‘সারাজীবনের কামাই দিয়া নতুন ঘর বানাইছিলাম, এইডাও বন্যায় শেষ হইয়া গেল’

news paper

আল নোমান শান্ত, দুর্গাপুর

প্রকাশিত: ১৯-৬-২০২২ দুপুর ২:৩৭

37Views

‘‘সোমেশ্বরী নদী আমরার বাড়িত আইয়া পড়ছে, কইনো যাইতাম ওহন। যাউনের কোনো ঠিহানা জানা নাই। বাড়ি-ঘরের অর্ধেক ভাইঙ্গা গেছে। বাহিটা হয়তো কদিনের মধ্যেই যাইবোগা, অহন আর কোনো ট্যাহা-পয়সাও নাই যে কুছতা কিইন্না খাইতামথ’- কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনা জেলার চণ্ডীগড় ইউনিয়নের মউ গ্রামের মো. তারা মিয়া। তিনি আরো বলেন, ‘সারাজীবনের কামাই দিয়া নতুন ঘর বানাইছিলাম, এইডাও বন্যায় শেষ হইয়া গেল।’

বন্যাপরবর্তী দুর্ভোগ নিয়ে রোববার (১৯ জুন) উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বন্যার পানি কমলেও বন্যায় আক্রান্তদের দুর্গতির সীমা নেই। এ বছর টানা বর্ষণ ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি আগাম বন্যায় দুর্গাপুর উপজেলার পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করে উপজেলাবাসীদের আউশ ফসলের বীজতলা, পুকুরের মাছ, মুরগির খামার, গবাদিপশু, শাক-সব্জি, রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘরসহ সককিছু বিনষ্ট করে দিয়েছে। পানিতে ডুবে থাকা ফসল, ঘর-বাড়ির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করার মতো ক্ষমতা তাদের অনেকেরই নেই। যে সামান্য রোজগারের পুঁজি তাদের ছিল, সেগুলো করোনার কারণে কাজ-কর্ম না থাকায় তাও শেষ হয়েছে অনেক আগেই। অনেকেই ঋণ নিয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু করলেও এবারের বন্যায় সব শেষ করে দিয়ে গেল।

কৃষিকাজের শ্রমিক ছিলেন মনসুর আলী, এখন কর্মহীন হয়ে বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্নছে। তিনি বলেন, কাজ কাম নেই, কিন্তু পেট তো রোগ-বালাই চিনে না, তাকে সময় মতো খাউন দিতে অইবো, কিন্তু কোথায় পাবো তাই বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীর কাছ থেকে কিছু টাকা সুদে নিয়েছিলাম। এখন টাকা দেবো কীভাবে? লাভ না দিলে কেউ টাকা দেয় না।

এলাকার খোদেজা, মাকসুদা সহ অনেকেই একই ধরনের কথা বলে। বন্যায় ক্ষুদ্র ব্যবসাকারী যাদের দোকান ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, বজলু মিয়া, আজু রহমান, রেজাউল ইসলাম, আগবর আলী, আজিজুল হক, সিদ্দিক মিয়া, রবিউল্লাহ, সাহাদুল এবংআরসাদুল মিয়ার সব শেষ হয়ে গেছে।

বন্যাদুর্গত জনসাধারনের মধ্যে সরকারিভাবে তালিকা সংগ্রহ করে আপদকালীন কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বা বিনা সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা করলে হয়তো অনেক সুবিধাবঞ্চিতদের অনেক সমস্যা থেকে রক্ষা পেয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে চলতে পারবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। সেই সাথে দুর্গাপুর উপজেলাকে বন্যাদুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়। বন্যাকবলিত এলাকায় ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন, দুর্গাপুর পৌরসভা শুকনা খাবার ও পানিবাহিত রোগের ওষুধ বিতরণ করছেন।


আরও পড়ুন