প্রায় পানিশূন্য তিস্তা এখন হুমকির মুখে;লাখো কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ

news paper

জামাল বাদশা, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: ২৮-১-২০২৩ দুপুর ৪:৪৩

15Views

প্রায় পানিশূন্য তিস্তা এখন হুমকির মুখে পরেছে।প্রতিবছর নদীর বুক চিরে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন চরাঞ্চলের।পানিশূন্য তিস্তার দিকে তাকালে দৃশ্যমান ধূ ধূ বালুচরের। এক সময় পানির কলকাকলীতে নদীর চারপাশ মুখরিত থাকলেও বর্তমানে যৌবন হারিয়ে ধু ধু বালুচরে পরিণত হচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই নদীটি।নদীর জেগে ওঠা চরের কোনো এক পার্শদিয়ে ছোট নদী আকারে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি।শীতের এই মৌসুমে নদী এলাকার জেলে ও কৃষিজীবী লাখো মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ।তিস্তা নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় চলতি মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।এ বছর উত্তরের পাঁচ জেলার ১৪টি উপজেলায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সিকিমস্থ হিমালয় পর্বতমালার পাহুন্দ্রী হিমবাহ থেকে সৃষ্ট ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই তিস্তার ১১৫ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে বয়ে গেছে।নদীর উজানে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ এবং বেশ কয়েকটি জলবিদ্যুত ও সেচ প্রকল্প করায় নদীটি থেকে একতরফা ভাবে পানি তুলে নেওয়ায় নদীটির বাংলাদেশের অংশের বিস্তীর্ণ অংশ পলি জমে ভরাট হয়ে ক্ষীণাকৃতি ধারণ করেছে।এছাড়াও বাংলাদেশে প্রবেশের পর উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের দোয়ানিতে ব্যারেজ নির্মান করে এ নদী দিয়ে বয়ে আসা পানির গতিকে রোধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বছরের পর বছর বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তার স্রোত আটকে তুলে নেওয়া হচ্ছে পানি নামের জীবন।ফলে বাংলাদেশ অংশে নদীর বয়ে যাওয়া দীর্ঘ পথের অধিকাংশ পথই শুষ্ক মৌসুমে থাকছে পানিশূন্য।সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন চরাঞ্চলের।

তবে বর্তমানের প্রায় পানিশূন্য থাকা এই ধূ ধূ বালুচরের তিস্তাই বর্ষায় রুপ নেয় সর্বনাশী হিসেবে। গভীরতা কম থাকায় বর্ষাকালে অল্প পানিতে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ বন্যার।যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় নদী তীরবর্তী হাজারো বাসিন্দার বসতভিটা ও ঘরবাড়ি।ভেসে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। প্রতিবছর নতুন করে সংখ্যা বাড়ে ভূমিহীন পরিবারের।

চলতি মাসেই শুরু সেচনির্ভর ইরি-বোরোর চাষাবাদ। চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধানের শীষ হেলে না পড়া পর্যন্ত সেচ দিতে হয় এই মৌসুমে। সে পর্যন্ত বোরো আবাদে সেচ অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সেচের আওতাভুক্ত এলাকার কৃষকদের জন্য তিস্তার সেচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই সময়ে তিস্তা প্রায়পানি শূন্য হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় কৃষিতে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তিস্তা তীরবর্তী বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় নদী- তীরবর্তী এলাকায় সেচ সংকটের পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। চরাঞ্চলের জমিতে আলুসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করেও পানির অভাবে সেচ দিতে না পারায় কৃষকদের বছরের পর বছর ধরে লোকসান গুনতে হয়। তিস্তা পাড়ের একাধিক কৃষক বলেন, ব্যারাজের উজান ও ভাটিতে বিশাল বিশাল চর জেগেছে। দেখে মনেই হয় না- এটি তিস্তা নদী। তিস্তায় পানি না থাকায় শ্যালোচালিত পাম্প দিয়ে চরের জমি আবাদ করতে হচ্ছে।তারা বলেছেন বন্যা ও খরা দুই মৌসুমেই তাদের বিপদের কথা। কয়েকজন জেলে জানান, বর্ষা শেষ না হতেই তিস্তায় পানি নেই। মাছ ধরে জীবিকা চালানো আর সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করতে হচ্ছে।

লালমনিরহাট কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় জেগে ওঠা জমির পরিমান ১০ হাজার ২০০ হেক্টর। এ বছর চাষাবাদ হয়েছে ৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে।তবে চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গিয়েছে ভিন্ন চিত্র। জেগে ওঠা চরের বৃহৎ অংশই চাষাবাদের বাহিরে রয়েছে এখনো।আর চাষাবাদ কৃত জমিতেও নদীরতে পানি সংকট থাকায় কৃষকরা শ্যালো ইঞ্জিন ব্যবহার করে সেচ কার্যক্রম চালাচ্ছে।

'তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাটের সভাপতি গেরিলা লিডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, 'রংপুর অঞ্চলের প্রাণ তিস্তা নদী। অথচ সেই নদীটিই এখন প্রাণ হারাতে বসেছে। পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি সরকারের পরিকল্পনায় থাকা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নও দ্রুত করা উচিত বলে মনে করছি।'

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদীন ইসলাম জানান, সেচপ্রকল্পের পানিসহ তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে কমপক্ষে ১ লাখ ২০ হাজার কিউসেক পানির প্রয়োজন। অথচ বর্ষা শেষ না হতেই গত ১০ দিনে গড়ে ব্যারাজের মূল গেটের পানি প্রবাহ রয়েছে ২৫ হাজার ৩০০ কিউসেক। যা দিয়ে তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম শুরু করা কষ্টকর হবে।

 




আরও পড়ুন