আত্মহত্যা মুক্তির পথ নয়

news paper

রুমানা আক্তার রনি

প্রকাশিত: ১৫-৬-২০২২ দুপুর ১১:২৭

165Views

আত্মহত্যা বর্তমান সমাজে সংঘটিত জঘন্যতম পাপ কাজগুলোর মধ্যে একটি। যখন কেউ নিজের জীবন নিজেই নিয়ে নেয় সাধারণত এটাকেই আত্মহত্যা বলা হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে আত্নহত্যার হার এতোটাই বেড়ে গেছে যে, প্রতিদিন খবরের কাগজে ২-৩ টা আত্মহত্যার শিরোনাম যেন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বড় বড় বিদ্যাপীঠগুলোর কতিপয় মেধাবী শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্নহত্যার প্রবণতা ক্রমাগত বেড়েই চলছে যা সত্যিকার অর্থেই দুঃখজনক বিষয়।আবার বর্তমানে ফেসবুকে লাইভে এসে আত্মহত্যার বিষয়টি ব্যাপকভাবে  বিস্তার লাভ করছে। এই বিষয়টি আমাদের সমাজে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে নেতিবাচক  প্রভাব ফেলছে। ফেসবুকে লাইভে এসে আত্মহত্যার একটি ঘটনা যখন প্রকাশ পায় তখন সেটি অন্যদেরকেও প্রভাবিত করে। কেউ যদি আত্মহত্যার কারন বিশ্লেষণ করে তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তাহলে আরেকজনও নিজের মধ্যে আত্মহত্যার যুক্তি খুঁজতে থাকে। মানুষের কোমল মনকে এসব ঘটনা প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। প্রযুক্তি মানুষকে যেমন সচেতন করে তুলে তেমনি এর নেতিবাচক ব্যবিহার আত্মহত্যাপ্রবণ হওয়ার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনাহুলোর দিকেও ধাবিত করছে।  আমাদের সবারই এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
 
পৃথিবীর সৌন্দর্য, অনাবিল সুখ, প্রিয়মুখগুলোর প্রতি মায়া-মহব্বত কোনোকিছুই কি আর তাকে কাছে টানে না? কিন্তু নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার পথ তো কোনো পথ হতে পারেনা। আত্মহত্যা জীবনের সবচেয়ে বড় কাপুরুষতার পরিচয়। এই কাপুরুষতার জন্যে মানুষ মৃত্যুর মাধ্যমে তাঁর জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। সেই সাথে ঝুঁকিতে ফেলে তার পরিবার ও আশেপাশের মানুষজনকেও। 
 
আত্মহত্যা একধরনের মানসিক অসুস্থতা। মানসিক স্বাস্থ্যও যে শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গূরুত্বপূর্ণ তা আমরা অনেকেই বুঝতে পারিনা। মানসিক চাপের কারনে অনেকের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে আত্নহত্যার পিছনে একাকীত্বেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে। মূলত একাকীত্বের ফলে যে বিষণ্ণতার সৃষ্টি হয় তার কারণে ঘটে আত্নহত্যা। কারণ, একাকীত্ব থেকেই গভীর বিষণ্ণতার সৃষ্টি হয়। আর তা থেকেই মানুষ আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়। আমাদের সবাইকেই এজন্য সতর্ক হতে হবে।
 
এছাড়াও প্রেমে ব্যর্থতা, মান-অভিমান, কারোর প্রতি ক্ষোভ, দারিদ্রতা, ধর্ষণ, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হওয়া এসব কারনেও প্রতিনিয়তই অসংখ্য মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। আপন সত্তার বিভ্রমে পড়ে এ ভুল পথ বেছে নিচ্ছে অগণিত মানুষ।মূলত আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য মানুষকে হতাশায় ফেলে দেয়। হতাশার জন্য মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বেড়ে যায়, বেড়ে যায় জীবন নিয়ে সংশয়। একটা সময় এই হতাশার অবসান ঘটে ঠিকই কিন্তু সেটা আত্মহননের মাধ্যমে। হতাশা থেকে আত্নহত্যার প্রবণতা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে যা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, গোটা বিশ্বের চিত্র৷ নিজেকে যখন কেউ মূল্যহীন মনে করে, অপ্রয়োজনীয় মনে করে, জীবনকে অর্থহীন মনে হয় তখনই মানুষটি আত্নঘাতী হয়ে ওঠে।
 
আত্নহত্যার হলো নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার পথ। কিন্তু জীবন যুদ্ধে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার কোনো মানে হয়না। জীবনের সন্ধানে খুঁজে নিতে হয় কোনো নিরাপদ স্থান। আত্নহত্যা নয়, জীবনের সন্ধানই তাকে দেয় মুক্তির পথ, আলোর পথ। জীবনে চলতে হবে সাহসিকতার সাথে, নির্ভয়ে। মনের আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তখন মনে আত্নবিশ্বাস জাগিয়ে তোলা ভীষন দরকার। চারপাশের সমস্যাগুলোকে ছোট মনে করে নিজের জন্য বাঁচতে হবে আমাদের। অন্যের জন্য নিজে কেন আমাদের প্রাপ্য আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবো? আত্নহত্যা আমাদের কোনো সমাধান দিতে পারেনা। তিনিই আসল মানুষ যিনি সমস্যার মধ্যে থেকে মোকাবিলা করেন। আমাদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করা প্রয়োজন, জীবনকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে শেখা প্রয়োজন। অন্যের ঘাড়ে বোঝা হয়ে না চেপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে সবাইকেই।
 
শত আঘাত, দুঃখ, বেদনা, কষ্ট জীবনে আসে মানুষকে আরও বেশি শক্ত করার জন্য। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য নয়। আমরা অনেকেই এই বিষয়টা বুঝে উঠতে পারিনা। জীবনে যে শুধু একপাক্ষিকভাবে সুখ-ই থাকবে এমনটা নয়। জোয়ার-ভাটার মতো জীবনে সুখ যেমন থাকবে তেমনি দুঃখও বিরাজ করবে। আর এটাই প্রকৃতির নিয়ম। এই সত্যটাকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা সবার মধ্যেই থাকতে হবে।
 
জীবন হলো আল্লাহর শ্রেষ্ঠ দান। আত্নহননের মাধ্যমে জীবনকে শেষ করে দেওয়া চরম বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। জীবনের মালিক আল্লাহ এবং তিনিই মানুষকে মৃত্যু দান করেন। ইসলাম ধর্মেও যেমন আত্মহত্যাকে কঠোর পাপ হিসেবে বিবেচনা করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তেমনই অন্যান্য ধর্মেও তাই। মানুষের জীবন একটাই। সেটা গেলে, আর ফিরে আসেনা।
 
 
লেখক: রুমানা আক্তার রনি
শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন