মাদারীপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সওজ বিভাগের সরকারি জমি দখল করে বহুতল ভবন ও মার্কেট

news paper

আরাফাত হাসান, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ৫-১২-২০২২ দুপুর ১২:৪৬

27Views

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রায় ৪০ শতাংশ জমি বেদখলে চলে গেছে। সম্প্রতি সময়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারি এই দুই বিভাগের জমি দখলে নিয়ে একাধিক স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে একটি চার তলা ভবন বিশিষ্ট বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, একটি দোতলা চক্ষু হাসপাতালসহ তিনটি টিনসেড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও একাধিক ওষুধের দোকান রয়েছে।
কালিকিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নামে দুটি মৌজায় ৬ একর ৯৬ শতাংশ জমি রেকর্ড রয়েছে। এর মধ্যে ৭৯ নং পাঙ্গাশিয়া মৌজায় বিআরএস রেকর্ড অনুযায়ী মোট জমির পরিমান ছিল ১ একর ৩৭ শতাংশ এবং ঝাউতলা মৌজায় ৯টি দাগে ৫ একর ৮৩ শতাংশ জমি রেকর্ড রয়েছে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। এই জমির প্রায় ৪০ শতাংশ জমি দখলে নিয়ে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওলাদার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কালকিনি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল, শেখ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা ওরাল এন্ড ডেন্টাল কেয়ার, মিথুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জমি ছাড়াও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ফুটপাতও দখল নিয়েছে এসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালকিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক খোকন হাওলাদারের পাঙ্গাসিয়া মৌজার এক শতাংশের কম জমির মালিকানা রয়েছে। অথচ তিনি হাসপাতালের প্রায় ৫ শতাংশ জমি দখলে নিয়ে চার তলা একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। এই ভবনে তিনি হাওলাদার ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি হাসপাতালের লাইসেন্স নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছেন। হাওলাদার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাশেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রায় ৬ শতাংশ জমি দখলে নিয়ে দোতালা একটি ভবনে কালকিনি ইসলামি চক্ষু হাসপাতাল। এটি মালিক বাচ্চু হাওলাদার। তার নামে এক শতাংশের কম জমি রেকর্ড রয়েছে। অথচ তিনিও সরকারি জমিতে স্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করে ব্যবসা শুরু করেছেন। সরকারি জমিতে একই ভাবে শেখ মঞ্জুরুল ইসলামের মালিকানাধীন শেখ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চাঁন মিয়া হাওলাদারের মিথুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও জসিম শিকদারের মালিকানাধীন সেবা ওরাল এন্ড ডেন্টাল কেয়ার নামে প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে তারা ব্যবসা শুরু করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্ধারিত সীমানা প্রাচীর নেই। প্রধান ফটকের দুপাশেই গড়ে উঠেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা। এসব স্থাপনায় ব্যক্তিমালিকানা ১টি হাসপাতাল ও ৪টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। হাসপাতাল ছাড়াও অন্তত ১০টি ওষুধের দোকান, খাবার হোটেল, মুদি দোকান রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জমিতে। 
এদিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য একাধিকবার স্থানীয়রা অভিযোগ জানালেও প্রশাসনের পক্ষ সারা নেই বলে জানালেন কালকিনি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের এক ফোটা জমি খালি নাই। সব দখলে নিয়ে যে যার মত ব্যবসা শুরু করেছে। কেউ ফার্মেসী, কেউবা ডায়াগনিস্টিক সেন্টার বা হাসপাতাল দিয়ে বসেছে। এসব ক্লিনিকগুলোর কারণে রোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে গিয়েও সমস্যায় পড়েন। এসব অবৈধ স্থাপনা অচিরেই উচ্ছেদ না হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ ও চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবে।’
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে খোকন হাওলাদার বলেন, ‘ওই মৌজায় আমাদের জমি ছিল বিধায় প্লান পাস করিয়ে ভবন করেছি। এখানে হাসপাতালের জমি থাকলেও সেটা আমি দখল করি নাই। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক কারণে উঠেছে, যা সত্য নয়। এখানে বোঝার ভুল আছে।’ আরেক দখলদার বাচ্চু হাওলাদার বলেন, ‘সরকারি জমি থাকলে সরকার আগেই দখলে যেত। আমার সব কাগজপত্র ঠিক আছে।’
জানতে চাইলে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউনও) পিংকি সাহা বলেন, ‘কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৪০ শতাংশের বেশি জমি বেদখলে চলে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু জমিটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে। তাদের জমির সার্ভে ও দখলদার বিষয়ে আমরা একটি আবেদন দিতে বলেছি। তারা আবেদন দিলেই আমরা সার্ভে করে দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযানে যাবো।’
কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সকালের সময়কে এস কে এম শিবলী রহমান বলেন, ‘আমাদের জমির সীমানা নির্ধারণ নেই। এ বিষয় আমাদের ইউএনও ও এসিল্যান্ডের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। এখানে একটি সার্ভে হবে। পরে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের তালিকা করে ইউএনওকে পাঠানো হবে।

আরও পড়ুন