পৌষে পিঠা রানির কথা

news paper

ফয়েজ রেজা

প্রকাশিত: ৪-১-২০২৩ রাত ৯:২৪

16Views

বাংলাদেশের প্রকৃতি এখন পৌষের কুয়াশায় ঢাকা। সারাদেশে বইছে হিম শীতল বাতাস৷ সকালের ঠান্ডায় শরীর যখন বরফের মত,  মনে তখন আনন্দের ঢেউ জাগাতে পারে পৌষের পিঠা। পৌষের এই সকালে পড়ুন একজন পিঠা রানির গল্প। 

পিঠা রানির প্রকৃত নাম জান্নাতুল ফেরদৌস। ১৯৯৯ সালে ঢাকা 'ল কলে  থেকে আইন বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। সনদ হাতে পাওয়ার সময় হয়তো নিজের অবস্থান কল্পনা করেছিলেন দেশের একজন প্রখ্যাত ও প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী হিসেবে। আদালতের আঙিনায় আসামীদের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিতর্ক করে জিতে আসার ইচ্ছা ছিলো তাঁর। ৩ বছর নিম্ন আদালতে চর্চাও করেছেন। এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। বিআইএম থেকে পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট এর উপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় ৯ বছর কাজ করেছেন দেশের একটি প্রতিষ্ঠিত শিল্প গ্রুপে।

প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ও কাজের অভিজ্ঞতা দেখেই অনুমান করা যায়, ঠিক নিয়তি নয়, ভালো লাগা থেকে আজ তিনি দেশের অনেকের কাছে পরিচিত পিঠা রানি। সত্যিকার অর্থেই পিঠা রানি হিসেবে তিনি যত পরিচিত, আইনজীবী হিসেবে ততটা নন। এ জন্য তাঁর নেই বিন্দুমাত্র আফসোস।

তাঁর বড় চাচা যাঁকে তিনি বাবার মত দেখেন তাঁর খুব ইচ্ছা ছিল তিনি আইনজীবী হবেন। ডিগ্রি অর্জন করার পর আইন পেশা ও কর্পোরেট গ্রুপের চাকরি ছেড়ে পিঠা তৈরি ও বেচার কাজ তিনি যখন শুরু করেন, তখন পরিবারের সদস্য, আত্বীয়- স্বজন, সহকর্মী প্রত্যেকেই পিঠা তৈরি করাকে ছোট কাজ বলে অবজ্ঞা করেছেন। পিঠায় দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরা যায়, বাংলাদেশের মানুষ দেশীয় সংস্কৃতি হিসেবে পিঠা পছন্দ করে এবং পিঠা তিনি ভাল তৈরি করতে পারেন, এরকম কয়েকটি যুক্তি থেকে পিঠা তৈরি করার কাজটি তিনি পেশা হিসেবে নিয়েছেন। আজকের দিনে নিজের কাজের সাথে নিজের পরিচয় সেঁটে যাওয়ার বিষয়টিকে বিশেষ অর্জন বলে মনে করেন তিনি।  কতজনের ভাগ্যে জুটে এমন পদবী।

পিঠা রানি জান্নাতুল ফেরদৌস এর ভাগ্য সুপ্রশন্ন। নিজের কাজের প্রতি সম্মান ও ভালবাসার কারণে দেশের বহু মানুষের কাছে তিনি পরিচিত পিঠা রানি হিসেবে। কিভাবে তিনি পিঠা রানি হিসেবে পরিচিতি পেলেন?

ফেসবুকে নারী উদ্যোক্তাদের একটি গ্রুপ আছে। উইমেন ই-কমার্স বা উই। উই গ্রুপে প্রায় ১৪ লাখ সদস্য। যারা তাঁদের বিভিন্ন পণ্য সেখানে প্রদর্শন করেন। পিঠা শিল্পী জান্নাতুল ফেরদৌস নিয়মিত পিঠা তৈরি করে ছবি তুলে সেখানে প্রদর্শন করতেন। গ্রুপের সদস্যরা তাঁর তৈরি করা পিঠা পছন্দ করতে শুরু করেন। অর্ডার বাড়তে থাকে তাঁর। গ্রুপের সদস্যরা তাঁকে পিঠা রানি সম্বোধন করতে শুরু করেন। বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ সদস্যের কাছে তিনি পিঠা রানি হিসেবে পরিচিত। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয় হওয়ার কারণে তাঁর তৈরি করা পিঠা সম্পর্কে জানতে পারছে বহু মানুষ। ক্রয়াদেশও আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। ঢাকায় কোন হোটেল বা দোকান নেই তাঁর। শাহজানপুরে নিজের ভাড়া বাসার রান্না ঘরে নিজের হাতেই তৈরি করেন পিঠা। ক্রেতারা যে পদের পিঠা পছন্দ করেন, যে পিঠার অর্ডার করেন, সে পিঠাই তৈরি করে দেন তিনি। অর্ডার পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাঁচালাম ও উপকরণ কিনে পিঠা তৈরি করেন তিনি। ফলে তাঁর তৈরি করা পিঠা  সতেজ থাকে। নিজের হাতে তৈরি করার কারণে পিঠার স্বাদ ভালো হয়। 

 সতিন মোচড়,  হৃদয় হরণ, ফুলঝুরি, মুগপাক্কন, বউ পিঠা, মাছ পিঠা, ভাঁপা, পুলি, নকশি পিঠাসহ প্রায় ১০০ পদের পিঠা তিনি তৈরি করেছেন তিনি। এসব পিঠার রেসিপি তাঁর নিজের নয়। বাংলার আবহমান সংস্কৃতি থেকে তিনি সংগ্রহ করেছেন পিঠার অনেক রেসিপি। পিঠার স্বাদ রাখার চেষ্টা করেছেন আগের মতই আসল। ছোট বেলায় তিনি যেসব পিঠা খেতেন, তাঁর মুখে যে সব পিঠার স্বাদ লেগে আছে, তিনি মুরুব্বিদের কাছে শুনেছেন যেসব পিঠা ও পিঠার স্বাদ সম্পর্কে, তাঁর গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে ঐতিহ্যবাহী যত পিঠা ছিল বা আছে এবং বিভিন্ন বই পড়ে পিঠার যত নতুন রেসিপি তিনি পেয়েছেন, সব পিঠা তৈরি করে নিজে পিঠার স্বাদ চেখে দেখেছেন। নিজের কাছে যদি পিঠার স্বাদ ভালো লাগে, তাহলেই তা ক্রেতাদের জন্য নির্বাচন করেন। পিঠার বিস্তারিত লিখে ফেসবুক পোস্ট করেন। এভাবেই বাড়তে থাকে পিঠা রানির তৈরি করা পিঠার ক্রয়াদেশ।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি প্রায় ৮০ টির মতো পিঠার ডালা সাজিয়েছেন। বিয়ে উপলক্ষে এসব পিঠার ডালা সাজানোর কাজ তিনি পেয়েছেন। প্রতিদিন বাড়ছে তাঁর পিঠার চাহিদা। সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ক্রেতা আছেন,  যারা নিয়মিত পিঠে কেনেন পিঠা রানি জান্নাতুল ফেরদৌস এর কাছ থেকে। আপনারা যদি পিঠা রানি জান্নাতুল ফেরদৌস এর পিঠা সংগ্রহ করতে আগ্রহী হন, তাহলে উই গ্রুপে তাঁকে পাবেন। তাঁর নিজের ফেসবুক পেইজেও অর্ডার করতে পারবেন।


আরও পড়ুন