সাটুরিয়ায় প্রবেশপত্র আটকিয়ে জরিমানা আদায়ের অভিযোগ

news paper

হৃদয় মাহমুদ রানা, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৪-১১-২০২২ রাত ৯:৩০

36Views

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি ইউনিয়নের চরতিল্লি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রবেশপত্র আটকিয়ে  জরিমানার নামে তাদের কাছে থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে । শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ জরিমানার টাকা জমা না দিলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে না বলেও হুমকি দিয়েছেন ওই প্রধান শিক্ষক । 
 
স্থানীয় ও স্কুল সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৭ নভেম্বর রোববার থেকে সাটুরিয়া উপজেলার সকল মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ন্যায় এই বিদ্যালয়েও শুরু  হবে বার্ষিক পরীক্ষা । অত্র  বিদ্যালয়ের ৬৬০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। বছর জুড়ে  অনেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এই অজুহাতে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ দেওয়ার জন্য অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বেতন পরিশোধ করতে আসলে তাদের বেতনের সাথে জরিমানার টাকা  গুনতে হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের এই সিদ্ধান্তের কারণে অনেক হতহদরিদ্র শিক্ষার্থীরা বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে জানা গেছে।
 
 একজন ছাত্র বা ছাত্রী একদিন স্কুলে উপস্থিত না থাকলে তাকে ৫০ টাকা জরিমানা গুনতে হবে। এ সিদ্ধান্ত স্কুল ম্যানেজিং কমিটির বোর্ড সভায় রেজুলেশন করে পাশ করেছেন। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে জরিমানার টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আওয়াল। 
 
নবম শ্রেণির ছাত্র হাফিজুর ইসলাম জানায়, চলতি বছরে তার জরিমানা হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ টাকা। নবম শ্রেণির ছাত্র রিফাতের জরিমানা হয়েছে ৩ হাজার ৫ শত টাকা। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ইউনুছ আলীর জরিমানা হয়েছে ৯ শত ৫০ টাকা। অষ্টম শ্রেণির শান্ত নামে শিক্ষার্থীর ৮০০ শত টাকা জরিমানা পরিশোধ করে পরীক্ষার  প্রবেশপত্র পেয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ফয়সাল ৪০০ টাকা জরিমানা দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার প্রবেশপত্র পেয়েছে। কিন্তু যে সমস্ত শিক্ষার্থীর ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার অধিক জরিমানা হয়েছে, যারা জরিমানা দিতে পারেনি। তাই তাদেরকে পরিক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবেনা স্কুল থেকে। এ বিষয় নিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিবাবকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা।
 
সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি ইউনিয়ন নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা মানুষ। এই ইউনিয়নকে কালিগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদী  তিনভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। এই ইউনিয়নের বেশীরভাগ মানুষই দরিদ্র। বাবা মার সাথে শিক্ষার্থীরাও কাজ করে থাকে। এ কারণে তাদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকতে হয় বলে এমনটাই জানালেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা।
 
চরতিল্লি আদর্শ  উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আউয়াল জানান, অত্র বিদ্যালয়ে ৬৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে ১৫০ থেকে ২০০ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটির বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যেসব শিক্ষার্থী একদিন অনুপস্থিত তাদের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা করে জরিমানা দিয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এই জরিমানার নেওয়ার উদ্দ্যেশ্য হলো বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বাড়ানো বলেও জানান তিনি।
 
এ ব্যাপারে চরতিল্লি আদর্শ  উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও দিল্লি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান  মো. শরিফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একদিন অনুপস্থিত থাকলে ৫০ টাকা জরিমানা নেওয়া হবে এমন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য কিছু কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
 
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  ইউএনও শারমিন আরা বলেন, চরতিল্লি আদর্শ  উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জরিমানার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন