২৫ এজেন্সিতে শ্রমিক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে মালয়েশিয়ায় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা

news paper

আশিক ইসলাম, মালয়েশিয়া

প্রকাশিত: ২২-৬-২০২২ দুপুর ৪:৩৫

7Views

বাংলাদেশের ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের এক দিন পরই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে মামলা করেছে এনজিও সংগঠন ইখলাস। মঙ্গলবার (২১ জুন) ডাংওয়াঙ্গি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে দায়ের করা প্রতিবেদনে দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানকে অভিযুক্ত করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ২৫ এজেন্সি নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
 
পুলিশে রিপোর্ট বা মামলা দায়ের করেছেন বেসরকারি এনজিওদের যৌথ সংগঠন ইখলাসের সভাপতি মোহাম্মদ রিদজুয়ান আবদুল্লাহ। মামলা দায়েরের পর মঙ্গলবার বিকেলে মোহাম্মদ রিদজুয়ান আবদুল্লাহ স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানিতে ১৫২০ রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে মাত্র ২৫টি এজেন্সি দুর্নীতির মাধ্যমে নির্বাচিত করেছেন এম সারাভানান ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়মের মাধ্যমে। এই ২৫ এজেন্সির মাধ্যমে ১টি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন, যা মালয়েশিয়ার একজন বড় ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ২৫ এজেন্সির ব্যাপারে সরকার ও মন্ত্রী কিছুই জানেন না।
 
রেদজুয়ান আবদূল্লাহ আরো বলেন, এই দুর্নীতির বিষয় এম সারাভানানের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য পুলিশকে আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি রিদজুয়ান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন এবং প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকোবকে বিষয়টি দেখার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
 
তিনি আরো বলেন, আমরা মনে করি এটি একটি জাতীয় নিরাপত্তা এবং ক্ষমতার পরিপন্থী কাজ। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, তার (সারাভানানের) বক্তব্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিবর্তন করে ফেলছেন।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্য বিজনেস পোস্ট বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেউই ২৫ এজেন্সিকে অনুমোদন করেননি। ইমরান আররো বলেছিলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) ২৫টি এজেন্সির কথা উল্লেখ নেই।
 
মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা বলছেন, যদি ২৫ এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করা হয়, তাহলে তাদের খরচ আগের কলিং ভিসার চেয়েও বেশি পড়বে এবং শ্রমিকদের খরচ তুলতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনজিও সংস্থা ইখলাসসহ আরো বেশ কয়েকটি সংস্থা ভিন্ন ভিন্ন থানায় মন্ত্রী এম সারাভানানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। যেহেতু ২৫ এজেন্সি বাংলাদেশ অনুমোদন করেনি, তাহলে এই সিন্ডিকেটের পেছনে এম সারাভানান দায়ী।
 
এদিকে, গত ৪ বছর আগে সিন্ডিকেটের অভিযোগে মাহাথির সরকার কলিং ভিসা স্থগিত হওয়ার পর একের পর এক জটিলতায় ঝুলে আছে অন্যতম শ্রমবাজারটি। কলিং খুলে শ্রম বাজার স্বাভাবিককরণে এই ৪ বছরে অসংখ্যা মেইল, মিটিং ও দেন-দরবার হয়েছে কিন্তু ফলাফল একই। এ অচলাবস্থা চলতে থাকলে কলিং যেমন বন্ধ হয়ে যেতে পারে, আবার চালু হলেও আগের মতই মহাসংকটে পড়তে পারে কলিং ভিসার সংশ্লিষ্টরা। যেভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল ২০০৭ সালে চালু হওয়া কলিং ভিসার। অবৈধ হয়ে মানবিক সংকট পড়তে পারেন সাধারণ কর্মীরা।
 
কলিং নিয়ে এক কদম এগিয়ে আসলে আবার নতুন জটিলতায় ২ কদম পিছিয়ে যায়। সিন্ডিকেট নিয়ে বাংলাদেশেরের তীব্র আপত্তি যেমন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান কোনো কর্ণপাত করছেন না, ঠিক তেমনি মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তাদের সিন্ডিকেটবিরোধী বক্তব্যও কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। এতকিছুর পরও এম সারাভানান নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন।

আরও পড়ুন