৩য় বারের মতন পেছাল ১৪৫ তম রাজপূণ্যাহ’ মেলা
প্রকাশিত: ২৫-১১-২০২২ দুপুর ২:১০
পার্বত্য জেলার বান্দরবান। এই জেলায় প্রতিবছর শেষ মূহুর্তের শুরু হয় সকল সম্প্রদায়ের একটি মিলন মেলা। সে ঐতিহ্যবাহী রাজকর আদায়ের মিলন উৎসবের নাম রাজ পূণ্যাহ মেলা। এই মেলায় পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ জড়ো হয়ে মিলন মেলা রুপে প্রতিফলিত হয়। সেই মেলা এখন বিলুপ্তির পথে।
জানা গেছে, নতুন বছর শুরুতেই মেলাকে ঘিরে পার্বত্য জেলার ১১টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য মন্ডিত মনোজ্ঞ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ সময় পাহাড়ী- বাঙ্গালীদের মিলন মেলা পরিণত হয়। পর্যটকসহ দেশি- বিদেশী লক্ষাধিক মানুষ ভীর জমায় পর্যটন শহর বান্দরবানে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রবীণ নেতা হিসাবে বোমাং রাজার আর্শিবাদ পাওয়ার জন্য তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম পাহাড়ী এলাকা থেকে পাহাড়ীরা রাজ দরবারে এসে ভীর জমান।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, এইদিনে ভোর সকালে বছরের নতুন ফলমুল- তরতাজা শাকসবজি, চাউল ও পশুপাখিসহ সর্বসাধারণ পণ্য নিয়ে হাজির হন রাজা দরবারে। এবং সেটি রাজাকে উদ্দেশ্যে উৎসর্গ দিতে অপেক্ষা প্রহর গুণতে থাকেন প্রজারা। রাজা নিজ প্রসাদ থেকে বের হলে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী বাজনার ঢোল। থাকেন রাজার সেনাপতি ও। প্রাসাদ থেকে বের হয়ে রাজার মাঠের সিংহাসনের দিকে এগোতে থাকে ঠিক তখনই প্রজারা নতুন বছরের পণ্যের ফল-মুলসহ নানান আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র দান করতে থাকেন। পরে নিজ সিংহাসনের গ্রহনের পর প্রজাদের উদ্দ্যেশে ভাষণ দেন বোমাং রাজা। পরে জমকালো আয়োজনের শুরু হয় তিনদিনব্যাপী রাজপূণ্যা মেলা।
রাজার দেওয়ার তথ্যে মতে, বৃটিশ শাসন আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি ৩ জেলাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে খাজনা আদায় করা হতো। ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত চাকমা রাজা পার্বত্য এলাকা শাসন করতো। ১৮৬৭ সালে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ অঞ্চলের মারমা অধ্যুষিত এলাকাকে বোমাং সার্কেল, ১৮৭০ সালে রামগড় ও মাইনি উপত্যকার এলাকাকে নিয়ে মং সার্কেল গঠিত হয়।
আরো জানা গেছে, বর্তমানে রাঙ্গামাটিকে চাকমা সার্কেল, বান্দরবানকে বোমাং সার্কেল এবং খাগড়াছড়িকে মং সার্কেল হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রায় ১৭৬৪ বর্গমাইল এলাকার বান্দরবানের ৯৫টি, রাঙামাটির রাজস্থলি ও কাপ্তাই উপজেলার ১৪টি মৌজা নিয়ে বান্দরবান বোমাং সার্কেল। দুইশত বছরের ঐতিহ্য অনুসারে বছরে একবার এই মেলা আয়োজন করা হয় বোমাং সার্কেলের পক্ষ থেকে।
তবে প্রতিবছর ডিসেম্বরে আয়োজন করা হলেও টানা ৩য় বারের মতো এ বছরও ১৪৫ তম রাজপূণ্যাহ’র আয়োজন হবেনা বলে জানিয়েছে রাজ পরিবার।
বোমাং রাজ পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান শহরের স্থানীয় রাজার মাঠে প্রতিবছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ৩ দিনব্যাপি রাজ মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু গত দুই বছর করোনা সংক্রামন আর এবার বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযান ও অস্থিতিশীল আইনশৃংখলা পরিস্থিতির কারনে এবারও রাজপূণ্যাহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোমাং রাজা।
বান্দরবান শহরের বাসিন্দা ক্যসিংনু মারমা বলেন, টানা তিন বছর রাজপূণ্যার আয়োজন না করার কারনে জেলার মানুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন ভুলতে বসেছে। এই ঐতিহ্য সবার ধরে রাখা উচিত।
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী শৈখ্যানু মারমা বলেন, রাজপূণ্যা মেলা আমাদের পাহাড়ের ঐতিহ্য সংস্কৃতি। সেই সংস্কৃতির আজ বিলুপ্তির হতে বসেছে। এই সংস্কৃতির হারিয়ে গেলে আগামী প্রজন্মের সেটি আর উঠে আসবে নাহ।
রাজার মাঠে অবস্থিত জুসবার মালিক শিমুল দাশ বলেন, ছোট বেলার থেকে রাজপূণ্যা মেলায় ঘুরতাম বাবার হাত ধরে। প্রচুর মানুষ সমাগম হত মেলায়। আর এখন সে মেলা দিন দিন হারাতে বসেছে। সেই সংস্কৃতিকে তুলে আনা দরকার।
বান্দরবানের বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরী’র সহকারী সচিব অং জাই খ্যায়াং বলেন, যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযান, জেলার আঅস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে মেলার আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বোমাং রাজা মহোদয়। আগামী বছরের হবে কিনা সেই ব্যাপারেও সুদুত্তর মেলেনি।