চাকরি ছেড়ে উদ্যোগ

জীবনের কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শাবাব লেদার এর -মাকসুদা খাতুন

news paper

তানভীর সানি

প্রকাশিত: ১৩-৫-২০২৩ দুপুর ৩:৩১

46Views

 
 
শাবাব লেদার। অনলাইনে পণ্য যারা কেনেন, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই চেনেন প্রতিষ্ঠানটিকে। অনেকে হয়তো ব্যবহার করেছেন শাবাব লেদার এর পণ্য। অল্প সময়ে ক্রেতাদের মন জয় করা শাবাব লেদার এর প্রতিষ্ঠা ও সফলতার পেছনের গল্প তুলে ধরছেন- তানভীর সানি 

বাবা-মায়ের বড় মেয়ে মাকসুদা খাতুন। হিসাববিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্সসহ ফাইন্যান্সে এমবিএ করেছেন। শিক্ষাজীবন থেকেই তার ছিলো স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছে। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষকতার মাধ্যমে। একটি ম্যাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন প্রায় ৪ বছর। এরপর চাকরি ছেড়ে যোগ দেন বায়িং হাউজে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন, অন্যের অধীনে চাকরি করা কতটা প্রতিবন্ধকতা। 

এরপরও নিজের মতো মানিয়ে গুছিয়ে ভালোই চলছিলো জীবন। হঠাৎ মাকসুদার স্বামীর ব্যবসায় বড় ধরনের লোকসান হয়। লোকসানের ধাক্কা সামলাতে নিজেদের কেনা প্লট বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু তাতেও দেনা শোধ হয়নি। তত দিনে মাকসুদা বুঝে গেছেন, চাকরির বেতনে সেই ঋণ শোধ করা যাবে না। অন্যদিকে তার স্বামী  মানুষিক ও শারিরীক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেন। কোনভাবেই কোন পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না মাকসুদা দম্পতি । এক সময় মনস্থির করেন যেকোন মূল্যে ঘুরে দাড়াতেই হবে। শুরু হলো নতুন পথচলা। নতুন এক যুদ্ধ। নিজের সবটুকু সঞ্চয় আর অলংকার বিক্রি করার পর প্রাথমিক বিনিয়োগ হলো মাত্র ১৫ লক্ষ টাকা। ২০১৬ সালে ৫ জন কর্মী নিয়ে হাজারীবাগে শাবাব লেদারের পথচলা শুরু।

আর এখন কর্মী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ জনে। পরিস্থিতি এমন ছিল যে ঘুরে ঘুরে বিপণি বিতানে পণ্য দেখিয়ে, স্যাম্পল ডিসপ্লে করে নিজের পণ্য বিক্রির করতেন। এভাবেই আজ এই মার্কেট কাল ওই মার্কেট করে দিন কাটতো । মার্কেটে নিজের পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করারই ছিলো তার একমাত্র লক্ষ্য। প্রতিদিন ইমেইল, ম্যাসেজিং, ডোর টু ডোর মার্কেটিং এমন কোন পথ ছিলোনা যা সে প্রয়োগ করেনি। প্রতিদিন ১৮-২০ ঘন্টা তারা কাজ করে গেছে এরপরও  ’প্রথম বছর পুরোটাই কেটেছে বিরাট লসের মধ্যে দিয়ে।  তাই সবসময় তার দো’টানায় কাটতো। পারবে নাকি পারবে না। নাকি নতুন করে আরও একটি হার যোগ হবে জীবনের ঝুড়িতে । মাকসুদা খাতুন আরও বলেন, ‘শুরুতে আমার পরিচিত কিছু বায়িং হাউসের ক্রেতাদের কাছে কাজের নমুনা ও ছবি ই-মেইলে পাঠাতাম। পরে তারা ওয়েবসাইট তৈরির পরামর্শ দেন। একটা সময় পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই থেকেই পথ চলতে চলতে নানান চড়াই উতড়াই পেড়িয়ে আজ শাবাব লেদার একটি ব্রান্ড হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হয়েছে। কাজ করে জেনুইন চামড়াজাত পণ্য নিয়ে। ছোট  প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কর্মীর হাতের ছোয়ার তৈরী হয় প্রতিটি পণ্য।

জুতা, স্যান্ডেল, জেন্টস ব্যাগ, লেডিস ব্যাগ, বিভিন্ন ধরনের ওয়ালেট, পাসপোর্ট কভার,এক্সেকিউটিভ ফাইলসহ করপোরেট গিফট আইটেম। এসব প্রডাক্ট এখন দেশের সিমানা ছাড়িয়ে স্থান করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। 

এরই মাঝে ২০২০ সাল ঝুড়িতে নতুন অভিজ্ঞতা জমা হয়। খুবই কঠিন অভিজ্ঞতা শুরু হলো জীবনের নতুন মোড়। মেরুদন্ডে নতুন আঘাত,  মহামারি করোনা আবার পিছিয়ে দিলো কয়েকটি বছর । অর্ধেক পথেই বন্ধ হয়ে রইলো জুতার সেটাপ। এ্যাডভান্স দিতে পারলেন না কয়েকটি শোরুম। এলসি ক্যান্সেল, অর্ডার বাতিলসহ মার্কেটে অনেক টাকা বাকি পরে গেলো। হয়ে রইলো অনেক প্রডাক্ট স্টক। পুরোপুরি দুই মাস বন্ধ রাখতে হলো ফ্যাক্টরি এরপর ব্যাংক থেকে প্রনোদন লোন নিয়ে আবারও ঘুছিয়ে উঠে শাবাব লেদার। এখন প্রতিনিয়ত আরও নতুন ভাবে নতুন নতুন পণ্য নিয়ে মার্কেটে তাদের পরিধি বাড়িয়ে চলছে। সেই সাথে বুঝতে শিখেছি নিজের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিজেকে আরও পরিপূর্ণভাবে সাজিয়ে তুলতে হবে। এই পথ চলায় লোন দিয়ে পাশে ছিলেন প্রাইম ব্যাংক, ইউনাইটেড ফাইনান্স ও বিডি ফাইনান্স। প্রতিনিয়ত মেলা ও বিভিন্ন ট্রেনিং এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি পেয়েছে ।


আর বর্তমানে শাবাব লেদার একটা ব্র্যান্ড হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। মানিব্যাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, পাসপোর্টের কাভার, জ্যাকেট,সু, স্যান্ডেল কী নেই সেখানে। সবই চামড়ার তৈরি। রপ্তানি, হোলসেল এর পাশাপাশি বিভিন্ন ই-কমাস সাইডের মাধ্যমে অনলাইনে দেশের বাজারে পণ্য বিক্রি করছে শাবাব লেদার । আর তার প্রডাক্ট এর চাহিদা বাড়ানো ও মার্কেট আরোও শক্তিশালী জায়গা দখল নেয়ার জন্য কোয়ালিটির ও ডিজাইন এর উপর কাজ করছেন। এখন ধীরে ধীরে ব্যবসা আরও বড় করার স্বপ্ন দেখেন মাকসুদা খাতুন । তার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন একটা কমপ্লাইন্স ফ্যাক্টরি করা। আর সরকারের কাছে প্রত্যাশা তারা যদি ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের নিবিড় ভাবে সহায়তা করেন তারা দেশের অর্থনীতিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবেন।


আরও পড়ুন