ওজন কমায় ডিটক্স ওয়াটার

news paper

সকালের সময় ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩-১০-২০২২ দুপুর ১২:৮

4Views

শরীরের ওজন বেড়ে চলেছে তরতরিয়ে। যতই ভাবছেন ওজন সঠিক রাখবেন, ততই যেন দিনে দিনে ওজন বেড়ে চলেছে। শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেলে আমাদের চিন্তার শেষ থাকে না। ওজন বৃদ্ধি হওয়ার মূল কারণ আমাদের খাদ্যাভ্যাসের ওপরই অনেকটাই নির্ভর করে। চটজলদি খাবার কেক, প্যাটিস, বার্গার, পিৎজা, স্যান্ডউইচের চাহিদা বাড়ছে দিনদিন। 

সেই সঙ্গে অনেকেই ফলের বদলে কৃত্রিম ফ্রুট জুস খাচ্ছেন। বেড়েছে নরম পানীয়ের চাহিদাও। আর এই সব ঠান্ডা পানীয়, ফাস্ট ফুড, মাফিন-বার্গারের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ লুকনো চিনি, লবণ। যা অজান্তেই আমাদের প্রদাহ জনিত সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে শরীরে আসে অস্বস্তিও। শরীরে বিষের পরিমাণ বেড়ে যায়।

অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, শরীরচর্চার অভাব আর স্ট্রেসের ফলে শরীরের যে অঙ্গ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা হল লিভার। আর সুস্থ থাকার জন্য লিভার সুস্থ রাখাই সবচেয়ে জরুরি। তার ওপর শুরু হয়ে গিয়েছে পার্টি, বিয়ের মরসুম। তাই খাওয়া দাওয়া, মদ্যপান সবই চলবে লাগামছাড়া। এই সময় লিভার সুস্থ রাখার জন্য তাই প্রতি দিন খান এই লিভার ডিটক্স ওয়াটার বা ডিটক্স জুস।

ডিটক্স ওয়াটার বা ডিটক্স জুস স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে। অনিয়মিত জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাঝে নিজেকে প্রাণবন্ত রাখতে অনেকেরই প্রথম পছন্দ ডিটক্স ড্রিংকস। গরমে হাইড্রেটেড ও ফিট থাকতে বিভিন্ন ফল বা সবজি দিয়ে এটি নিজেই বানিয়ে নিন। এগুলো আমাদের শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে কাজ করে। এটি আমাদের শরীরকে ডিটক্সিফাই করে। সুস্থ ও ফিট থাকার জন্য ডিটক্স পানীয় একটি খুব সহজ এবং স্বাস্থ্যকর বিকল্প।

শরীরের ভেতরে থাকা সব দূষিত উপাদান বের করে দেওয়ার জন্যই ডিটক্স ওয়াটার এর ব্যবহার। কোনো ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া বানিয়ে নেওয়া যায় ডিটক্স ড্রিংকস। এক্ষেত্রে পানি, বিভিন্ন ধরনের ফল, পুদিনা পাতা, আদা এই ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়। তবে কিছুক্ষেত্রে সবজিও ব্যবহার করা হয়। এগুলোর বিভিন্ন ধরনের হেলথ বেনিফিটস আছে। এগুলো আমাদের পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখে। এটি ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ওজন দ্রুত কমে যায়। এতে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। এটি কিডনি এবং লিভার পরিষ্কার করে। এগুলো পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। এটি আপনাকে হাইড্রেটেড রাখে। এতে আপনার মেটাবলিজম দ্রুত কাজ করে।

আমাদের শরীর থেকে টক্সিন অপসারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া কারণ এটি মেটাবলিজম ঠিক রাখে, যার ফলে পেটের সমস্যা হয় না এবং এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। গরমে আপনি যদি নিজেকে ডিহাইড্রেটেড রাখতে চান এবং শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে চান তবে আপনি অনেক ধরনের ডিটক্স ওয়াটার অবলম্বন করতে পারেন।

সারাদিনে দুই লিটার ডিটক্স ওয়াটার পান করতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে খালি পেটে সাধারণ পানির পরিবর্তে ডিটক্স ওয়াটার পান করুন। সঙ্গে সঙ্গে শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। প্রতি এক ঘণ্টায় এক গ্লাস পানি পান করুন। আপনি চাইলে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ডিটক্স ওয়াটার তৈরি করতে পারেন। গরমে এই পানি আপনাকে ভিতর থেকে ঠান্ডা রাখে। প্রতিদিন সকালে তাজা পানি দিয়ে বয়ামটি পূরণ করতে এবং তাজা ফল এবং ভেষজ ব্যবহার করতে ভুলবেন না। এই ডিটক্স ওয়াটার শরীরের পিএইচ সিস্টেম ঠিক থাকে, হজমশক্তি ভালো থাকে।

লেবু ডিটক্স ওয়াটার

লেবু ডিটক্স ওয়াটার হজমশক্তি উন্নত করতে এবং ওজন কমানোর জন্য সেরা ঘরোয়া প্রতিকার। লেবু মানে ভিটামিন সি। লেবু ধুয়ে তিন থেকে চারটি পাতলা করে কেটে নিন। একটি কাচের পাত্রে পরিষ্কার জল ভরে তাতে এই টুকরোগুলি মিশিয়ে নিন। লেবুর টুকরো সহ দুই-তিনটি পুদিনা পাতা দিন। সারাদিন ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে এই জল পান করুন। এটি শরীরকে হালকা করে, ভিটামিন সি-এর ঘাটতি দূর করে, ডায়েট করতে সাহায্য করে, ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

আপেল ডিটক্স ওয়াটার

আপেল ডিটক্স ওয়াটারকে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী বলে মনে করা হয় কারণ এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করে। এ জন্য আপেল টুকরো করে কেটে জলতে দিন। তারপর এতে লেবুর রস ও দারুচিনি মেশান।

শসা ডিটক্স ওয়াটার

শসার ডিটক্স ওয়াটারে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি পাওয়া যায়। এটি প্রস্তুত করতে, এক গ্লাস জলে কিছু শসার টুকরো রাখুন, এবার লেবুর রস, কালো লবণ এবং কিছু পুদিনা পাতা যোগ করুন, একটি চামচ দিয়ে মিশিয়ে পান করুন।

কমলা ডিটক্স ওয়াটার

কমলার ডিটক্স ওয়াটারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এটি শরীরের চর্বিকে শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে, তাই এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং ওজন কমায়।

দারুচিনি ডিটক্স ওয়াটার

ডায়েটিশিয়ানরাও ডিটক্স ওয়াটারে এক টুকরো দারুচিনি যোগ করার পরামর্শ দেন। দারুচিনি ও আদার ডিটক্স ওয়াটার শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখে, প্রদাহ দূর করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও দারুচিনি রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে।

পানি বা জুস পান করার সঙ্গে ডাবের পানি পান করাটা খুব জরুরি। এতে শরীর ঠাণ্ডা থাকবে। ব্রাউন ব্রেড, হোয়াইট পাস্তা, টক দই এগুলোও রাখবেন ডায়েটে। এগুলো হালকা খাবার কিন্তু পেট ভালো থাকে ও মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা থাকে। ডিটক্স ওয়াটার ডায়েটে শুধুই যে দ্রুত ওজন কমবে সেটাই না। পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। ইম্যুনোটি শক্তি বৃদ্ধি পায়। স্ট্রেস কমে যায় বলে রাতে বিনা বাধায় ভালো ঘুম হয়। আবার সারাদিন ছোটাছুটি করার শক্তি পাওয়া যায় ডিটক্স ওয়াটার ডায়েটে। তবে শক্তি আনতে এই ডায়েট করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।


আরও পড়ুন