জীবনের গল্প ছোট করে অল্প

news paper

এনায়েত রসুল

প্রকাশিত: ২৭-১২-২০২২ দুপুর ১২:১০

9Views

আমার আব্বা  শিশুসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলী প্রতি সপ্তাহে  বাসায় সাহিত্য আসরের আয়োজন করতেন। এ সুবাদে বাসায় কবি-সাহিত্যিক আর শিল্পীদের মিলনমেলা বসতো।  নিয়মিত যাঁরা আসতেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কবি গোলাম মোস্তফা, গীতিসম্রাট আব্বাসউদ্দীন, কবি আহসান হাবীব, পল্লীকবি জসীমউদদীন, কবি মঈনউদ্দীন, কবি ফররুখ আহমদ, কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েনউদ্দিন, অংকন শিল্পী কাজী আবুল কাসেম, তাঁর বড়ভাই  কাজী আবুল হোসেন, সাহিত্যিক আতোয়ার রহমান, অধ্যাপক নুরুল মোমেন, শিশুসাহিত্যিক হাবিবুর রহমান, কথাসাহিত্যিক মহীউদ্দীন, সাহিত্যিক আলাউদ্দীন আল আজাদ, অধ্যাপক গোলাম সাকলায়েন সহ আরো অনেকে। কখনো কখনো ভারত থেকে আসতেন মনোজ বসু, অবিনাশ সাহা। তাঁদের নিয়ে অনেক স্মৃতি রয়েছে আমার ভাই-বোনদের মনে। যা ফেসবুকের সীমাবদ্ধ পাতায় লিখে যাওয়া সম্ভব নয়। তবুও মাঝেমধ্যে দু-একটি লিখতে চেষ্টা করবো। 
 
বিখ্যাতজনদের চোখের সামনে দেখে দেখে আমার ভেতর অটোগ্রাফ নেয়ার শখ হয়। তাঁদের অটোগ্রাফ রাখার জন্য  লাল, নীল, হলুদ-সবুজ কাগজ মিলিয়ে আমি একটি খাতাও বাঁধিয়ে নিই। সেই অমূল্য খাতাটি বৃষ্টির পানিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে অটোগ্রাফ খাতায় দু-একজনের লিখে দেয়া কথা আমার অন্য নোটবুকে তোলা ছিল, যা আমাকে সমৃদ্ধ করে রেখেছে। সেখান থেকে একটি স্মৃতি: কবি আহসান হাবীবেব সাথে আব্বার আপন ভাইয়ের মতো স্নেহ-ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। আমরা তাঁকে হাবীব কাকু বলে ডাকতাম। একদিন বিকেলে বাসায় সাহিত্য আসর বসবে। দুপুরেই হঠাৎ আহসান হাবীব কাকু বাসায় এসে হাজির। মা তখন রান্না করছিলেন। হাবীব কাকু মাকে বললেন, ভাবী উঠুন। আমি আজ খিচুড়ি রাঁধবো। 
 
মা বললেন, কিন্তু ভাই আমি তো ভাত রেঁধে ফেলেছি।হাবিব কাকু বললেন, ভাত রেখে দিন, রাতে খাবেন। আপনি হেল্প করুন আমি খিচুড়ি রান্না করি। এ সময় আমি ছুটে গিয়ে অটোগ্রাফ খাতা নিয়ে এসে  আমাকে অটোগ্রাফ দেয়ার জন্য বলি। হাবীব কাকু প্রথম খাতাটি নিয়ে দেখেন কার কার ফটোগ্রাফ  নিয়েছি। তারপর খসখস করে  লিখে দেন :"যোগ্যতা অর্জনের প্রতিযোগিতায় যোগ্য পিতাকে হারিয়ে দিলেও পিতার অসম্মান হয় না-- সম্মান বাড়ে।"এটা ১৯৬৮ সালে হাবীব কাকু লিখেছিলেন। আমার সেই  অমূল্য সম্পদ বৃষ্টিধোয়া হয়ে মুছে গেছে। তবে নোটবইটিতে রয়েছে।

আরও পড়ুন