ঠিকাদার সমিতির পরিচয়ে টেন্ডার সন্ত্রাসীদের দখলে

news paper

আব্দুল লতিফ রানা

প্রকাশিত: ৩০-৪-২০২৩ দুপুর ৪:৩৯

56Views

শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিক ও জিসানের নাম ভাঙিয়ে ও ঠিকাদার সমিতির নেতা পরিচয়ে সাধারণ ঠিকাদারদের রাজউকে প্রবেশে বাধা প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, তাদের নির্দেশ অমান্য করলে নিয়মিত ঠিকাদারকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব বিষয়ে গত ১৬ এপ্রিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দপ্তরে সাধারণ ঠিকাদারদের পক্ষে এক লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। 
জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ইজিপি সিস্টেমে টেন্ডার চালু করার পর কোনো ভবনে বহিরাগত বা টেন্ডার সন্ত্রাসীদের মহড়া থাকার কথা না। আবার ঠিকাদার সমিতির কোনো প্রয়োজনও নেই। অথচ নামধারী ঠিকাদার সমিতির পরিচয়ে রাজউক ভবনে রামরাজত্ব কায়েম করছে টেন্ডার সন্ত্রাসীরা। আর এসব কারণে বাধ্য হয়ে রাউজকের নিয়মিত ও সাধারণ ঠিকাদারগণ রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। 
সূত্র জানায়, গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুর এলাকার টেন্ডার সন্ত্রাসী আলিম ও চাঁদপুর এলাকার মানিক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর উন্নয়ন কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হলে, তিনি টোকাই শ্রেণির সন্ত্রাসীদের নিয়ে সেখানে অবস্থান করেন। এরপর পেশাদার ঠিকাদারদের ওই ভবনে ঢুকতে সন্ত্রাসীদের দিয়ে বাধা প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, অনেক ঠিকাদারদের টেন্ডার ড্রপে অংশগ্রহণে বাধা দিতে তাদেরকে অপমান অপদস্তও করে থাকেন। এছাড়া মানিক নামের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি চাঁদপুর জেলায় বলে জানা গেছে। তিনিও একই কায়দায় ঠিকাদারদের ট্রেন্ডার ড্রপে বাধা দিয়ে আসছেন। গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর একটি মন্দিরের কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। উক্ত টেন্ডারে ঠিকাদারগণ অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাদেরকে টেলিফোনে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি, হুমকি দিয়ে টেন্ডারে অংশগ্রহণ হতে বিরত রাখা হয়। অথচ তিনি বা তার কোনো লোক উক্ত টেন্ডারে অংশগ্রহণও করেননি বলে জানা গেছে। আর এই আলিম ও মানিকের হুমকি এবং ভয়ভীতি উপেক্ষা করেই একজন ঠিকাদার অংশগ্রহণ করেন। উক্ত কাজের ওয়ার্ক ওয়ার্ডার তিনিই পাবেন বলে অন্যান্য ঠিকাদারগণ জানিয়েছেন। আর একজন্য উক্ত মানিক ও আলিম ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকে ফোন করে হুমকি দিয়ে বলেছেন যে, মন্দিরের কাজতো, আপনিই পাবেন। কিন্তু কাজটি আমাদের কাছে ছেড়ে দিতে হবে। আর তা না হলে তাদের বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। 
উক্ত অভিযোগে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে আসছে। আর এসব টেন্ডারের কাজসহ উন্নয়ন কাজে নিয়মিত ঠিকাদারদের রাজউক ভবনে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে রাজউকের বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হলেও কিছু অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে টেন্ডারে অংশগ্রহণ না করার জন্য এসব নিয়মিত ঠিকাদারদের নানা প্রকার হয়রানী আবার ফোন করে গালাগালি, ভয়ভীতি এবং হত্যাসহ বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিয়ে আসছে। তারা ঠিকাদারদের টেন্ডার না দেওয়ার জন্যও হুমকি দিচ্ছেন। আর যদি টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তাদেরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাদের যদি টাকা না দেওয়া হয়, তাহলেও তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। 
অভিযোগে জানা গেছে, সন্ত্রাসী আলিম ও মানিকের নেতৃত্বে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবনে এই সন্ত্রাসীচক্র বিভিন্ন ঠিকাদারকে হত্যার হুমকিসহ ভয়ভীতি দেখিয়ে ঠিকাদারদের ট্রেন্ডার ড্রপে অংশগ্রহণে বিরত রাখে। এরপর তাদের লোকদের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ঠিকাদারী কাজ ভাগিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে সাধারণ ঠিকাদারগণ রাজধানীর ঝিলমিল প্রকল্পে ও পূর্বাচল প্রকল্পের কাজের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেছেন। আর এসব প্রকল্পে অংশগ্রহণ করায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিক ও জিসানের নামে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আর এসব সন্ত্রাসীদের হাতে জীবন নাশের আশঙ্কায় সাধারণ নিয়মিত ঠিকাদারগণ রাজউকের চেয়ারম্যানের দপ্তরে পর্যন্ত যেতে পারছেন না। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, রাজউক ভবনে প্রবেশে নিরাপত্তাহীনতা মনে করছেন। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার বলছেন, তারা রাজউক ভবনে কোনো ইঞ্জিনিয়ারের সাথে তার রুমে দেখা করতে যান, তাহলে সন্ত্রাসীরা ওই ইঞ্জিনিয়ারের অফিস কক্ষে গিয়ে তাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করে আসছেন। এভাবে রাজউক ভবনে সাধারণ ঠিকাদারদের রাজউক ভবনে প্রবেশে বাধা প্রদান করা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন, এখানে তাদের নির্ধারিত ঠিকাদার ছাড়া সেখানে অন্য কোনো ঠিকাদার টেন্ডারের অংশগ্রহণ করতে পারবে না। 
এর আগে বেশ কয়েকজন রাজউকের কর্মকর্তাদের অফিসে ঢুকে এই সন্ত্রাসী গ্রুপটি প্রকাশ্যে অফিস ভাঙচুর ও হুমকি প্রদর্শন করেছে। যা রাজউকের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেখেছেন। আর এজন্য রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পের কাজ ও পূর্বাচল প্রকল্পের কাজগুলো সঠিক নিয়মে যাচাই-বাছাই করে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সাধারণ ঠিকাদারগণ দাবি করছেন। এছাড়া রাজউকের এই সন্ত্রাসী গ্রুপটির কার্যকলাপ, অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে অবৈধ ঠিকাদার সমিতির নাম ব্যবহার করা ও বহিরাগত মুক্ত করার জন্য দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ঠিকাদারগণ। অপর একজন ঠিকাদার জানান, রাজউকের নিয়মিত ঠিকাদারদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে রাজউক ভবনে প্রবেশ প্রার্থী ঠিকাদারদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদারগণ।
এ ব্যাপারে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) উজ্জ্বল মল্লিক এর সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়টি তার জানা নেই বলে সকালের সময়কে জানিয়েছেন।


আরও পড়ুন