ড.ইউনুসের কর ফাঁকি ও শ্রম আইন লঙ্ঘন রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাকর

news paper

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ১৬-৫-২০২৩ রাত ১০:২০

25Views

রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা থেকে শুরু করে সকল চাহিদা পূরনের জন্য বদ্ধপরিকর। আর এসকল চাহিদা পূরণের জন্য জনগণকেই অংশগ্রহণ করতে হবে। কেননা রাষ্ট্রের অন্যতম আয়ের উৎস হলো জনগণের দেওয়া কর। রাষ্ট্রের অন্যতম আয়ের উৎস হলো কর। আর এই কর প্রদান করা রাষ্ট্রের ধনী ও দরিদ্র সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সম্প্রতি দেখা যায় ড. ইউনূস বিশাল অংকের টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে  হাইকোর্টকে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড( এনবিআর)। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১শ’ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন। গত রোববার (৭ মে) হাইকোর্টকে এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয় ২০১২-১৭ এ পাঁচ বছরে ১১শ’ কোটি টাকা কর ফাঁকি দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে-সরকারের পাওনা অর্থগুলোর মধ্যে একটি হলো গ্রামীণ কল্যাণ ৫৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। গ্রামীণ কল্যাণের আরেকটিতে ৩৫৪ কোটি ৭৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫৪৭ টাকা এবং গ্রামীণ টেলিকমের একটিতে সরকারের পাওনা ২১৫ কোটি টাকা।
 
এরআগে, ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ১১শ’ কোটি টাকার আয়কর রিটার্নের মামলা চালুর জন্য হাইকোর্টে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। নোবেল বিজয়ী এ অর্থনীতিবিদের ব্যক্তিগত এবং তার প্রতিষ্ঠিত ৯টি প্রতিষ্ঠানের কর সংক্রান্ত  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এনবিআরের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়। কিন্তু বারবার বলার পরও তেমন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।অপর এক  মামলায় ইউনূস সহ এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে মামলায় বিবাদী করা হয়। এতে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা ও গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এই মামলাটি হাইকোর্ট বিভাগ বিচারাধীন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ড. মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশ একমাত্র নোবেল বিজয়ী। আর এই নোবেল বিজয়ী এটাকে পুজি করে রাষ্ট্রের আইন অমান্য করা ও কর ফাঁকি দেওয়া বাংলাদেশে প্রচলিত কোন আইন সমর্থন করে না। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। এতেই প্রতিয়মান হয় যে, নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস কর ফাঁকি ও শ্রম আইন লঙ্ঘন স্পষ্টত বাংলাদেশের সংবিধান অমান্য করার শামিল। এছাড়াও ড. ইউনুস বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ ও তার অগ্রযাত্রায় মিথ্যাচার করে যাচ্ছে যেটা দেশ ও জাতির জন্য লজ্জার। যখন বাংলাদেশ নিয়ে উন্নত বিশ্ব ও বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা প্রশংসা করে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকে রোল মডেল অনুসরণ করে যাচ্ছে। যেখানে দারিদ্রের হার কমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের দারিদ্রের হার  দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশ আর চরম দারিদ্র্যের হার ১০.৫ যা ক্রমেই হ্রাসমান। বিগত কয়েক বছরে জনগণের গড় আয়ু ক্রমেই বেড়ে চলছে যা ২০২২ সালে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭২.৮ বছর। দেশের  শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭ বছর বা তদূর্ধ্ব ৭৪.৬৬ শতাংশ। 

বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের সাফল্য বিস্ময়কর। শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ আর বাস্তবে রূপ নেয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২১ মার্চ ২০২২ এ শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আসার ঘোষণার মাধ্যমে। বর্তমানে দেশের শতভাগ মানুষ নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সেবা পেয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আল্ট্রা - সুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে  বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বের ১৩তম দেশ যেখানে অনেক উন্নত দেশ এখনো এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা স্বপ্নে বিভোর। 
অসম্ভব মনে হলেও সত্য, বাংলাদেশ আইসিটি খাতে রফতানি শুরু করে। ২০২২ সালে আইসিটি খাতে রফতানি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ উপগ্রহ যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ। এটি ২০১৮ সালের ১২ মে উৎক্ষেপণ করা হয়। আর  এর মধ্য দিয়ে ৫৭ তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যোগ হয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ভূস্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ যা উৎক্ষেপণের অপেক্ষায়। বাংলাদেশ বর্তামানে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে।ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ৪র্থ।মাছে ভাতে বাঙালি সবসময়ই মৎস্য শিল্পে সমৃদ্ধ। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ৩য়। ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ।
বিগত কয়েক বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার অবিশ্বাস্য। ২০২২-২৩ সালে এসে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৮২০ মার্কিন ডলার ও মাথাপিছু জিডিপি ২৭২৩ মার্কিন ডলার এবং জিডিপির প্রবৃ্দ্িধর হার ৭.২৫ যা অকল্পনীয় হলেও বাস্তব। জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ফলে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ পরিণত হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ সুখী দেশ। বাংলাদেশ ৩২তম নিউক্লিয়ার পাওয়ার  নেশন হিসেবে বিশ্ব পরমাণু ক্লাবে যুক্ত হয়েছে।বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের মতো এগিয়ে নিতে নেয়া হয়েছে ১০০ বছরের “ডেলটা প্ল্যান"।

সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করা হচ্ছে যেখানে কর্মসংস্থান হবে ১ কোটি মানুষের শেখ হাসিনার হাতে নেয় অসংখ্য মেঘা প্রকল্প ।যেমম  নিজেদের  অর্থায়নে দেশের সর্ববহৎ পদ্মাসেতু নির্মাণ যা দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করে দিয়েছে,বাংলাদেশের প্রথম  মেট্রোরেল নির্মাণ যা ঢাকা শহরের ২ কোটি মানুষ যানযটের শহর  থেকে জাদুর শহরে রূপান্তর করেছে। চট্রগ্রামে কর্ণফুলি নদীতে নির্মাণ করা হয়েছে ৪.৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল বা বঙ্গবন্ধু সুড়ঙ্গ বা কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ হল কর্ণফুলী নদীর নিচে অবস্থিত নির্মাণাধীন সড়ক সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গটি কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। এই সুড়ঙ্গেন মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে।এই সুড়ঙ্গটি নির্মিত হলে এটিই হবে বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ।এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হাইওয়ে নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, পায়রা সমুদ্র বন্দর, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ অসংখ্য ছোট বড় অবকাঠামোগত উন্নয়ন দৃশ্যমান। তখন ড. ইউনুসের মতো একজন সম্মানিত ব্যাক্তির মিথ্যাচার ও আইন লঙ্ঘন সাধারণ মানুষেদের কাছে কি ভার্তা দেয়? শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার যখন গণতন্ত্র ও মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় বীরদর্পে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের এই হঠকারিতা ও হীনস্বার্থ হাশিল করা কার স্বার্থে? এতেই প্রতীয়মান হয় ড. ইউনুস ও তার সহযোগী দোসররা রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত। দেশপ্রেম থাকলেই সুনাগরিক হয়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে অবদান রাখা যাবে। বিশ্বের বুকে আমাদের লাল-সবুজের পতাকা সম্মানের সঙ্গে তুলে ধরাও সম্ভব হবে।তাই রাষ্ট্রের অবিলম্বে ড. ইউনুস সহ কায়েমী স্বার্থ হাসিলকারীদের লাগাম টেনে ধরা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা।


আরও পড়ুন