সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে রাজস্ব আদায় প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা

news paper

এস কে কামরুল হাসান, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৩-৬-২০২২ দুপুর ৪:৫২

7Views

কল্যাণী ঘোষের বয়স ৮৩ বছর। বাড়ি সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের হাবাসপুর গ্রামে। বয়সের ভারে একেবারে ন্যুয়ে পড়েছেন। দালাল ছাড়াই মেয়েকে সাথে নিয়ে পাসপোর্ট করতে এসেছেন সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। সরাসরি এডির (সহকারী পরিচালক) রুমে এসে আবেদনটি জমা দিলেন। ফরমে ভুল থাকলেও এডি নিজেই সেটি ঠিক করে হাতে দিয়ে বললেন, ছবি তুলে চলে যান। কারোর কাছে টাকা-পয়সা দেবেন না। এভাবে একের পর আবেদনকারী এসে তাদের পরামার্শ ভুল হলে সেগুলো কিভাবে সংশোধন করতে হবে সবকিছু একাই সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। আবেদনকারীদের জন্য আবেদন জমা দেয়ার জায়গা থাকলেও সবাই চায় এডির সাথে দেখা করতে। তার আচার-ব্যবহার ও সুপরামার্শ আবেদনকারীদের জন্য স্বস্তিকর। আবেদনকারীরা সবাই হাসিমুখে রুম থেকে তাদের সমাধান করে বের হয়ে যাচ্ছেন।

সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, পাসপোর্ট অফিস থেকে সরকার ২২ মাসে রাজস্ব আদায় করেছে ২৭ কোটি ৩৩ লাখ ৪১ হাজার ২০০ টাকা। এরমধ্যে আবেদন পড়েছে ৪৩ হাজার ২১৮টি। পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৫১২টি। প্রতিদিন প্রায় ২০০ আবেদন জমা পড়ে।

সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাহজাহান কবির বলেন, লোকবল সংকট থাকলেও আমি গত ২৪-০৯-২০২০ তারিখে যোগদান করার পর থেকে প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসে ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা কিন্তু আছে মাত্র ১১ জন। আমরা অর্ধেকের কম লোকবল নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য পাসপোর্ট অফিসে গুণগত কিছু পরিবর্তন এনেছেন। দালালমুক্ত ও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে অনৈতিক সুবিধা না নিতে পারে তার জন্য পুরো পাসপোর্ট অফিস সিসি ক্যামেরা দ্বারা বেষ্টিত। সপ্তাহে প্রতি সোমবার গণশুনানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্য আলাদা কাউন্টারের মাধ্যমে বিশেষ সেবা দেয়া হয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ারের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হয়। হেল্পডেস্ক, জবাবদিহি বক্স ও যে কর্মকর্তা-কর্মচারী আবেদনকারীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারবে, সে বিষয়ে মাসে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কলিংবেলের মাধ্যমে সেবা দেয়ার ব্যবস্থা। নিচ থেকে কলিংবেল চাপতেই সরাসরি এডি নিজে এসেই সেবা দিয়ে যান।

কথা হয় আইএফআইসি ব্যাংক কর্মকর্তা রাজ কুমারের সাথে। তিনি বলেন, আমি নিজে সরাসরি এসেছি পাসপোর্ট করতে। সহকারী পরিচালক আমার আবেদনটি দেখে সই করে দিলেন কোনো ঝামেলা ছাড়াই। তার ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি অফিসের প্রধান কর্মকর্তা হয়ে সেভাবে হেল্প করলেন, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য।

প্রত্যেক আবেদনকারী আলাদা আলাদা কাউন্টার থাকা সত্বেও সবাই আপনার কাছে আসে- এমন প্রশ্নের উত্তরে সহকারী পরিচালক সাহজাহান কবির বলেন, সবাই আমার কাছে আসতে পারে, কোনো বাধা নেই। আমি যতটুকু সম্ভব মানুষকে আমার সাধ্যমতো সেবা দিয়ে থাকি। কারোর পাসপোর্ট আসতে কেন দেরি হচ্ছে, আবেদনে ফরমে কোনো সমস্যা আছে কি-না, সমস্যা থাকলে কিভাবে সমাধান করতে হবে; সবকিছু আমি করে থাকি।


আরও পড়ুন