“গণঅবস্থান কর্মসূচি গণমানুষের আশার প্রদীপ জ্বালাতে ব্যর্থ”

news paper

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ১৭-১-২০২৩ বিকাল ৭:৩

15Views

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলছে, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিএনপি-জামায়াত দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে পদে পদে নানামুখী ষড়যন্ত্র করে চলছে। এই বিএনপি-জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, উন্নয়নে বিশ্বাস করে না, তারা পাকিস্থানী ভাবধারায় বিশ্বাসী। গণ অবস্থান কর্মসূচির নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে জনগণকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০০১-২০০৬ সাল বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারণে চিহ্নিত হয়ে থাকবে সবসময়। একটি দেশকে ক্ষমতাসীন দল চাইলে কতটা নারকীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, তার নিদর্শন বিএনপি-জামায়াতের এই শাসনামল। সে সময়কার পরিণত মানসিকতার মানুষ যারা বেঁচে আছেন, সেই শাসনামলের কথা মনে পড়লে আজও তারা শিউরে ওঠেন। ধীরে-সুস্থে নয়, ক্ষমতায় বসার আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল পিশাচদের জান্তব উল্লাস। বিএনপি-জামায়াতকে যারা ভোট দেবে না, তাদের পরিণতি কত কঠিন হতে পারে, তার দৃষ্টান্ত শুরু হয়ে গিয়েছিল মাসখানেক আগে থেকেই। আওয়ামী লীগ এবং সংখ্যালঘু নিধনযজ্ঞ শুরু হয় নির্বাচনের আগে থেকেই। নির্বাচনের দিন দুপুরের পরপরই দেশের ওপর যেন নরক ভেঙে পড়ে। শুরু হয় চারদিকে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ ভয়াবহ সহিংসতা। দেশের মানুষ ৭১ ও ৭৫-এর পর এমন চরম আতঙ্কজনক পরিস্থিতি চাক্ষুস করেনি। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎকালীন সরকার প্রতিশ্রুতি দেয় ১০০ দিনেই দেশকে সুপথে পরিচালিত করবে বলে। কিন্তু সবই ছিল বাগাড়ম্বর। অর্থনীতি, আইন-শৃঙ্খলা, রাজনীতি, প্রশাসনসহ সর্বক্ষেত্রেই সরকারের চরম ব্যর্থতা মানুষকে আশাহত করেছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। মানবাধিকার পরিস্থিতিতে চরম বিপর্যয় ঘটেছে... ইত্যাদি। এমনকি বিএনপি-জামায়াত জোটের অনেক সিনিয়র নেতাও সরকারের কর্মকান্ড নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। সেসময় বিএনপি নেতা ও তৎকালীন পরিবেশ মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ নিজের আক্ষেপ তুলে ধরে বলেছেন, আমরা এখন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। জনগণ ইতোমধ্যে হতাশ ও দুর্দশাগ্রাস্ত হয়ে পড়েছে। কারণ আমাদের অনেক নেতা-কর্মী সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। কিন্তু তারা গ্রেপ্তার হচ্ছে না বা তাদের শাস্তি হচ্ছে না। জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর আমীর (রাজাকার) এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, জোট সরকারকে দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ উপহার দিতে হবে। জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আগেই এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কারণ, জনগণ কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা দলকে ক্ষমতাসীন করার জন্য ভোট দেয়নি। জনগণ শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র চায়।

বিএনপি-জামায়াতের গণঅবস্থান কর্মসূচি সমাবেশ থেকে বলা হয় ’৭২-এর সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। তাদের এতো বড় ধৃষ্টতা হয় কী করে। যারা সংবিধান মানে না, গণতন্ত্র মানে না, তাদের ধৃষ্টতার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

বিএনপির কর্মসূচিতে সরকার কখনো বাধা দেয়নি। গণঅবস্থান কর্মসূচির নামে বিএনপি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি এবং ধংসাত্মক কাজ করে সবসময়। তাদের বিগত সব কর্মসূচিতে সহিংসতা হয়েছে। রাষ্ট্রকে আবার ক্ষমতা পেলে তারা ধ্বংস করবে। এই দেশের গণতন্ত্র বাঁচবে না, তারা ক্ষমতায় এলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতার আদর্শ বাঁচবে না। এই অপশক্তি জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক। গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে বলা হয়েছে সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরবেন না। সরকারের পতন হবে না। কারণ এই সরকার জনগণের সরকার। এই সরকার শান্তির সপক্ষের সরকার, এই সরকার উন্নয়নের সরকার। যারা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করতে পারে, যারা জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করতে পারে; তারা আর যাই হোক এ দেশের মঙ্গল কামনা করতে পারে না। ওরা খুনি। তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করা উচিত।

বিএনপি দেশের উন্নয়ন হলে খুশি হয় না। তারা ক্ষমতায় থাকতে কোনো কিছু করতে পারেনি উল্টো দেশকে ব্যর্থ, জঙ্গী রাষ্ট্র বানিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু কন্যা অন্ধকার থাকা দেশকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন। উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করতে মিথ্যাচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে উসকে দিচ্ছে।

শেখ হাসিনা সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থ বারের মতো দেশ পরিচালনা করছে। এর সুফল পাচ্ছে দেশবাসী। অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে সব প্রতিবন্ধকতা সমস্যা-সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে সুনীল অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, সাবমেরিন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় ২৮২৪ ডলারে উন্নীত, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশে উন্নীত করা, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাওয়া, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক মহামারী করোনায় শেখ হাসিনার নেয়া পদক্ষেপ জাতিসংঘ, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যু আজ বিশে^ প্রশংসিত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান সর্ব মহলে প্রশংসিত হচ্ছে।

গত ১৪ বছরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে। বাংলাদেশকে আজ আর কেউ বন্যা, খরা, দুর্যোগের দেশ হিসেবে দেখে না। বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল। বিভিন্ন আন্তজার্তিক ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ও রেলযোগাযোগ স্থাপনের জন্য পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু, তিস্তা সেতু, পায়রা সেতু, দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু, দ্বিতীয় মেঘনা, দ্বিতীয় গোমতী সেতুসহ শত শত সেতু, সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ করেছে সরকার। এক পদ্মা সেতু দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সড়ক পথে ঢাকা এবং অন্যান্য জেলার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। এই সেতুর ফলে দেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, কৃষক ফসলের ন্যায্যম্ল্যূ পাচ্ছে। ছয় মাসে ২৮ লাখ গাড়ি পারাপার হয়েছে, এতে সরকারের আয় হয়েছে ৪১০ কোটি টাকা।

আমাদের দেশ এগিয়েছে অনেক। তবে আরও এগিয়ে নিতে হবে। একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন আমাদের লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। কোন অপশক্তি যেন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বৈশ্বিক সংকটকে অভ্যন্তরীন সংকটে রুপদানের অপচেষ্ঠা নস্যাৎ করতে হবে।

এ বছরের শেষে অথবা সামনের বছরের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এখন থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী, ক্ষমতালোভী, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী আর পরগাছা গোষ্ঠির সরব তৎপরতা শুরু হয়েছে। এদের লক্ষ্য ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পিছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। এরা লুণ্ঠন করা অর্থ দিয়ে দেশে-বিদেশে ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী এবং বিবৃতিজীবী নিয়োগ করেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরা মিথ্যে এবং ভুয়া তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হয়ে জনগনের উচিত দেশের অগ্রযাত্রাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

লেখক: অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

ট্রেজারার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

সাবেক চেয়ারম্যান ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


আরও পড়ুন