৭১ এর পরাজিত শক্তিরা আবারও একতাবদ্ধ

news paper

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ৬-১-২০২৩ বিকাল ৬:২৮

10Views

আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার উৎখাতের অপষড়যন্ত্র সফল করতে বিএনপি ছোট-বড় সব দলকে নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এরই মধ্যে সাত দলীয় জোটের একটি গণতন্ত্র মঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি আশা করছে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকেও তাদের পাশে পাবে, এমনকি জাতীয় পার্টিকেও তাদের সঙ্গে ভেড়াতে পারবে বলেও তাদের ধারণা। কারণ জাতীয় পার্টির মধ্যে দলীয় পদ পদবী এবং নির্বাচন নিয়ে নানা সমীকরণ ও বিভাজন চলছে। সুতরাং এ দলের কোনো একটি অংশ বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয় তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে জাতীয় ঐক্য গঠনের যে আশা করছে তার প্রধান অন্তরায় হচ্ছে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দীর্ঘদিনের জোটগত ও আদর্শগত নৈকট্যের ফয়সালা সম্পর্কে জানার উপর।

আড়াল থেকে জামায়াতের হরতালকে সফল করার জন্য বিএনপি চেষ্টা করেছে। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে সরকার পতন ঘটাতে পারলেই যুদ্ধপরাধীদের বিচার বানচাল করা সম্ভব বলে মনে করছে দলটি। এখন পর্যন্ত সহিংসতা সৃষ্টি করতে গিয়ে গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগই জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মী। প্রকাশ্যে বিভিন্ন পন্থায় পেট্রোলবোমা তৈরি, বোমা তেরি করার এবং নাশকতার জন্য বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করছে জামায়ত শিবিরের কর্মীরা। বিগত ২০১৩ এবং ২০১৪ সালের হরতাল অবরোধের কারণগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে বিএনপি আন্দোলনের জন্য নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করতে গিয়ে বার বার ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, দলীয় নেতাকর্মীরাও কোন আন্দোলন কর্মসূচীতে যোগ দিতে আগ্রহ দেখায়নি। ধারাবাহিক আন্দোলনে সহিংসতা ছাড়া নতুন কিছু না থাকায় জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘোষণা করেও দলের কোন নেতাকর্মী মাঠে নামছেন না। সারাদেশে বিএনপির তৃণমূলের কোন নেতাকর্মী কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন না। নিজেদের কোন্দল সামাল দিতে না পারার মাশুল দিতে হয় সাধারণ মানুষকে। বিএনপি ওইদিন হরতাল ডাক দেয়। শুরু হয় দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা করতে পারেনি বিএনপি। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের আত্মগোপনে চলে যাওয়া এবং খালেদা জিয়া নিজে গুলশানের বাসায় লুকিয়ে পড়ায় রাজধানীর রাজপথে কোন নেতাই নামেননি। নেতাকর্মীরা মাঠে না নামায় এবং জনগণ বাস্তবতার তাগিদে আন্দোলনকে উপেক্ষা করায় বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। 
বিএনপির ভিতরে গনতন্ত্র নেই তারা আবার দেশে গনতন্ত্র চায়। আওয়ামী লীগ একটি গনতান্ত্রিক দল, এই দলের শিকড় অনেক গভীরে। একদিন সমাবেশ করেই এই দলকে নাড়ানো সম্ভব না। মুসলেকা দিয়ে ২০০৭ সালে তারেক রহমান লন্ডনে পালিয়ে গেছে, দেখতে দেখতে ১৫ বছর, তারেক আসবে কোন বছর। রোজার ঈদে, না কোরবনীর ঈদে, এই বছর না ওই বছর, মানুষ বাঁচে কয় বছর। খেলা হবে দূর্নীতির বিরুদ্দে,খেলা হবে লুটপাটের বিরুদ্ধে,খেলা হবে ভোট চুরির বিরুদ্ধে,খেলা হবে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে, খেলা হবে অপশক্তির বিরুদ্ধে,খেলা হবে আগামী নির্বাচনে। এখন সেমিফাইনাল চলছে, ফাইনাল খেলা হবে আগামী ডিসেম্বর -জানুয়ারীতে। বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করলে সংসদের কিছুই যায় আসে না। কোন সাংবিধানিক সংকটের আশঙ্কা নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করেছে যে দল, একাত্তরের ৯ মাস অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হয়ে জেনোসাইডে সরাসরি অংশ নিয়েছে যে জামায়াতে ইসলামী, একাত্তরের ভূমিকার জন্য ভুল স্বীকার করে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চায়নি যে রাজনৈতিক দল, সেই জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে কীভাবে এখনো প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে, তা এক বিস্ময়ের ব্যাপার। 
নুর বিএনপির লেটেস্ট ভার্সন। অনেকটা পুরনো বোতলে নতুন মদের মতো। এ কারণে বিএনপির ‘পেইড এজেন্ট’ হয়ে সে তারেকের ছত্রছায়ায় দেশবিরোধী অপপ্রচার ও সরকারের প্রশংসনীয় কর্মতৎপরতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নুরকে নানা ‘মিথ্যে প্রলোভন’ দেখিয়েছে সুবিধাবাদী ও চতুর তারেক রহমান। এমনকি তিনি ‘শিষ্য’ হিসেবে নুরকে এমনভাবে তৈরি করেছেন যে, যাতে সহজেই নিজের স্বার্থসিদ্ধি হয়। সে লক্ষ্যে অর্থ বিনিয়োগও করছেন বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তারেকের উদ্দেশ্য অদ্বিতীয় কিছু নয়, নুরের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। সে লক্ষ্যেই তাকে ‘সহায়-সম্বল’ মেনে কাজ করছে বিএনপি। কারণ, নুর এ সময়ের সমালোচিত নেতা। তার জনপ্রিয়তা বিএনপির অনেক জাতীয় নেতাকেও ছাপিয়ে। তাছাড়া অনেক চেষ্টা করেও বিএনপি নেতৃবৃন্দ যখন জনগণকে জাগিয়ে তুলতে পারছে না, তখন নুরকেই ‘ভরসা’ মানছেন তারা। অথচ, নুরের বিরুদ্ধে রয়েছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ। রয়েছে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গেও তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের তীর। নুরের জীবনধারার ‘আকাশ-কুসুম’ পরিবর্তনই বলে দেয় তারেক রহমানের সংস্পর্শে এসেই তিনি ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হয়েছেন। তাই এখন বলাই বাহুল্য, ওই ‘বিশেষ মহল’কে খুশী করতে অর্থনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে নুর যেকোনো কিছুই করতে পারেন।

বাংলাদেশ ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং কূটনৈতিক কোনো সম্পর্কও নেই। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ সব সময় ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দুদিন আগেও জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে ইসরায়েলি গোয়েন্দার সঙ্গে ছবি তুলে নুরুল হক নুর কি দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন কিনা, সে প্রশ্নও উঠেছে। ২০১৬ সালে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বৈঠকের ছবি প্রকাশ পেলে তোলপাড় শুরু হয়। একপর্যায়ে বিএনপির ওই নেতার বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি গ্রেপ্তারও হন। বিদেশে গিয়ে নুর ফেসবুক লাইভে এসে সরকার, মন্ত্রী-এমপি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়াচ্ছেন। এরই মধ্যে তার একটি লাইভ নিয়ে দেশে তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ২০১৬ সালে বিদেশে বসে এই মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। বৈঠক শেষে দুজনের ছবি ফাঁস হয়ে গেলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। একপর্যায়ে আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশে আসলাম চৌধুরী ইসরায়েলি নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে এ ব্যাপারে সদা-সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কোনভাবেই স্বার্থান্বেষী চক্রের উদ্দেশ্য সাধন না হয়।

বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার অবদান অপরিসীম। জনগণের অধিকার রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অসমতা, ভয় ও বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে চলেছেন যেখানে সকল নাগরিক মর্যাদা ও সম্মানের সাথে বসবাস করবে, যেখানে থাকবে না কোনো সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে বাংলাদেশ সদা তৎপর এবং এক্ষেত্রে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।

 


আরও পড়ুন