কর্মস্থলে না থেকেও চট্টগ্রামে বন বিভাগের কর্মচারীর বেতন-ভাতা উত্তোলন

news paper

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশিত: ২৯-৫-২০২১ দুপুর ৩:৪৩

19Views

চট্টগ্রামের দক্ষিণ বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসের অধীনে শ্রীমাই বিটের বোটম্যান (নৌকাচালক) মো. হালিম নামে এক কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে বছরের পর বছর বেতন-ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, অফিসের দায়িত্বরতদের বেতনের একটি অংশ দিয়ে চাকরি না করেও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আসছেন মো. হালিম। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে গড়েছেন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। এছাড়া ওই কর্মচারী চাকরিতে যোগদানের সময় ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করার অভিযোগ স্থানীয়দের। 

জানা যায়, বন বিভাগের বোটম্যান (নৌকাচালক) মো. হালিম বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর ইউনিয়নের গুনাগরি ফকিরপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দীনের ছেলে। বন বিভাগের নৌকাচালক মো. হালিমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হাসান কামাল নামে এক ব্যক্তি রামদাশ মুন্সির হাটে চাঁদাবাজির ঘটনায় গত ১৯ মে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। 

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসের অধীনে বোটম্যান হালিমের বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজি, হত্যা, জবরদখলসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগেও রয়েছে। কাগজে-কলমে বন বিভাগে চাকরি করলেও বছরের পর বছর কর্মস্থলে না গিয়ে অবৈধভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আসছেন তিনি। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তার ভয়ে মুখ খোলার সাহস করছেন না। হালিম বন বিভাগের বোটম্যান হলেও তার রয়েছে গ্রামের বাড়ি বাঁশখালীতে নিজস্ব একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। ওই বাহিনী দিয়ে হাট-বাজারে চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য, আশপাশে করাত কল, কাঠ ব্যবসায়ী, ফার্নিচারের দোকান ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বন বিভাগের কর্মচারী মো. হালিম বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সহযোগিতায় ২০০৪ সালের দিকে বোটম্যান পদে চাকরি পান। উক্ত পদের জন্য অষ্টম শ্রেণি পাস বাধ্যতামূলক হলেও বোটম্যান হালিম এলাকায় কোন স্কুল থেকে পাস করেছেন তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। চাকরিতে যোগদানের সময় বাঁশখালী কোকদন্ডী গুনাগরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পাসের যে সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে তাও ভুয়া বলে স্থানীয়রা জানান।

চাকরির শুরু থেকে যেখানে কাজ করেছেন সেখানে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। বন বিভাগের কর্মচারী হালিম ইতোমধ্যে তার গ্রামের বাড়ির পূর্ব পাশে ৬ গণ্ডা, পশ্চিম গুনাগরী প্রাইমারি স্কুলের পাশে ৮ গণ্ডা, বাঁশখালী কলেজের পাশেও বেশকিছু জমি নিজের নামে ক্রয় করেছেন। নিজের সেমিপাকা বাড়িতে কয়েক লাখ টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। এছাড়া নামে-বেনামে একাধিক দোকান, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েক কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে বাঁশখালী রামদাশ মুন্সির হাটের ইজারাদার হাসান কামাল বলেন, হালিম বন বিভাগের চাকরি করে বলে দাবি করলেও দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বাঁশখালীতে থাকেন। পুরো বছরজুড়ে বাঁশখালীতে থেকে কিভাবে পটিয়ায় চাকরি করেন? হালিম বাঁশখালীতে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। এলাকার লোকজনকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানালেও নিয়মিত অবৈধভাবে বেতন-ভাতা তুলছেন বছরের পর বছর।

এ বিষয়ে বন বিভাগের কর্মচারী মো. হালিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। অবৈধ সম্পদ থেকে থাকলে কেউ প্রমাণ করতে পারলে তার কোনো আপত্তি নেই। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে বেতন-ভাতা তোলার প্রসঙ্গে বলেন, শ্রীমাই বন বিভাগের অফিসটি দূরে হওয়ায় নিয়মিত আসা-যাওয়ায় সমস্যা থাকায় কম যাওয়া হয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা-মিজানুর রহমান বলেন, হালিম কর্মস্থলে না যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিয়ষটি আমি জানার পর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মহোদয়কে জানিয়েছি। অফিসের লোকজনও তার ওপর সন্তুষ্ট নয়।


আরও পড়ুন