ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় নারীর প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা

news paper

গবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫-৫-২০২৩ দুপুর ৩:৯

95Views

সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা বহুদূর এগিয়েছে। তবে, তার জন্য ভাঙতে হয়েছে বড় বড় পাথরের দেয়াল। তবুও, সরেনি বাঁধা। এখনো নারীদের পড়তে হয় সমাজের চক্ষুশূলে। মূলত, নারীর প্রতি অবমূল্যায়ন, অবদমন কিংবা কুসংস্কার, একপেশে পৈশাচিকতা, ধর্মীয় অবজ্ঞা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়াদি তাদের পথ রুদ্ধ করে দাঁড়ায়। প্রবল ইচ্ছেশক্তি আর দুর্দান্ত মানসিকতার কারণে সকল  প্রতিবন্ধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পেরেছেন বহু নারী। ফলাফলে দেখা যায় আজকের বিশ্বে নারীদের জয়যাত্রা কতখানি। কিন্তু, নারীদের অগ্রযাত্রা বেশিরভাগ সেক্টরে অনেকটা পরিলক্ষিত হলেও সাংবাদিকতা তন্মাধ্যে ক্যাম্পাস সাংবদিকতায় খুব একটা চোখে পড়ে না। 
 
সাংবাদ হলো সমাজের দর্পন আর সাংবাদিক সেই দর্পনের নির্মাতা। এই দর্পন যেমন সমাজের চিত্র তুলে ধরতে পারে তেমনি দূর করতে পারে সকল অন্ধকার। ননাবিধ প্রেক্ষাপট, অবস্থার পক্ষে-বিপক্ষে শোরগোল তৈরী করে বাঁধিয়ে দিতে পারেন মহাযুদ্ধও। সে হিসেবে সমাজে নারীর অবস্থান তৈরীতে সাংবাদিকতা একটি বড় মাধ্যমও হতে পারে। একই সাথে এটা হতে পারে তাদের মুখপাত্র। নিজেদের জায়গা পরিষ্কারের একটা বড় সুযোগও বটে। কিন্তু, এই বড় প্ল্যাটফর্মে নারীরা যেন নিষ্প্রাণ। ঝরে যাওয়া ফুলের মতো নিষ্প্রভ, মলিন তাদের অবস্থান। 
 
সমাজে পরিচিত পেশা গুলোর মধ্যে অন্যতম চ্যালেঞ্জিং একটি পেশা সাংবাদিকতা। এ পেশায় যুক্ত ব্যক্তিরাও সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে বহুল পরিচিত। প্রশ্ন হচ্ছে, সকল চ্যালেঞ্জকে হার মানানো নারীরা কেন একটা চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিজদের নিযুক্ত করতে পারছেন না।
উত্তরে স্পষ্ট দেখা মেলা নারীর নিরাপত্তা। তাঁরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। হুমকি, মামলা ও সাইবার বুলিংয়ের পাশাপাশি নারী সাংবাদিকদের নানাভাবে চরিত্র হননের চেষ্টা চলে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই। এছাড়াও, পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে অনেকাংশেই। প্রতিনিয়ত সংবাদের পিছনে ছুটে চলা, নিজেকে সবার মাঝে আবিষ্কার করার মতো পরিস্থিতি পছন্দ করে না অনেক পরিবার। এতে করে দেখা দেয় পারিবারিক বাঁধা, এত চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করলেও সেভাবে কাজের মূল্যায়ন না হওয়া, পদোন্নতি না ঘটা কিংবা সংবাদ মাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন সংকোচে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা, একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন না হওয়া, ত্যাগ স্বীকার করা, নিজেকে ও পরিবারকে সময় দিতে না পারা নানাবিধ কারণেই একটি বড় সম্ভাবনায় হাতছানি দিতে পারেন না তারা। বড় স্বপ্ন নিয়ে অনেক নারী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করলেও পেশা হিসেবে সেটা আর গ্রহণ করতে পারেন না।
 
 
অন্যদিকে দেখা যায়, বাংলাদেশের সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় নিযুক্ত রয়েছেন। একজন শিক্ষার্থী অনেক বড় স্বপ্ন নিয়েই নিজেকে সাংবাদিকতায় নিযুক্ত করেন। একটা সময় এই কাজটাকে ভালোবেসে কাঁধে তুলে নেন অনেক বড় দায়িত্ব। কিন্তু, দিনশেষে তাদেরও মুখোমুখি হতে হয় বাস্তবতার। পেশাগত কাজ না হওয়াতে শিক্ষার্থী হিসেবে তার প্রতিকূলতা আরো বেশি।
রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধবাদী আচরণ, গ্রুপিংয়ের উত্তাপ, রোষানল, পক্ষ-বিপক্ষ, ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রভাব, প্রশাসনের জবাবদিহিতা, সংবাদ প্রকাশের জেরে শত্রুতা নানাবিধ কঠিন পরিস্থিতি তাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। 
 
নারীদের সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় অন্ধকার দিক বললে সেটা সম্ভবত এই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতাকেই বুঝায়। কেননা, অনান্য প্রতিষ্ঠানের কথা বাদই দিলাম দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও দেখা যায় নারীদের অংশগ্রহণ কতটা সীমিত। বর্তমানে বাংলাদেশে যতগুলো সাংবাদিক সংগঠন আছে হিসাব করলে তার সমপরিমাণ নারী সাংবাদিক হয়তো খুঁজে মেলা দুষ্কর। সাংবাদিক সংগঠন গুলোর যে কমিটি ঘোষণা করতে দেখা যায় সেখানে নারীদের নাম চোখেই পড়ে না। আশ্চর্যের বিষয়, স্বনামধন্য, দেশসেরা প্রতিষ্ঠানে নারীরা প্রথম স্থান অর্জন করে যেখানে ভর্তি হচ্ছেন যেখানে কৃত্তি নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি সেখানের সাংবাদিক সংগঠনে নেই কোন নারীর অংশগ্রহণ। আর, সেখানে নারীর নেতৃত্ব তো ঢের বাকি। আশার বিষয় হলো হাতে গোনা কিছু নারী যারা এসেছেন তারা তাদের নামের পাশে ঠিকই সুনাম, সম্মান ও অবস্থানের তারকা বসাতে পরেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সাবাদিক সমিতি সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সংগঠনটি এক্ষেত্রে অন্যতম বলা যায়। কেননা, বেসরকারি পর্যায়ে এখান থেকেই বেরিয়ে এসেছে মুন্নি আক্তার নামে প্রথম নারী সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া, গোপালগঞ্জের ভিসি হটানো সেই জিনিয়ার কথা বলতে পারি। যার নেতৃত্বে পরবর্তীতে চলেছিল বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি। 
 
আশার আলো শুধু এখানেই নয়, বাংলাদেশে সাংবাদিক জগতে বড় বড় নারীর নাম হার-হামেশা দেখা মিলছে। টকশো উপস্থাপক, সংবাদ উপস্থানা, ক্রাইম রিপোর্টার, এডিটর থেকে শুরু করে সম্পাদক সব ক্ষেত্রেই তারা সরব। অতীত ইতিহাসে তাকালেও দেখা যায় সাংবাদিক সেলিনা হোসেন, বেগম পত্রিকার সম্পাদক অনেককেই। 
আদতে, সকল বাঁধার বাঁধ ভেঙে নারী এগিয়ে যেতে পারেন। তবু, নানাবিধ কঠিন পরিস্থিতি, প্রতিবন্ধকতা দূর করতে না পারলে সম্ভাবনার ক্ষেত্র খুব একটা তৈরী হয়না। নারীর জন্যও উম্মুক্ত হওয়া চ্যালেঞ্জ নেওয়ার পরিস্থিতি। এক্ষেত্রে তারা বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে অসমর্থ হয়ে পড়েন। তাই, প্রথমত সবার প্রয়োজন মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, দ্বিতীয়ত তাদের উপযুক্ত কাজের পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং সর্বশেষ সাংবাদিকতাকে কেবল  একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা নয় নিশ্চিত ভবিষ্যৎ হিসেবে গড়ে দিতে হবে। তবেই, নারী সাংবাদিকদেরা তাঁদের প্রতিভা আর সম্ভাবনাকে দেশের তরে, নিজদের তরে বিলিয়ে দিতে পারবেন অকাতরভাবে।
 
লেখকঃ ইভা আক্তার 
শিক্ষার্থী ফার্মেসি বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন