হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি

গাজীপুরে গণপরিবহন সংকটে যাত্রীদের ভোগান্তি, গার্মেন্টসে চাকরিরত শ্রমিকদের ক্ষোভ

news paper

নাঈম মেহেদী, শ্রীপুর (গাজীপুর)

প্রকাশিত: ৬-৮-২০২২ দুপুর ৩:৫৯

8Views

হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে গাজীপুরে শুরু হয়েছে গণপরিবহন সংকট। সড়কে যেসব বাস চলাচল করছে সেগুলো যাত্রীর তুলনায় কম। অনেকে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন। তবে সিএনজিচালিত টেম্পোগুলো চলাচল করছে। বাস না পেয়ে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে উঠছেন টেম্পোতে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

শনিবার (৬ আগস্ট) থেকে লিটারপ্রতি ডিজেল ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, কেরোসিন ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোল ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার (৫ আগস্ট) পর্যন্ত কেরোসিন ও ডিজেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা, অকটেন প্রতি লিটার ৮৯ টাকা এবং পেট্রোল প্রতি লিটার ৮৬ টাকা বিক্রি হয়েছে।

শনিবার সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী, বোর্ডবাজার, চেরাগআলী, চান্দনা চৌরাস্তা, সালনা, রাজেন্দ্রপুর, ভবানীপুর, মাস্টারবাড়ী, মাওনা চৌরাস্তা, নয়নপুর, এমসি বাজার ও জৈনা বাজার বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য যাত্রীদের দাঁড়িয়ে অপক্ষো করতে দেখা গেছে। সড়ক ফাঁকা থাকলেও অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও অনেকে বাস পাচ্ছেন না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

মহানগরের টঙ্গী এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম চাকরি করেন গাজীপুরের বাঘের বাজার এলাকার একটি পোশাক কারখানায়। তিনি জানান, পরিবহন সঙ্কটের কারণে সকাল ৭ টায় বাসা থেকে বেড় হয়েও যথা সময়ে অফিসে পৌঁছতে পারেননি। 

আল-আমনি হোসেন এসকিউ গ্রুপের পোশাক কারখানায় চাকরির করেন। তিনি জানান, রাত বা সকালেও যদি জানতাম পরিবহন বন্ধ তাহলে সময় হাতে নিয়ে বা অন্য ব্যবস্থা করে চলে যেতাম অফিসে। সকালে সড়কে এসে শুনি গাড়ি চলাচল বন্ধ। এটা তো কোন নিয়মের পর্যায়ের পড়ে না। এই সুযোগে রিকশাওয়ালাও ডাবল ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে।

এদিকে, শুক্রবার মধ্য রাত ১২টার পর থেকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর থেকেই অনেক পাম্প তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয়। রাতে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে তেলের দাম বাড়ার ঘোষণার সাথে সাথেই পাম্পগুলোর কর্তৃপক্ষ তেল দেয়া বন্ধ করে দেয়।

যেসব যানবাহান ও মোটরসাইকেল চলেকেরা তেল কিনতে পাম্পে গেছেন তাদেরকে পাম্প ম্যনেজার তেল নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছে। অনেক পাম্প কর্মকর্মতাদের সাথে তেল নিতে আসা যানবাহন ও মোটরসাইকেল চালকদের তর্কে জড়াতে দেখা গেছে।

গাজীপুরের বৈরাগীরচালা এলাকার আমান গার্মেন্টসে চাকরি করেন চান্দনা এলাকার রুবায়েত হোসেন। তিনি জানান, হঠাৎ জ্বালনীর দাম বৃদ্ধির ঘোষনায় সিএনজি টেম্পো ও অটোরিকশাসহ জ্বালানী চালিত অন্যান্য ছোট ছোট যানবাহনের ভাড়াও বাড়িয়ে দেয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামীরা।

শ্রীপুরের পলক সিএনজির ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা কি করব। জ্বালানীর দাম বেড়ে গেলে আমরাও বাড়িয়ে বিক্রি করি। আগের জ্বালানী মজুদ ছিল আপনাদের, সেই জ্বালানী আজ থেকে বাড়ানো দামে কেন বিক্রি করছেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জ্বালানী মজুদ থাকেনা। প্রতিদিন আমরা জ্বালানী নিয়ে আসি। যদি কোনো পাম্পে মজুদ থেকে থাকে তবে সেটি খুবই অল্প। 

গাজীপুরের বাঘের বাজার এলাকার মন্ডল ইন্টিমেটস গার্মেন্টসের কর্মকর্তা মো: পলাশ জানান, তিনি প্রতিদিন বোর্ড বাজার থেকে মোটরসাইকেলে অফিসে যাতায়াত করেন। পেট্রোল ও অকটেনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাইকে অফিসে আসা সম্ভব নয়। যা বেতন পাই তা সারা মাসেরআসা যাওয়ার তেল খরচ চলে যাবে। তাই আজকে বাইক ছাড়াই অফিসে আসছি।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার আলম এশিয়া পরিবহনের চালক আব্দুল জব্বার জানান, হঠাৎ করে ডিজেলের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে, তাতে আগের ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা আমাদের সম্ভব হবে না। তাই আপাতত যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে।

গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন কমচারী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান উদ্দিন বলেন, সড়কে যানবাহনের সংকট নেই। তবে যেসব পরিবহনে জ্বালানী ছিলনা তারা দাম বৃদ্ধির কারনে অনেকে সড়কে গাড়ি নিয়ে বের হয়নি। আমরা পরিবহন চালক বা মালিকদের কোনো ধরনের নির্দেশনা দেইনি। 


আরও পড়ুন