দেশে তৈরি হয় ৯০% খেলনা

দেশের প্লাস্টিক শিল্পের ৯৮ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান

news paper

সাদিক হাসান পলাশ

প্রকাশিত: ৭-৬-২০২২ বিকাল ৭:৪৭

20Views

বর্তমানে দেশে ৫,০৩০ প্লাস্টিক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ৯৮ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান। এখাতের সাথে যুক্ত প্রায় ১.৫ মিলিয়ন লোকবল। এছাড়া ২০২০-২১ সালে প্লাস্টিক খাতের রপ্তানি ১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে অত্র সেক্টরে রপ্তানির পরিমাণ ১.০ বিলিয়ন ইউএস ডলার।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানীকারক এসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ), বিশ্বব্যাংকের প্রজেক্ট (ইসিফোরজে) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ‘প্লাষ্টিক টয় ইন্ড্রাট্রিজ অব বাংলঅদেশ- এ প্রটেনশিয়াল সেক্টর ফর এক্সপোর্ট ডায়ভারসিফিকেশন’ শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বিষয়গুলো উঠে আসে।

মঙ্গলবার সকালে সিরডাপ মিলনায়তনে মূল প্রবন্ধে বিল্ড সিইও মিসেস ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, প্লাস্টিক খেলনা সেক্টর নন-ট্রাডিশনাল রপ্তানি খাত হিসাবে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। বিভিন্ন বয়সের শিশুদের বিনোদনের জন্য খেলনা ব্যবহার করা হয়। দিন দিন বাড়ছে চাহিদা। বাংলাদেশের খেলনা ইতিমধ্যে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় পা রেখেছে। খেলনা রপ্তানির কিউমুলেটিভ এভারেজ গ্রোথ রেট ২৪%। তিনি বলেন, ২০২১-২২ সালে (জুলাই-এপ্রিল) মোট প্লাস্টিক রপ্তানি ইউএস ডলার ১২৮.৭৭ মিলিয়ন এবং খেলনা রপ্তানি ইউএস ডলার ৩৭.১০ মিলিয়ন বা মোট প্লাস্টিক রপ্তানির প্রায় ২৯%। ১২ মাসের গড় রপ্তানি হবে যথাক্রমে ইউএস ডলার ১৫৫ মিলিয়ন এবং ইউএস ডলার ৪৪ মিলিয়ন প্লাস্টিক এবং খেলনা। ২০২১-২২ সালে গড় বৃদ্ধির হার ২২%।

সেমিনার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মনছুরুল আলম সেমিনারে চেয়ার এবং বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ, কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উক্ত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিল্ড-এর সিইও ফেরদৌস আরা বেগম। এছাড়া প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব শুভাশিষ বোস, এসএমই ফাউন্ডেশনের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন মাহমুদ, বিটাক পরিচালক ডঃ সৈয়দ মো. ইহসানুল করিম, বিপিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মো. ইউসুফ আশরাফ, গোল্ডেন সন লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদ। এছাড়াও এফবিসিসিআই বিভিন্ন চেম্বার এসোসিয়েশন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ, বিপিজিএমইএ’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, টয়েজ সেক্টরের সদস্যগণ সেমিনারে অংশগ্রহন করেন।

বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, খেলনা একটি উদ্ভাবনী পণ্য। উদ্যোক্তাগণ যখন খেলনা তৈরি করেন তখন প্রতিটি খেলনায় ভিন্নতা ও নতুনত্ব থাকে। বিপিজিএমইএ ডিপার্টমেন্ট অব পেটেন্ট ডিজাইন এণ্ড রেজিষ্ট্রিশন অফিস থেকে নতুন খেলনা আইটেমের পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন নিয়ে থাকে। আজ থেকে প্রায় ২৪ বছর পূর্বে ১৯৯৮ সাল থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে মাত্র ৭টি খেলনা পণ্য পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন করা হয়। হিসাব মতে, ১৯৯৯ সালে ১৫৫টি, ২০০০ সালে ৫৯টি, ২০০১ সালে ১২২টি পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন হয়। তেমনি ২০১৮ সালে ২৯৭টি, ২০১৯ সালে ২৩৪টি, ২০২০ সালে ১০৯টি, ২০২১ সালে ১৫৫টি এবং ২০২২ সালে অদ্যাবধি ৭১টি অর্থ্যাৎ সর্বমোট ২৫৫৮টি পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। খেলনা ও ক্রোকারিজ আইটেম এর রেজিস্ট্রেশন বাবদ অদ্যাবিধি সরকারি কোষাগারে ২,২৭,০৪,৩২৮ টাকা রাজস্ব হিসেবে প্রদান করা হয়েছে।  খেলনা শিল্প উন্নয়নের জন্য সরকারের একান্ত সহযোগিতা কামনা করে বলেন, টয় সেক্টর বিকাশের জন্য সরকারের সব রকমের পলিসি সাপোর্ট দিতে হবে। যেহেতু খেলনা সেক্টর একটি শ্রম নির্ভর এবং প্রচুর পরিমাণে মহিলা শ্রমিকের কাজের সুযোগ আছে তাই এই সেক্টর একদিন গার্মেন্টস এর মতো রফতানীতে বড় ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা আছে। আজ থেকে ১ দশক আগেও ৯০% খেলনা আমদানি নির্ভর ছিল। বর্তমানে ১০% আমদানি হয়, ৯০% দেশে তৈরি হয়। তিনি বলেন, তৈরি খেলনা আমদানির ক্ষেত্রে ট্যারিফ মূল্য ৭.৫ ডলার অনেক কম, অন্তত পক্ষে ২০ ডলার কেজিতে নির্ধারণ করার আহ্বান জানাই।

বিপিজিএমইএ সাবেক সভাপতি মো. ইউসুফ আশরাফ বলেন, প্লাস্টিক সেক্টর নানাভাবে বিকশিত হচ্ছে। প্লাস্টিক খাতের কার্যক্রম বাড়ছে। সারাদেশের ব্যবসায়ীদেরকে পরিচালনা করছেন এফবিসিসিআই সভাপতি, যিনি বিপিজিএমইএ’র প্রতিনিধি। প্লাস্টিক খাত এখন শক্তিশালী হয়েছে। আগামীতে এখাতের সম্ভাবনা বিশাল। প্লাস্টিক খেলনা সেক্টর দেশীয় পরিমন্ডল পেরিয়ে বিশ্ববাজারে পদার্পণ করছে। তিনি দ্রুত প্লাস্টিক শিল্পনগরী স্থাপনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। পুরানো ঢাকার ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প প্রতিষ্ঠান যাতে প্লট নিতে পারে সেজন্য মূল্য কমিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। নকল পণ্য প্রতিরোধ সহ বিভিন্ন ইস্যু সমাধানের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানান।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, খেলনা প্লাস্টিক সেক্টরের একটি সাব-সেক্টর। এ উপখাতের উন্নয়ন দ্রুত হচ্ছে। দেশে খেলনার ব্যবহার বেড়েছে। উন্নত মানের খেলনা তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত খেলনা রপ্তানির উচ্চ বৃদ্ধির হার ছিল। খেলনা রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হল ২৪%। ২৪% গড় প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০৩০ সালের জন্য অনুমান করা হচ্ছে খেলনা রপ্তানি প্রায় ৪৬৬.৩১ মিলিয়ন ইউএস ডলার হবে। এই বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ২৮তম বৃহত্তম খেলনা রপ্তানিকারক দেশে দাঁড়াতে পারে। বিশ্বমানের মানসম্পন্ন পণ্য ত্বরান্বিত করতে আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং নতুন বাজারে রপ্তানির চেষ্টা করতে হবে। জনাব জসিম উদ্দিন আরও বলেন, আমরা সবসময় সেক্টরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। কাচাঁমালের উপর ডিউটি কমানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। অন্যদিকে দেশীয় শিল্প রক্ষায় আমদানিকৃত ফিনিশড পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর দাবি করছি। তিনি বলেন, টয়েজ দিয়ে প্লাস্টিক সেক্টরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজকে প্লাস্টিক টয়েজের ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। টয়েজ ফ্যাক্টরীর জন্য প্রয়োজনীয সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির আহ্বান জানান। কমপ্ল্যায়েন্স ইস্যু বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার স্বার্থে কমপ্ল্যায়ান্স ফ্যাক্টরীতে রূপান্তর করতে হবে। সেক্টরের উন্নয়নের জন্য পণ্য বহুমুখীকরণ ও উন্নত পণ্য উৎপাদনের উপর তিনি জোর দেন। সকল সেক্টরের জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স একই রকম করার প্রস্তাব করেন। টয়েজ সাব সেক্টরের মতো প্লাস্টিকের অন্যান্য সাব সেক্টর নিয়ে এধরণের অনুষ্ঠান করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মনছুরুল আলম বলেন, খেলনার বাজার এক শতাব্দীরও বেশি হয়ে গেলেও বাংলাদেশে এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ডের খেলনা উৎপাদন শুরু হয়নি। আমরা জানতে পারলাম, সন্তুষ্টি এখনও নন-ব্র্যান্ড খেলনা রপ্তানিতে সীমাবদ্ধ। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের খেলনার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে চাইলে বিশ্বমানের মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারকে অবকাঠামোগত সহযোগিতা, আনুষঙ্গিক আমদানিতে শুল্ক কমানোর মতো বেশ কিছু নীতিগত উদ্যোগ নিতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, প্লাস্টিক খেলনা শিল্প দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে এবং একই সাথে দেশে তার বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। ক্রমবর্ধমান নতুন শিল্পের জন্য কর্মসংস্থানও বাড়ছে। এখন বিশ্বমানের খেলনা পণ্য উৎপাদন এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি যে এই সেমিনারটি নতুন প্রযুক্তির সাথে খেলনা শিল্পের অপার সম্ভাবনার সূচনা করবে এবং মানসম্পন্ন পণ্য আপডেট করবে। তিনি বলেন, অত্র খাতকে রপ্তানির চালিকা শক্তিতে সমৃদ্ধ করতে সরকার থেকে সব ধরণের সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, কমপ্ল্যায়েন্স ইস্যু এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কমপ্ল্যায়েন্স ইস্যু না মানলে বাণিজ্যে সমস্যা হয়। তাই শিল্পগুলোকে আধুনিকায়ন করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপযোগী করে তোলা দরকার। অন্যদিকে খেলনা রপ্তানি করতে হলে পণ্যের মান অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে।


আরও পড়ুন