বিদেশমুখী মনোভাব শিক্ষার হার কমার অন্যতম কারন: এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব

news paper

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২-৫-২০২৩ দুপুর ২:৪০

23Views

শিক্ষার হারে সকল বিভাগ থেকে পিছিয়ে রয়েছে সিলেট। এর পিছনের প্রতিবন্ধকতাগুলো একদিনে যেমন তৈরি হয়নি তেমনি রাতারাতি সমাধানও সম্ভব নয়। এই সংকট সমাধানে প্রয়োজন অঞ্চল বা এলাকা ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। এসব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে একজন দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধি। যাদের সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা দেখবে আলোর মুখ, বাড়বে শিক্ষার হার। সিলেটের শিক্ষা উন্নয়নে জনপ্রতিনিধির ভুমিকা ও ভাবনাগুলো নিয়ে কথা বলেছেন সিলেট ৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক সকালের সময়ের প্রতিনিধি খাদিজা জাহান তান্নি। 
 
প্রশ্ন: মৌলিক ভিত্তি শিক্ষাকে পাশ কাটিয়ে আমরা এখন উন্নয়ন বলতে রাস্তাঘাট, কালবার্ট কিংবা ভবন নির্মানকেই বুঝি। সিলেটে শিক্ষার হার কম হবার পিছনে কি কারন বলে আপনি মনে করেন? 
 
এমপি হাবিব: শিক্ষার হার ও মান খারাপ হবার পিছনে কয়েকটা কারণ রয়েছে। যেমন স্থানীয় শিক্ষকদের অভাব। স্থানীয় শিক্ষকরা যেমন শিক্ষার্থীদের সাথে মিশে যেতে পারেন বা কর্তৃত্ব খাটাতে পারেন, বিভিন্ন কারনে বাইরের শিক্ষকদের পক্ষে তেমনটা সম্ভবপর হয় না। অন্য আরেকটি কারণ হলো শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী প্রবণতা। শিক্ষার্থীরা বিদেশে অবশ্যই যাবে তবে সেটা যেন উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে হয়। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতারও ঘাটতি রয়েছে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো শিক্ষক স্বল্পতা। আমাদের স্কুল কলেজের ম্যানিজিং কমিটির সদস্যরা স্কুলকে সিঙ্গাপুর বানাতে চান। তারা ভবন চান, খেলার মাঠ চান, এদিকে স্কুলে শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে সেদিকে খেয়াল নেই। এসব কারণেই শিক্ষার হার পিছিয়ে রয়েছে। 
 
প্রশ্ন: বর্তমান সময়ের রাজনীতিতে শিক্ষিত রাজনীতিবীদের বেশি প্রয়োজন। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি? 
 
এমপি হাবিব: রাজনীতিতে অবশ্যই শিক্ষিত, সৎ ও স্মার্ট লোক প্রয়োজন। বর্তমান সরকার জনপ্রতিনিধি নিয়োগে এই বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। সিলেট অঞ্চলে এই শূন্যতার পিছনে কারণ হলো বিদেশমুখী মনোভাব। ভালো মানুষরা রাজনীতিতে আসছে না। আমরা চেষ্টা করছি যাতে শিক্ষিত স্মার্ট ছেলেরা রাজনীতিতে আসতে পারে। 
 
প্রশ্ন: তরুণ শিক্ষার্থীরা যারা অল্প বয়সে স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন। ফলে শিক্ষাঙ্গন কিংবা রাজনীতি দুইটাই বিপদগ্রস্ত হচ্ছে কিনা? 
 
এমপি হাবিব: তরুণরা রাজনীতিতে আসবে। এখান থেকে তারা অনেক কিছুই শিখবে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এটার প্রচলন আছে। তবে রাজনীতির সাথে সংযুক্ত হয়ে পড়ালেখা বা মেধা চর্চা বাদ দিয়ে দিলে, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 
 
প্রশ্ন: আপনার নির্বাচনী এলাকায় বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা প্রসারে কেমন প্রদক্ষেপ নিচ্ছেন বা ভবিষ্যতে নিবেন? 
 
এমপি হাবিব: শিক্ষার প্রসারে আমার নির্বাচনী এলাকায় একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও স্কুল কলেজ এমপিওভুক্ত করেছি। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করছি। শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিয়েছি। এ বছর আমি ৩০টিরও বেশি স্কুলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরনীতে গিয়েছি। তবে আমার মূল উদ্দেশ্য ছিলো শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন ক্যাম্পেইন করা। পাশাপাশি বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টির জন্য আমি লাইব্রেরিও করে দিয়েছি। আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে শিক্ষা অফিসারদের নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের কাউন্সিলিং করা, নিয়মিত বিভিন্ন স্কুল মনিটরিং করা। এতে আমাদের প্রতিবন্ধকতা ও দূর্বলতাগুলো দূর হবে।
 
প্রশ্ন: সিলেটে নারী শিক্ষাকে এখনো অনেকাংশেই অবহেলা করা হয়। নারী শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি? 
 
এমপি হাবিব: আমার নির্বাচনী এলাকা নারী শিক্ষায় পিছিয়ে নয়। আমি যখন বিভিন্ন স্কুল কলেজ পরিদর্শনে যাই, তখন দুই-তৃতীয়াংশ নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখতে পাই। এছাড়া আগে যেমন শিক্ষার্থীরা ইভটিজিং বা সমস্যার শিকার হতো এখন এগুলো অনেকাংশে কমে গেছে। 
 
প্রশ্ন: কিছুদিন আগে সুমাইয়া নামক একজন নারী শিক্ষার্থীর সাথে খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। যেটি নারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি গুঞ্জন হিসাবে শোনা যাচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পুলিশ বায়াসড। এক্ষেত্রে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করে নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনি কতটা সোচ্চার থাকবেন? 
 
এমপি হাবিব: সুমাইয়া হত্যাকান্ড নিয়ে কাজ চলমান, এখানে কেউই বায়াসড না। যেহেতু একজন শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে, সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হওয়া উচিত। এটার আইনি প্রক্রিয়া চলমান, পুলিশ অতিদ্রুত সুমাইয়া হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করবে। আমরা আশা করি দ্রুত চার্জশীট জমা দেয়া হবে। 

আরও পড়ুন