পাঁচবিবিতে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কোটি টাকা ব্যয়ে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ

news paper

পাঁচবিবি, প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৮-৭-২০২১ দুপুর ৪:৩৭

1Views

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী জাহাঙ্গীর আলমের নির্মাণাধীন বিলাসবহুল বাড়ি নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ উপজেলায় দীর্ঘদিন থেকে সরকারি চাকরি করার সুবাদে উপজেলার দানেজপুর এলাকায় (হরিহরপুর মৌজায়) পাঁচবিবি-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের দক্ষিণ পাশে তিনি এই বহুতল বাড়ি নির্মাণ করছেন। জায়গাসহ এর নির্মাণ ব্যয় কোটি টাকার উপরে, যা তার আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

অপরদিকে ভবনটি নির্মাণে স্থানীয় পৌরসভা থেকে যে নকশা অনুমোদন করা হয়েছে, ওই নকশাকে তোয়াক্কা না করে তিনি নিজের ইচ্ছেমতো আন্ডারগ্রাউন্ড গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রেখে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। নকশাবহির্ভূত বাড়ি নির্মাণ করার কারণে পৌর কর্তৃপক্ষ নির্মাণকাজ প্রায় ৫ মাস বন্ধ করে রেখেছিল। দীর্ঘদিন বাড়ি নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকার পর পৌর কর্তৃপক্ষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পুনরায় নির্মাণকাজ করেছেন।

শুধু তাই নয়, তিনি এখন পর্যন্ত পৈত্রিক সূত্রে কোনো সম্পদ না পেলেও তার নিজ উপজেলা পলাশবাড়ীতে দেড় বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন সরকারি চাকরির সুবাদে হাতে আলাউদ্দিনের চেরাগ পেয়ে যান। তিনি পাঁচবিবি উপজেলায় ২০০২ সালে সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০০৫ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এরপর গাইবান্ধা জেলার বোনারপাড়া, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট ও খানসামা, বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলাসহ পটুয়াখালী জেলায় চাকরি করার পর পদোন্নতি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পুনরায় পাঁচবিবি উপজেলায় যোগদান করেন। এরপরই হয়ে যান বেপরোয়া। ২০১৬ সালে হরিহরপুর গ্রামে প্রথমে আছিয়া বেগমের নিকট থেকে ৯ শতক এবং পরে আছিয়ার দুই মেয়ের নিকট থেকে ৪.৭৫ শতকসহ মোট ১৩.৭৫ শতক জমি নিজের ও স্ত্রী লায়লা আরজুমানের নামে ক্রয় করেন। জমি ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণের সময় তিনি তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা সন্তানকে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বগুড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ রেখে তিন-চার বছর ধরে মাসে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন।

তার বিলাসবহুল বাড়ির নকশার বিষয়ে জানতে পাঁচবিবি পৌরসভায় গেলে সার্ভেয়ার সাহাদুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালের ২৯ মে ৩৬৫নং স্মারকে শিক্ষা অফিসার তার স্ত্রী লায়লা আরজুমান বানুর নামে পাঁচতালা ভবনের নকশার অনুমোদন করে নিয়েছেন। তবে তাতে আন্ডারগ্রাউন্ডের কোনো নকশা নেই।

সরেজমিন বাড়িটির ছবি নিতে গেলে উৎস্যুক এলাকাবাসী জানান, শিক্ষা অফিসার সবার সঙ্গেই টাকার গরম দেখিয়ে খারাপ ব্যবহার করেন এবং টাকা দিয়েই সকলকে কিনে নিতে চান। শিক্ষা কর্মকর্তার আয়ের উৎস হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) তার গ্রামের বাড়ি পলাশবাড়ী উপজেলার ঘোড়াঘাট সড়কের নুনিয়াগাড়ী শিশু কানুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পশ্চিম পার্শ্বে ভাই ভাই লাইব্রেরিসহ অনেক আগে নির্মিত পুরাতন একটি বাড়িতে তার বাবা মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুর রশিদ মাস্টার, বড় ভাই মোস্তাঈন বিল্লাহ্ দিপুন, ছোট বোন মারুফা আক্তার দীপ্তিসহ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বললে জানা গেছে, বাবার পরিবার থেকে বাড়ি নির্মাণ বাবদ ৪ লাখ টাকা এবং নিজের ক্রয় করা জমি বন্ধক রাখা বাবদ দেড় লাখ টাকা পেয়েছেন। তবে তিনি বাবার পরিবারে মাসে মাসে খরচ বাবদ টাকা পাঠিয়ে থাকেন।

এ বিষয়ে তার গ্রামের বাড়ির পার্শ্বে স্থানীয় বালাইনাশক ডিলার অনিল কুমার শীলসহ কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা এসব জেনে আঁতকে ওঠেন এবং বলেন, পরিবারের আয় থেকে তাকে দেয়ার মতো তার বাবার কিছু নেই। এরপরেও কোটি টাকার বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি তার এলাকার মানুষের কাছে অবাক বিষয়।

এ বিষয়ে কুসুম্বা ইউনিয়নের জয়হার গ্রামে তার শ্বশুরবাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে তার শ্বশুর পরিবারের লোকজন জানান, জাহাঙ্গীর শ্বশুরবাড়ি থেকে বাড়ি নির্মাণ বাবদ কোনো অর্থনৈতিক সহায়তা পায়নি। তবে লায়লা আরজুমান বানুর নামে যে জমিটুকু ক্রয় করা হয়েছে তাতে কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার জন্য কয়েকবার যাতায়াতকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বর্তমান শিক্ষা কর্মকর্তা টাকা ছাড়া কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করেন না।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ফাইল স্বাক্ষর করতে টাকা নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণের বিষয়টিতে তিনি নিজের আয়ের সাথে সঙ্গতির দাবি করেন। এছাড়াও বাবার ও শ্বশুরবাড়ি থেকে বাড়ি করার ক্ষেত্রে টাকা প্রাপ্তির দাবি করেন। আর বাড়ির নির্মাণের কাজ নকশাবহির্ভূত যেটুকু হয়েছে তা তিনি গুদাম তৈরি করার জন্য করেছেন, খুব সমস্যা হলে বন্ধ করে দেবেন বলে জানান।

নকশাবহির্ভূতভাবে বাড়িটি নির্মাণ করার বিষয়ে পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র আলহাজ হাবিবুর রহমান হাবিবের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, অফিসকে ফাঁকি দিয়ে নকশাবহির্ভূতভাবে বাড়িটি নির্মাণ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরও পড়ুন