ছেঁউড়িয়ায় লালন ভক্ত-অনুরাগীদের মিলনমেলা

news paper

লিপি আক্তার

প্রকাশিত: ১৭-১০-২০২২ দুপুর ৩:৩৮

10Views

লালন শাহ।  যিনি বাউল সম্রাট নামে সর্বজনবিদিত। তার অসংখ্য গান আজোও তার ভক্তকুলকে প্রচন্ডভাবে নাড়া দেয়।  তার গানের কথা, সুর ও গায়কী ঢং সারাবিশ্বের মানুষকে গভীরভাবে এক অনন্ত ভাবের জগতে নিয়ে যায়। তিনি শুধু গান রচনাই করেননি তাতে চমৎকার সুরও দিয়েছেন। তার গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিনি একজন সমাজ সংস্কারক ও দার্শনিক। তিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। তার লেখনি ও দর্শনতত্ব প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিকসহ অসংখ্য ছোট বড় সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে। আধ্যাত্মিক লালন শাহ কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় তার অনুসারী ভক্তদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন আখড়া। আজ ফকির লালন শাহের ১৩২তম তিরোধান দিবস। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে বাংলা ১২৯৭ সনের ১ কার্তিক মারা যান। তার জন্মতারিখ সম্পর্কে ধোঁয়াশা এখনো বিদ্যমান। একটা সময় থেকে তার তিরোধান দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর লালন মেলার আয়োজন শুরু করে লালন একাডেমি। আর এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। পরপর দুবছর করোনার কারণে এ মেলা বন্ধ থাকার পর এবছর পুনরায় শুরু হয়েছে মেলার আয়োজন। দূর-দূরান্ত থেকে দেশি-বিদেশি লালনভক্ত অনুসারী-অনুরাগীরা আখড়াবাড়ি ছেঁউড়িয়ায় আসতে শুরু করেছেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায় দর্শনাথীরা একে অপরের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা জড়ো হয়েছেন ছেঁউড়িয়ায়। কালি নদীর পাড় ঘেঁষে লালন মাঠে কয়েকশ অস্থায়ী থাকার জায়গা ও দোকান বসানো হয়েছে। এবার নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তার অনুসারীরা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। লালনভক্ত এক ব্যক্তি বলেন, আমি একজন লালন ভক্ত মানুষ। লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস উপলক্ষে আমি এখানে এসেছি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। মেলায় আসা আর একজন বলেন, লালনকে ভালোবাসি বলেই এতদূর থেকে ছুটে এসেছি। এখানে আমরা আমাদের মতো করে রান্নাবান্না করে খাওয়া-দাওয়া করছি। মেলা শেষ হলেই আমরা এখান থেকে চলে যাব। মেলায় দোকান করা কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ছয়-সাত দিন ধরে দেশ-বিদেশ থেকে লালন ভক্তরা এসে জড়ো হচ্ছেন। তারা লালন শাহের তিরোধান দিবস উপলক্ষে এখানে আসছেন। গত দুই বছর মেলা বন্ধ থাকার কারণে আমাদের বেচাকেনা তেমন ছিল না তবে এবার ভালো হচ্ছে।

এ বিষয়ে দৈনিক সকালের সময়’র সাথে কথা হয় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের। তিনি জানান, এবার ১৭, ১৮ ও ১৯ এই তিনদিনব্যাপী লালন একাডেমি চত্বরে মেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আইনশৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া আছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার সবরকম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মাজার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার বলেন, লালন মেলা উপলক্ষে মাজার প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মাজার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছে। 

লালন মেলায় তিন দিনব্যাপী আলোচনাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। অনুষ্ঠানে লালন একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পী ও ভক্তরা গাইবেন। এ উপলক্ষে মাজার প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে সুন্দর ও মনোরমভাবে সাজানো হয়েছে। 


আরও পড়ুন