তিন প্রতারকের প্রতারনার কারণে প্রবাসিরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী না

news paper

আব্দুল লতিফ রানা

প্রকাশিত: ৩-১২-২০২২ রাত ৮:৩৫

10Views

প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে দেশের প্রধানমন্ত্রী বার বার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু প্রতারণা ও জালিয়াত চক্রের কারণে বৃটিশরা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। বৃটিশ বাংলাদেশি প্রবাসীরা এসব অভিযোগ করছেন। জানা গেছে, বৃটিশ প্রবাসীদের মধ্যে ১২০ জন বাংলাদেশিকে মিথ্যা মামলায় জেল-জুলুমসহ হয়রানীকারক মুসলেহ আহমেদের প্রতারণা ফাঁস হয়েছে। মুসলেহ আহমেদের বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (চেম্বারের) ডাইরেক্টরশীপ যে ভুয়া-তা উক্ত প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ড. ওয়ালি তসর উদ্দিন এমবিই’র তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে।

মুসলেহ আহমেদের প্রতারণা ও মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার হয়েছেন বৃটিশ নাগরিক এম মোহিদ আলী মিঠু। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৭টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। সেসব মামলার কোনো বাদি না থাকার পরেও আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা করেন কীভাবে। এই মিথ্যা মামলার কারণে এম মোহিদ আলী মিঠু ৫০ দিন কারাগারে ছিলেন। এজন্য তার রাজনৈতিক সামাজিক অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে মানসম্মানের হানি হয়েছে। বিষয়টি পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে বিভাগীয় তদন্ত হয়। উক্ত তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, ঢাকা রিজেন্সির সাবেক চেয়ারম্যান মোসলেহ উদ্দিনের নির্দেশে ওই সব মিথ্যা মামলা দায়ের ও পরিচালনা করা হয়েছে। পুলিশের তদন্তে উল্লেখযোগ্য তিনটি নাম এসেছে তারা হলেন- মোসলেহ আমহেদ, আরিফ মোতাহার ও নাঈম মর্তুজা। এই দুইজনের প্রত্যক্ষভাবে মিথ্যা ও পুলিশকে প্রভাবিত করেছেন। মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ও কতিপয় জালিয়াতি চক্রান্তের সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত হলেও এম মোহিদ আলী মিঠুকে ৫০দিন জেল খাটানো ও মিথ্যা মামলায় হয়রানীর বিচার পাচ্ছেন না তিনি। এম মোহিদ আলী মিঠু বর্তমান ক্ষমতাসীন দল যুক্তরাজ্য শেফিল্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকা সত্বেও তিনি ন্যায় বিচার পাচ্ছে না। তাহলে সাধারণ প্রবাসীরা কীভাবে বিনিয়োগ করবেন। এম মোহিদ আলী মিঠু প্রধানমন্ত্রীর কাছের মানুষ। যে ব্যক্তি ওয়ান এলিভেনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে কারাগার থেকে নিঃশর্তে মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের বিশ^স্ত কাছের মানুষ হয়ে বাংলাদেশে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। তাহলে অন্য প্রবাসীরা কীভাবে ন্যায় বিচার পাবেন। আর তারা কেনই বা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন। এ ব্যাপারে সবসময় বাংলাদেশ দূতাবাসের হাই কমিশনার (লন্ডনে) অবগত করা হয়েছে। তারপরও হাই কমিশনার থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বৃটিশ বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ (বিবিসিসিআই) প্রেসিডেন্টকে জানানো হলেও তারাও প্রতারকদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উল্টো প্রবাসীদের টাকা আত্মসাতকারী প্রতারকদের সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন এম মোহিদ আলী মিঠু।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রতারক ও জালিয়াতচক্রের নায়ক মোসলেহ আহমদের বিরুদ্ধে তার ডাইরেক্টরশীপের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ চেম্বারের এম মোহিদ আলী মিঠুসহ অন্যান্য শেয়ার হোল্ডারগণ লিখিত অভিযোগ করেন। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে চেম্বারের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রেনু বোর্ডের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তের জন্য ওয়ালি তসর উদ্দিনকে লিখিতভাবে দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি মোসলেহ আহমদের ডাইরেক্টর হওয়ার প্রক্রিয়াটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত ও বিশ্লেষণপূর্বক প্রতিবেদন প্রদান করেছেন। 

অভিযোগের তদন্তকালে মোসলেহ আহমদের সহযোগিতা চাওয়া হলেও তিনি কোনো সহযোগিতা করেননি। আর সবসময় উল্টো তদন্তকারীর কাছে জানতে চেয়েছেন, তিনি তদন্ত করার কে? বাংলাদেশে মুসলেহ আহমেদের অবৈধ ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়ে মানুষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদনটি তৈরী করা হয়েছে। বিবিসিসিআই-এর সভাপতির দেয়া দায়িত্ব হিসেবে অভিযোগগুলো তদন্ত করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য এবং তার পরামর্শ মতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। চলতি বছরের গত ৫ই অক্টোবর তাকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর তিনি বিবিসিসিআই দপ্তরে মোসলেহ আহমেদের সঙ্গে উক্ত সংগঠনের অতীত সম্পর্কের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। কিন্তু তিনি কখনো বিবিসিসিআই এর সদস্য ছিলেন-এমন কোনো প্রমাণ পাননি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে তিনি একটি ডাইরেক্টর অ্যাপেয়ন্টমেন্ট ফর্ম পেয়েছেন। তদন্তকারীকে জানানো হয়েছে, এই ফর্মটি বিবিসিসিআই যে ফর্ম ব্যবহার করে সেই কাঠামোতে তৈরি করা হয়নি। আর তার পাওয়া ফর্মটি মুসলেহ আহমেদ কর্তৃক পূরণ ও স্বাক্ষর করা রয়েছে। উক্ত ফর্মটি হালনাগাদ করা হয়। তবে তিনি কবে থেকে সদস্য হন বা তার সদস্যপদ কে প্রস্তাব করেন এবং কে সমর্থন করেছেন, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য উক্ত ফর্মে উল্লেখ করা হয়নি। তবে ওই ফর্মে লেখা এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, পরিচালকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফি হিসেবে পাঁচ হাজার পাউন্ডের একটি চেক এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। যদিও মুসলেহ আহমেদের ওই চেক কেউ গ্রহণ করেছে কিনা, সে ব্যাপারে কারো কাছে কোনো তথ্য নেই বা কোনো রেকর্ডও তদন্তকারী পাননি। 

তদন্তকারীর ব্যাপক অনুসন্ধানের পর সংগঠনটির দপ্তর হতে জানতে পেরেছেন যে, ২০১৯ সালের ১৪মে অনলাইনে ৫ হাজার পাউন্ডের একটি পেমেন্ট বিবিসিসিআইর একাউন্টে ট্রান্সফার হয়। জেএমএস হোমস (ইউকে) লিমিটেডের মাধ্যমে এই অর্থ পাঠান মুসলেহ আহমেদ। অনেকদিন পার হয়ে যাওয়ায় এই পেমেন্টের কথা কারো মনে ছিল না।   

সূত্র জানায়, উল্লেখিত বিষয়টি নিয়ে তদন্তকারী দুইজন সাবেক সভাপতি এস বি ফারুক ও বশির আহমেদ এর সঙ্গে কথা বলেন। উক্ত সংগঠনের সিনিয়র উপদেষ্টা আহমদ উস সামাদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জাল-জালিয়াতির বিষয়টি তাকে জানানোর পর তিনি তদন্তকারীকে বিবিসিসিআইয়ের সাতজন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এরপর তিনি সভাপতি ও মহাপরিচালকের সঙ্গেও কথা বলেন। গত ১০অক্টোবর তদন্তকারী এক জুম মিটিংয়ের আয়োজন করেন। বিষয়টি আগেই সকলকে এ সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র প্রেরণ করে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। 


আরও পড়ুন