ঔষধ বিক্রেতা সর্বরোগের বিশেষজ্ঞ

চাঁদপুরে ফার্মেসী দিয়ে খুলেছেন মিনি হাসপাতাল

news paper

চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৪-১১-২০২২ দুপুর ৩:৩৭

12Views

চাঁদপুর হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা বাজারের হক ফার্মেসী দিয়েই ঔষধ ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন দেখছেন সব ধরনের রোগী। শিশু,বৃদ্ধ ও গর্ভবতীসহ বিভিন্ন বয়সের রোগীরা এসেছেন তার কাছে।২২ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোগীরা সারিবদ্ধ চেয়ারে বসে ডাক্তার সাহেবের সিরিয়াল পাবার অপেক্ষা করছেন। সামনে কাউন্টারের ভেতরে বসে মাধ্যবয়সী একজন পুরুষ রোগীর, জ্বর, প্রেসার, শ্বাসপ্রশ্বাস মেপে দেখছেন। এসব রোগীদের মধ্য গর্ভবতী মহিলাও রয়েছেন। ডাক্তার সাহেব রোগীর চোখ-মুখ পরিক্ষা করে প্রেসক্রিপশন লিখে ঔষধ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ডাক্তার সাহেবের সিরিয়াল পেতে আমাদেরও বেশ সময় অপেক্ষা করতে হলো। এরমধ্যে হঠাৎ চোখ পড়ে ফার্মেসীর ভেতরে থাকা একটি গোপন দরোজার দিকে। পাশে বসা একজন রোগী জানান, দরোজার ওপাশে রয়েছে তিন শয্যার একটি মিনি হাসপাতাল। যেখানে গর্ভবতীসব নারী রোগীদের আলাদা চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।

এ বিষয়ে প্রতিবেদকের কথা হয়, কথিত সর্বরোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ঔষধ ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেনের সাথে। প্রথমেই স্বীকার করেন, তিনি কোন এমবিবিএস ডিগ্রীধার চিকিৎসক নন। উল্লেখযোগ্য তেমন কোন চিকিৎসা সনদও নেই তার। তবে নিজেকে চাঁদপুরের কোন এক প্রতিষ্ঠান থেকে বিএমএস সনদধারী চিকিৎসক বলে দাবী করেন। আর এ সনদ দিয়েই বিশাল ফার্মেসী খুলে খুলে দিচ্ছেন সর্বরোগের চিকিৎসা। নিজের নামে ছাপানো প্রেসক্রিপশনে লিখছেন হায়ার অ্যান্টি-বায়োটি মেডিসিনও।

বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাজীগঞ্জ বাকিলা বাজারের ঔষদ ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন এখন ওই ওলাকার অনেক বড় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। নিজেকে সর্বরোগের বিশেষজ্ঞ দাবী করে চিকিৎসা বানিজ্যের রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। নিজের মালিকানাধীন বহুতল ভবনে খুলেছেন বিশাল ঔষদের দোকান। যেখানে দালাল মাধ্যমে প্রতিদিন শত শত রোগী আসছে। যাদের কাছ থেকে তিনি ভিজেট, ঔষদ বিক্রি এবং অপ্রয়োজনীয় পরিক্ষা-নিরিক্ষার কমিশনসহ তিন ধাপে টাকা আদায় করছেন।

এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় আগত বেশ ক'জন রোগীর সাথে। তারা জানান, যে কোন অসুখ হলেই তারা মুনির ডাক্তারের ওষুধের দোকান-কাম চেম্বারে চলে আসেন। মুনির ডাক্তারকে মেডিসিন, শিশু, গাইনী, চর্ম-যৌন, নাক-কান-গলাসহ সকল রোগের বিশেষজ্ঞ বলে জানেন তারা। পরিক্ষা-নিরিক্ষার প্রয়োজন হলে কথিত এ ডাক্তারের দেয়া টোকেন বা ছোট্ট কাগজ নিয়ে যেতে হয় তার নির্ধারিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। আশপাশে ভালো কোন চিকিৎসক কিংবা হাসপাতাল না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা মুনির ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেন জানান তারা।

এ বিষয়ে হক ফার্মেসীর মালিক ও কথিত সর্বরোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. মনির হোসেন বলেন, ডিএমএস ডিগ্রিধারী পল্লী চিকিৎসকরা সকল লোকের চিকিৎসা দিতে পারেন এবং প্রেসক্রিপশন লিখে অ্যান্টি-বায়োটি মেডিসিনও দিতে পারেন। ডিএমএস ডিগ্রিধারীরা চিকিৎসা দিতে পারবে না, কিংবা প্রেসক্রিপশন লিখে ঔষধ দিতে পারবে না, এমন কোন সরকার নীতিমালা নেই।

এক পর্যায়ে এ বিষয়ে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, আমি হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং সিভিল সার্জনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের অনেক বড় বড় কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেছি। এ বিষয়ে তারাও সরকারি কোন নীতিমালা দেখাতে পারেনি। ডিএমএম ডিগ্রি দিয়েই তিনি নিজেকে চিকিৎসক এবং সর্বরোগের চিকিৎসা দেওয়ার রাইট আছে দাবি করে বলেন, আপনারা পেপারে লেখেন, টিভিতে দেখান, এতে আমার কিছুই হবে না।'

সচেতন মহল বলছেন, এসকল বিষয়ে দেখবাল করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। অথচ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের যোগসাজশে  ফার্মেসিগুলোতে নামে বেনামে চেম্বার খুলে বসে প্রেস্ক্রিপশন করছে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে হাজিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ গোলাম মাওলা নঈম বলেন, কোন রেজিস্টার ডাক্তার ছাড়া অন্য কেউ কোন প্রকার প্রেসক্রিপশন লিখতে পারবে না। বর্তমানে কিছু কিছু জায়গায় দেখা যাচ্ছে ডিপ্লোমা দারি কিছু ফার্মাসিস্ট চেম্বার খুলে বসে রোগী দেখছেন এবং প্রেসক্রিপশন লিখছেন। যেটা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে উনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য প্রমাণ সহ অভিযোগ আসলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।

চাঁদপুর জেলা বিএম এ এর সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার মাহমুদুন্নবী মাসুম বলেন, এমবিবিএস ডাক্তার ছাড়া কেউ এ ধরনের প্রেসক্রিপশন লিখতে পারেনা। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কে সজাগ থাকতে হবে। যাতে করে সাধারণ মানুষ যেন কোন প্রকার হয়রানির শিকার না হয়।


আরও পড়ুন