমি আমার স্ত্রীর চিকিৎসা শেষে ভারতের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সাক্ষাৎ করেছি। এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির (সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) কেউ যদি আমাকে প্রতিনিধি হিসেবে লিখে সেটা তাদের ভুল। চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর জমা দিয়েছি।'
 
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বেশ কিছু সূত্র বলছে, এসব ভ্রমণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির তরফ থেকে ভাতা মেলে, বিশ্বজিৎ সেটি পেয়ে থাকবেন। আবার সামনে এসেছে পুরনো কথাও। এর আগে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ সিসিএন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার জন্য কুবি প্রশাসনের নিকট আবেদন করেছিলেন, তবে প্রশাসন তা অনুমোদন করেনি।  
 
এ বিষয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান বলেন, 'যে শিক্ষক এমনটি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তিনি মূলত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ভুল তথ্য দিয়ে ছুটি নিয়েছেন। যা সমর্থনযোগ্য নয়।'
 
এই বিষয়ে  উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, 'তিনি স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়েছেন। এ সময় যদি তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে না জানিয়ে অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কাজ করে থাকেন তাহলে সে বিষয়ে আমি অবগত না। তার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে কাজ করার জন্য কাজ করার কোনো অনুমতি নেই।'
 
সিসিএনের ট্রাস্ট্রির সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা ছবিগুলোর ব্যাপারে তিনি বলেন, 'একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ না হলে তো তিনি এভাবে সংবর্ধনা গ্রহণ করতে পারেন না। তবে তিনি ওই অনুষ্ঠানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেননি।’

আরও পড়ুন