গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি

news paper

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৮-৬-২০২২ দুপুর ১২:৫৭

28Views

গর্ভাবস্থায় পুষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম  বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলিতে গর্ভবতী মহিলাদের একটি বড় অংশ পর্যাপ্ত এবং সুষম খাবার গ্রহণ করেন না।
 
স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় শিশু ২৮০ দিন বা ৪০ সপ্তাহ মাতৃগর্ভে অবস্থান করে। এই সময় মায়ের নিজের দেহের চাহিদা পূরনের জন্য এবং গর্ভস্থ শিশুর দেহ গঠনের জন্য অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান গ্রহণের প্রয়োজন হয়।
 
গর্ভধারনের সময়কালকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রথম ভাগে(প্রথম ৩ মাস) ১.৫ কেজি এবং গর্ভাবস্থার সম্পূর্ণ সময়ে মোট ১০ থেকে ১২.৫ কেজি ওজন বৃদ্ধি বাঞ্ছনীয় বলে মনে করা হয়। এই সময় পুষ্টি উপাদানের চাহিদাও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ৩.২ কেজি ওজনের ভূমিষ্ট শিশুর দেহে ৩০০মিলি রক্ত, ৫০০গ্রাম প্রোটিন এবং ৩০গ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৫ গ্রাম ফসফরাস  এবং ৩০০-৪০০ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, যা সে তার মায়ের কাছ থেকে পেয়ে থাকে।
 
ক্যালরি:গর্ভকালীন সময়ে নতুন টিস্যু গঠন এবং রক্ষনাবেক্ষনের জন্য  মায়ের মোট শক্তির প্রয়োজন ৮০,০০০ কিলোক্যালরি, যার মধ্যে ৪০০০০ কিলোক্যালরি চর্বি হিসেবে মায়ের দেহে সঞ্চিত থাকে। ICMR এর গাইডলাইন অনুসারে এই পরিমান ক্যালরির জন্য প্রথম ৩ মাসে দৈনিক অতিরিক্ত ১৫০ কিলোক্যালরি ও শেষের ৬ মাসে দৈনিক অতিরিক্ত ৩৫০কিলোক্যালরি মূল্যের খাবার গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।যাদের ওজন কম তাদের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহনের পরামর্শ দেয়া হয়।
 
প্রোটিন: গর্ভাবস্থায় এই উপাদানটির চাহিদাই সর্বাপেক্ষা বেশী। শিশুর দেহ গঠন এই প্রোটিনের উপরেই নির্ভরশীল। এই সময় প্রোটিনের চাহিদা স্বাভাবিক প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। যেমন- যদি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার স্বাভাবিক চাহিদা প্রতিদিন ৪৫ গ্রাম হয়, তবে গর্ভাবস্থায় তাকে গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ট্রাইম এস্টারে RDI অনুযায়ী প্রতিদিন অতিরিক্ত ১৪ গ্রাম গ্রহণ প্রয়োজন।
 
 FAO/WHO বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট থেকে জানা যায় প্রায়  ৯১০ গ্রাম প্রোটিন গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ এবং মায়ের টিস্যুতে জমা হয়। ICMR বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতিদিন ১০ গ্রাম অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
 
ক্যালসিয়াম: FAO/ WHO বিশেষজ্ঞগ্রুপের তথ্য মতে গর্ভাবস্থায় ভ্রূণে প্রায়  ৩০ গ্রাম ক্যালসিয়াম জমা হয়। I.C.M.R পুষ্টিবিশেষজ্ঞ কমিটি গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে দৈনিক অতিরিক্ত ৫০০মিলিগ্রাম থেকে ৬০০মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণের সুপারিশ করেছে।  
 
আয়রন: ভ্রূণে প্রায় ৩০০মি্লিগ্রাম এবং প্লাসেন্টায় প্রায় ৭০ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে, মায়ের লাল রক্ত ​​​​কোষের ভর বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার কারণে, গর্ভাবস্থায় ১২০মিলিগ্রাম পর্যন্ত আয়রনের ক্ষয় কম হয়। ICMR পুষ্টিবিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতিদিন ১০ মিলিগ্রাম অতিরিক্ত আয়রন গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
 
জিংক: গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন জিঙ্ক গ্রহণের অনুমোদিত পরিমাণ ১৫-২০ মিলিগ্রাম।
 
রিবোফ্ল্যাবিন: প্রতিদিন রিবোফ্ল্যাবিন ০.২ মিলিগ্রাম অতিরিক্ত গ্রহনের সুপারিশ করা হয়েছে।
 
নিকোটিনিক এসিড: এটি প্রতিদিন অতিরিক্ত ২ মিলিগ্রাম গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। 
 
ফলিক এসিড: ভ্রূণ ও প্ল্যাসেন্টার বৃদ্ধির জন্য এবং নিউরাল টিউবের ত্রুটি প্রতিরোধ করার জন্য গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিডের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। নিউরালটিউব গর্ভাবস্থার ২৮ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। অতএব, গর্ভধারণের আগে থেকে ফলিক অ্যাসিডের পরিপূরক শুরু করা আবশ্যক।
 
ভিটামিন-সি : ICMR পুষ্টি বিশেষজ্ঞ কমিটি ৫০মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি গ্রহণের পরামর্শ দেয়, যা গর্ভাবস্থার অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করবে। ভিটামিন-সি সংযোগকারী টিস্যু এবং ভাস্কুলার সিস্টেমের বিকাশের পাশাপাশি আয়রন শোষণেও সাহায্য করে।
 
ভিটামিন-এ: এ সময় স্বাভাবিকের তুলনায় ভিটামিন-এ এর চাহিদা প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
 
ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার  গ্রহণের মাধ্যমে এই চাহিদা পূরন করা যায়।
 
ভিটামিন-ডি:এর প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা যায় না, কারণ এটি ক্যালসিয়াম শোষণ এবং এর  ব্যবহারের সাথে জড়িত। যেহেতু আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে সূর্যালোক পাওয়া যায়, তাই ভিটামিন-ডি এর প্রয়োজনীয়তা ত্বকের জৈবসংশ্লেষণের মাধ্যমে সহজেই পূরণ করা যায়।
 
 
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সুষম খাদ্যের নির্দেশিকা:
 
১। ভাল মানের প্রোটিন যেমন- দুধ, মাংস, মাছ, ডিম এবং পনির খাদ্য তালিকায় যোগ করা উচিত।
 
২। নিরামিষ ভোজীদের জন্য প্রোটিনের অতিরিক্ত প্রয়োজনীয়তা গোটা শস্য, শিমের বিচি, ডাল এবং বাদামের সংমিশ্রণ থেকে পাওয়া যেতে পারে।
 
৩। পর্যাপ্ত পরিমাণে তাজা ফল এবং ফলের রস রাখতে হবে, যা থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন-সি  পাওয়া যাবে।
 
৪। ডায়েটে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন-কলিজা, ডিমের কুসুম, মাখন, গাঢ় সবুজ এবং হলুদ শাক সবজি এবং ফল গ্রহন করে এই চাহিদা পূরন করা যায়।
 
৫। ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন-মাখন, ডিমের কুসুম, কলিজা, ডায়েটে যোগ করতে হবে।
 
৬। ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য দুগ্ধজাত খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
 
 
খানম উম্মেদ নাহার হোমায়রা
কনসালট্যান্ট নিউট্রিশনিষ্ট
এম,এইচ,শমরিতা হাসপাতাল & মেডিকেল কলেজ

আরও পড়ুন