পুজার ছুটিতে বন্ধ নোবিপ্রবির আবাসিক হল, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা 

news paper

ফাহাদ হোসেন, নোবিপ্রবি

প্রকাশিত: ৩-১০-২০২২ দুপুর ৪:৩৮

17Views

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পুজা এবং সাপ্তাহিক বন্ধ উপলক্ষে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ( নোবিপ্রবি) ছুটির সঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ৫ আবাসিক হল। এতে চরম ভোগান্তির শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. মুহাম্মদ আলমগীর সরকার স্বাক্ষরিত  বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২ অক্টোবর (রবিবার) হতে ৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত শ্রী শ্রী দূর্গাপূজা ও বিজয় দশমী এবং ৯ অক্টোবর (রবিবার) ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী-মিলাদুন্নবী (সাঃ) ও শ্রী শ্রী লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, উক্ত ছুটিতে কোন শিক্ষার্থী আবাসিক হল সমূহে অবস্থান করতে পারবে না এবং সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টবৃন্দ এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। 

পরবর্তীতে এই ছুটিতে হল বন্ধ সংক্রান্ত আলাদা নোটিশ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে বলে বিভিন্ন হল প্রশাসন। ২৮ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক উকিল হল প্রভোস্ট ড. মেহেদী হাসান রুবেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২ অক্টোবর (রবিবার) থেকে থেকে ৯ অক্টোবর (রবিবার) পর্যন্ত হল বন্ধ থাকবে। বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের ৩০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) সকাল ১১ ঘটিকার মধ্যে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সময়ে বন্ধ করে দেয়া হয় অন্য হল সমূহ এবং সব আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এভাবে প্রতিবার ছোট বড় সব বিভিন্ন ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির সাথে হল বন্ধ রাখার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, এর ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। করোনা পরবর্তীতে একই সাথে সেমিস্টার এবং চাকরীর পড়াশোনা চাপ রয়েছে। এরমধ্যে এইসব ছুটিতে হল বন্ধ করায় বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থী সহ দূর দূরান্তের শিক্ষার্থীদের। একদিকে পড়াশোনার ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে অধিকভাড়া বহন করে স্বল্প ছুটিতেও বাড়ি যেতে বাধ্য হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান,  করোনা পরবর্তী সময়গুলোতে সেমিষ্টার পরীক্ষা ও পড়াশোনার চাপ দুইটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি হলে থেকে এখন চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছি। এই ছুটিতে হল বন্ধ করে দেয়ায় এখন পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও যারা টিউশনি করে নিজেদের পড়াশোনা খরচ চালায়, ১০ দিনের টিউশনি বন্ধ দেওয়ায় আর্থিকভাবে সেসব শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী আবাসিক  শিক্ষার্থী বলেন, " হঠাৎ করে  হল বন্ধ ঘোষণা করায় বাধ্য হয়ে আমাকে আমার গ্রামের বাড়ি শেরপুরে চলে আসতে হয়েছে। অথচ আমাদের সামনের সেমিস্টারের পড়াশোনার চাপ রয়েছে এবং মাইজদীতে টিউশনি ছিলো তাকে এই সময়ের জন্য ছুটি দিয়ে আসতে হয়েছে। টিউশনিতে দীর্ঘছুটি দেয়াতে অভিভাবকদের সাথে মনোমালিন্য হয়। 

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন,  " বাংলাদেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম মাঝারি ছুটিতে হল বন্ধ ঘোষণা করা হয় নাহ। এমনকি ঈদের ছুটির সময়ও হলগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা থাকে। সেখানে নোবিপ্রবি প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পরিমাণকে বৃদ্ধি করেছে। ভবিষ্যতে যেনো এমন কোন সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয় যেখানে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বৃদ্ধি পায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের ছোট বড় বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব ছুটিতে হল খোলা রাখা হয়। এই পূজার ছুটিতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,  শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,  বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ( রংপুর) ,  হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ( দিনাজপুর) , বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ( ময়মনসিংহ) আবাসিক হল সমূহ খোলা রাখা হয়েছে। এছাড়াও ঈদের লম্বা ছুটির সময়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ  শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করেছে সব হল প্রশাসন। বিভিন্ন হলের প্রভোস্টবৃন্দ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং হল প্রশাসন সেটি বাস্তবায়ন করেছে। বঙ্গমাতা শেখ  ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট  ড. মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান বলেন,  " আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ছুটির নির্দেশনাকে অনুসরণ করে হল বন্ধের নোটিশ জারি করেছি৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, স্বল্প ছুটিতে দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি হয়। ভবিষ্যতে স্বল্প ছুটিতে হল খোলা রাখার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো। " 

ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের প্রভোস্ট ড. মোঃ আনিসুজ্জামান রিমন বলেন, "প্রশাসনের বিশ্ববিদ্যালয়  বন্ধের নোটিশের আলোকে আমরা হল বন্ধের নোটিশ দিয়েছি। তারপরও যে সকল শিক্ষার্থী বিভিন্ন অসুবিধায় হল ছাড়েনি তাদেরকে হলে থাকতে সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাই। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে স্বল্প মেয়াদি ছুটিতে হল খোলা রাখার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে খোলা রাখার চেষ্টা করবো। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট সহকারী অধ্যাপক মোঃ মাজনুর রহমান বলেন, " বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় শিক্ষার্থীবান্ধব। শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধাকে বিবেচনা করে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের অসুবিধার সৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিদের্শনা অনুযায়ী ভবিষ্যতে হল খোলা রাখা হবে।


আরও পড়ুন