বখাটের উত্যক্তে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ এসএসসি পরীক্ষার্থীর

news paper

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৫-১-২০২৩ দুপুর ৩:৪৮

14Views

পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে তাসনিম কবির মীম। টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সিংদাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সে। তার ক্লাশ রুল ১। মাস দু'য়েক পরেই শুরু হবে এস.এস.সি পরীক্ষা। তবে স্থানীয় এক বখাটে ও তার পরিবারের উত্যক্তে এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে মীম। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ। 

বখাটে ও তার পরিবারের হুমকি-ধমকিতে ভয়ে নাকাল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মীমের অভিভাবককে  মীমকে বিদ্যালয়ে না পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছে প্রধান শিক্ষকও। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরনাপন্ন হয়েছে মীম। মৌলিক অধিকার শিক্ষা প্রাপ্তির দাবিতে আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন তিনি। 

এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্দ গ্রামবাসী ও মীমের সহপাঠীরা। তবে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার উপায় নেই কারও। তবে নানা প্রতিকুলতার অবসান ঘটিয়ে খুব দ্রুত মীমকে ক্লাশে চায় তার সহপাঠীরা। আর বিদ্যালয় ও তার আশপাশের এলাকা বখাটে মুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা সকল অভিভাবকদের।  

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মীম বলেন, বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে স্থানীয় কুরাইশি ইমন এবং তার আত্মীয়-স্বজনেরা আমাকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করে। কুপ্রস্তাব দেয় ইমন। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে বিভিন্নভাবে বাধা প্রদাণ করে। আমাকে জোড়পূর্বক উঠিয়ে নেওয়ার হুমকি দেয়। এসব বিষয়ে গ্রামবাসী ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবগত রয়েছে। 

তবে কেউ তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়নি। ইমন ও তার পরিবারের নিকট অসহায় গ্রামবাসী। বাধ্য হয়েই নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর শিক্ষা প্রাপ্তির অধিকার দাবিতে আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাবান্ধব। কাজেই নিশ্চয়ই তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট থেকে যথাযথ সহায়তা পাবেন বলে মন্তব্য করেন। 

সিংদাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. রকিব মিয়া, দিপালী আক্তার এবং মীম আক্তারসহ একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত মীম। একজন বখাটের ভয়ে তার শিক্ষা জীবন থেমে যেতে পারে না। সে খুবই মেধাবী। আমরা চাই মীম আবার নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসুক এবং সে তার পড়াশুনা চালিয়ে যাক। 

মীমের মা লতিফা আক্তার বলেন, সিংদাইর সহিদুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তিনি। একই চত্তরে অবস্থিত প্রাইমারি ও হাই স্কুল। এরপরও আমার মেয়েকে আমি স্কুলে নিয়ে আসতে পারছি না। একজন বখাটে ও তার পরিবারের জন্য আজ আমার মেয়ের পড়াশুনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীমকে স্কুলে না পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন। এতে আমি আরও ভয়ে আছি বলে জানান তিনি। 

সিংদাইর মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কুরাইশি ইমনের মা জাহেদা বেগম বলেন, মীম আমার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে স্কুলে যায়। আমার ছেলে আমার বাড়ির সামনে অবাধ চলাচল করবে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া বাড়ির পাশেই হাই স্কুল। সেখানে সে খেলাধুলা করে। মীমকে আমার আমার ছেলে কোনভাবেই বিরক্ত করে না বরং মীম ছেলেরে পাগল বানাইছে বলে দাবি করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাদিক গ্রামবাসী বলেন, জেলার একদম বর্ডারে অবস্থিত সিংদাইর গ্রাম। যোগাযোগ ব্যবস্থার হয়নি তেমন উন্নয়ন। যে কারণে এখানে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিও খানিকটা কম। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় হেরোইন ও ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক। এসব মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে গ্রামের কিশোর ও যুবকেরা। অচিরেই এসব অবস্থার পরিত্রাণ দাবি জানান তারা। 

সিংদাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন মীম খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী। বখাটের উত্যক্তে তার স্কুলে আসা বন্ধ রয়েছে। তার নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করেই আমি তার মা'কে কয়েক দিন স্কুলে না পাঠানোর জন্য বলেছিলাম।বিদ্যালয় আঙ্গিনায় মীম পুরোপুরি নিরাপত্তায় থাকলেও রাস্তাঘাটের নিরপত্তার বিষয়টি চিন্তা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। তবে রাস্তাঘাটের নিরাপত্তা তার পরিবার দিতে পারলে স্কুল যাতায়াতে তার কোন আপত্তি নেই বলে মন্তব্য করেন। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  ওয়াহিদুজ্জামান বলেন,আমি সিংদাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনিম কবীর মীমের একটি লিখিত অভিযোগের কপি পেয়েছি। বিষয়টি সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলেছি। 

সহকারী কমিশনার মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। 


আরও পড়ুন