প্রকৌশল শাখার নতুন কারসাজি

জাবির বহুল আলোচিত প্রকল্প উদ্বোধন ঘিরে ক্যাম্পাস জুড়ে শঙ্কা

news paper

জাহিদুল ইসলাম শিশির

প্রকাশিত: ২৫-৫-২০২২ দুপুর ২:২৩

7Views

 জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের বহুল আলোচিত ১ হাজার ৪ শত ৪৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ ঘিরে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখার সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে কারসাজির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। বহু চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আগামী ২৬শে মে বহুল আলোচিত  কাজের  উদ্বোধন করার কথা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আলমের। কিন্তু  কাক্সিক্ষত সে উদ্বোধন প্রক্রিয়া আটকে দিতে নানা চক্রান্ত চলছে বলে বিশ^বিদ্যালয়ের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে। 

জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর একনেক সভায় জাবির উন্নয়ন কাজে  ১ হাজার ৪ শত ৪৫ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা, শিক্ষক অফিসার ও কর্মচারীদের টাওয়ার, প্রশাসনিক ভবন, নতুন লাইব্রেরী ভবন নির্মাণ, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, গেস্ট হাউস, কাম পোস্ট গ্রাজুয়েট রিসার্সার হাউস নির্মাণ, লেকচার থিয়েটার ও পরীক্ষার হল ভবন নির্মাণে ছাত্রীদের জন্য একটি খেলার মাঠ প্রস্তুতকরণ, আল-বিরুনী হলের খেলার মাঠ উন্নয়ন, ১৫২ জন ছাত্রের জন্য শহীদ রফিক জব্বার হল সমাপ্তকরণসহ আরও কিছু কাজ বরাদ্দকৃত অর্থে সমাপ্ত হওয়ার কথা। 

২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ শুরুর প্রাক্কালে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনসহ সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মীর নামে এ কাজে  বড় অংকের টাকা চাঁদা দাবি ঘিরে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার জন্ম হয়। সে পরিস্থিতির কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর করোনাসহ নানা কারণে কাজ শুরু করতে পারেনি বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। সর্বশেষ সব বাধা কাটিয়ে বর্তমান ভিসির নেতৃত্বে আগামী ২৬ মে বহুল কাক্সিক্ষত সে প্রকল্পের কাজ উদ্বোধনের কথা। কিন্তু বিশ^বিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখার কতিপয় সিনিয়র কর্মকর্তা এ উদ্বোধন প্রক্রিয়া আটকে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। তারা নানা অজুহাত সামনে এনে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এ প্রকল্প আটকে দিতে একাট্টা হয়েছে। এ নিয়ে  প্রকল্প  উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা হলেও  শেষ পর্যন্ত তা করা যাবে কিনা এ নিয়ে এক ধরনের চাপা সন্দেহ বিরাজ করছে  ক্যাম্পাস জুড়ে। 

একটি সূত্রের দাবি পুরাতন সেই চাঁদাবাজদের একটি অংশের সাথে হাত মিলিয়েছে প্রকৌশল শাখার সিনিয়র কয়েকজন কর্মকর্তা। কাজ শুরুর আগেই  চাঁদাবাজদের ভাগ বুঝে নিতে ইন্ধন জোগাচ্ছে তারা। আবার বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে বোঝাচ্ছে এ সময়ে এমন কোনো ঝুঁকি নিয়ে প্রকল্প উদ্বোধন করা ঠিক হবে না যা সরকারকে নতুন করে বিতর্কে ফেলবে। সব মিলে ঘোষিত দিনে প্রকল্পের উদ্বোধন করা যাবে কিনা বা এ নিয়ে আনাকাক্সিক্ষত কোনো পরিস্থিতির জন্ম হবে কিনা তা নিয়ে ক্যাম্পাস জুড়ে এক ধরনের চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। 
এদিকে বিশ^াবদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা সব বিতর্ক পেছনে ফেলে কাজের বাস্তবায়ন চান। তাদের বক্তব্য হচ্ছে বিশ^বিদ্যালয়ের স্বার্থেই এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এটি কোনো গোষ্ঠি বা শ্রেণি স্বার্থের ব্যাপার নয়। তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনে মাঠে নামবেন বলে দাবি করেন কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী। 

এ দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের আর একটি সূত্র বলছে, প্রকৌশল শাখার যে অংশটি কাজে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে তারা মূলত: বিএনপি- জামাতের সমর্থক। তারা কৌশলে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এ প্রকল্প আটকে দিতে চাচ্ছে। আর এ কাজে সরকারী দলের মাঝে মিশে থাকা সুবিধাভোগী একটি শ্রেণির উপর ভর করে স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা করছে। সব মিলে কাক্সিক্ষত প্রকল্পের উদ্বোধন করা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। 

উল্ল্যেখ্য, রাজধানীর অদূরে সাভারে ৬৯৭.৫৬ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ৬ টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগ চালু রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। বর্তমানে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যায় প্রায় ১৫ হাজার। শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছে প্রায় ৭ শত। বিশ্ববিদ্যালয়টির সুবর্ণজয়ন্তী প্রাককালে “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প” একনেকের সভায়  এ প্রকল্পটি পাশ করা হয়েছিলো। 


আরও পড়ুন