ঢাকার রাস্তা ফাঁকা, সরগরম গুলিস্তান-বায়তুল মোকাররম

news paper

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৬-৩-২০২৩ দুপুর ২:৩৪

6Views

একদিকে পবিত্র মাহে রমজান, অন্যদিকে টানা তিনদিনের ছুটি। সব মিলিয়ে ঢাকার রাস্তায় মানুষের চলাচল কমেছে। নেই যানবাহনের বাড়তি চাপ। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে পড়তে হচ্ছে না যানজটে। এমনকি যানজট প্রবণ অঞ্চলগুলোতেও ট্র্যাফিক সিগন্যাল পড়তে দেখা যাচ্ছে না।

ঢাকার রাস্তা এমন ফাঁকা থাকায় ঘর থেকে বের হওয়া মানুষরা বেশ খুশি। কোনো ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই রাস্তায় যাতায়াত করতে পারছেন তারা। গণপরিবহনে উঠতে কোনো ধরনের বেগ পেতে হচ্ছে না। সহজেই পাওয়া যাচ্ছে বসার আসন। আবার যাত্রীর সংখ্যা কম হলেও যানবাহনের কর্মীরাও বিরক্ত না। বরং যানজটমুক্ত রাস্তায় গাড়ি চালাতে পেরে তারাও খুশি।

ঢাকার প্রধান সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা থাকলেও উল্টোচিত্র দেখা গেছে বায়তুল মোকাররম মার্কেট ও গুলিস্তান অঞ্চলে। ফুটপাত ব্যবসায়ীরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ক্রেতাদেরও সরব উপস্থিতি সেখানে। ফলে এ অঞ্চল বেশ সরগম হয়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে হাঁটার উপায় নেই।

রাজধানীর যে কয়টি সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম কাকরাইল মোড়। রোববার (২৬ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে কাকরাইল মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, যানবাহনের কোনো চাপ নেই। রাস্তায় যেসব পরিবহন চলাচল করছে, কোনটিকেই ট্র্যাফিক সিগন্যালে পড়তে হচ্ছে না। ফলে ট্র্যাফিকের দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যরাও প্রায় অলস সময় পার করছেন।

কাকরাইল মোড়ে কথা হয় সুপ্রভাত পরিবহনের চালক মো. খায়রুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আজ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে অফিস বন্ধ। এর আগে শুক্র-শনিবার সরকারি ছুটি ছিল। সব মিলিয়ে টানা তিনদিনের ছুটি পাওয়ায় অনেকে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে গেছেন। এ কারণে আজ ঢাকার রাস্তা প্রায় ফাঁকা। যাত্রী কম থাকায় রাস্তায় গাড়িও কম নেমেছে। তারপরও খুব বেশি যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।

যাত্রী কম হলেও তারা খুশি জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার রাস্তায় এমন যানজটমুক্ত গাড়ি চালানোর সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায় না। কখনো কখনো রামপুরা থেকে কাকরাইল মোড়ে আসতেই এক থেকে দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। আজ পাঁচ মিনিটের মধ্যে রামপুরা থেকে কাকরাইল চলে এসেছি। রাস্তায় কোথাও সিগন্যালে পড়তে হয়নি। বসুন্ধরা, বাড্ডা অঞ্চলেও যানজট নেই।

কাকরাইল মোড়ে ট্র্যাফিকের দায়িত্ব পালন করা এক পুলিশ সদস্য বলেন, ওয়ার্কিং ডেতে এ রাস্তায় পরিবহনের চাপ খুব বেশি থাকে। আমরা যারা এখানে ট্র্যাফিকের দায়িত্ব পালন করি, যানবাহনের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ থাকে। আজ সেই চাপ নেই। সব দিক থেকেই খুব কম পরিমাণ বাস, রিকশা, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল আসছে। ফলে আমরা অনেকটাই রিল্যাক্স মুডে দায়িত্ব পালন করতে পারছি।

কাকরাইলের মতো প্রায় সময় যানজট লেগে থাকে পল্টন মোড়ে। তবে এ মোড়েও পরিবহনের কোনো চাপ দেখা যায়নি। প্রায় ফাঁকা রাস্তায় কোনো ধরনের সিগন্যাল ছাড়াই গুটিকয়েক গণপরিবহন, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে।

মোটরসাইকেলে ধানমন্ডি থেকে পল্টন মোড়ে আসা মো. রিফাত নামের একজন বলেন, বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে এখানে এসেছি। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে মাত্র ১০ মিনিটেই চলে এসেছি। আজ রাস্তা ফাঁকা থাকবে ধারণা করেছিলাম। কিন্তু এত ফাঁকা থাকবে বুঝতে পারিনি। কোথাও কোনো ট্র্যাফিক সিগন্যাল নেই। ঢাকার রাস্তায় আজ মোটরসাইকেল চালিয়ে অন্যরকম অনুভূতি হয়েছে। প্রতিদিন যদি এমন ফাঁকা থাকতো কতই না মজাই হতো।

রাজধানীর যানজট প্রবণ এলাকায় রামপুরার রাস্তাও প্রায় ফাঁকা দেখা গেছে। রাস্তায় যানবাহন যেমন কম, তেমনি যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করা যাত্রীর সংখ্যাও কম দেখা গেছে। অথচ রামপুরা এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিনিয়ত গণপরিবহনে উঠতে এক প্রকার যুদ্ধ করতে হয়। অফিস সময়ে অনেকের পক্ষে গণপরিবহনে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে।

রামপুরা কাঁচাবাজারে কথা হয় যাত্রাবাড়ী থেকে বাজার করে নিয়ে আসা ছদরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় সকালে যাত্রাবাড়ী গিয়েছিলাম মাছ কিনতে। যাওয়ার সময় রাস্তায় কোনো যানজট পাইনি। আসতেও কোনো যানজটে পড়তে হয়নি। পুরো রাস্তায় ফাঁকা। রামপুরার রাস্তা সাধারণত এমন ফাঁকা দেখা যায় না।

তিনি বলেন, আমার অফিস মতিঝিলে। অফিসে যাওয়ার পথে রামপুরা থেকে বাসে উঠতে প্রতিদিন বড় ধরনের ধকল সইতে হয়। আমার মতো অনেকেই প্রতিদিন রাস্তায় বাসের জন্য অপেক্ষা করেন। একটা বাস আসলেই সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেন। কে কার আগে বাসে উঠতে পারেন, সেই প্রতিযোগিত শুরু হয়ে যায়। তবে আজ সেই দৃশ্য নেই। সহজেই বাসে ওঠা যাচ্ছে, সিটও খালি পাওয়া যাচ্ছে। অফিসের সময় যদি এমন পরিবেশ হতো ভালো হতো।

বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে গিয়ে দেখা যায়, অফিসগুলোতে তালা ঝুলছে। রাস্তায় মানুষের তেমন আনাগোনা নেই। বেশ শান্ত ও নিরব পরিবেশ। মতিঝিলের দিলকুশায় তরমুজের দোকানি ফিরোজ বলেন, অফিস খোলা থাকলে প্রতিদিন বেশ ভালো বিক্রি হয়। আজ অফিস বন্ধ, মানুষের আনাগোনাও নেই, বিক্রিও নেই। তারপরও যদি এক-দুজন ক্রেতা পাওয়া যায়, সেই আশায় দোকান খুলে বসে আছি।

এদিকে, গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররম মসজিদ সংলগ্ন মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে বেশ সরগম। বায়তুল মোকাররম এলাকায় পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসা মো. জয়নাল বলেন, ছুটির দিনে এ অঞ্চলে ক্রেতা বেশি থাকে। বিশেষ করে শুক্রবার ভালো ক্রেতা পাওয়া যায়। আজও সকাল থেকে বেশ ভালো ক্রেতা আসছে। আমাদের ধারণা ঈদ পর্যন্ত ক্রেতাদের এমন উপস্থিতি থাকবে।

গুলিস্তানে শার্ট বিক্রি করা রুবেল বলেন, গুলিস্তানে প্রতিদিন মানুষের আনাগোনা থাকে। তবে ছুটির দিনে আমাদের বিক্রি ভালো হয়। ছুটির দিনে এখানে যারা আসেন, তাদের বেশিরভাগই কেনার জন্য আসেন। আমাদের কাছ থেকে সাধারণ স্বল্পআয়ের মানুষ কেনেন। শুক্র ও শনিবার ভালো বিক্রি হয়েছে। আজও মানুষের আনাগোনা ভালো দেখা যাচ্ছে। আশা করছি, বিক্রি ভালোই হবে।


আরও পড়ুন