দেশে এখনো মাঙ্কিপক্সের কোনো রোগী ধরা পড়েনি : বিএসএমএমইউ ভিসি 

news paper

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৪-৫-২০২২ দুপুর ১:১০

8Views

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে এখনো কোনো মাঙ্কিপক্সের রোগী ধরা পড়েনি। আমরা মাঙ্কিপক্স ভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুত আছি। একই সঙ্গে দেশের মানুষকে যে কোনো ধরনের গুজব বা আতংক এড়িয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। মঙ্গলবার (২৪ মে) বিএসএমএমইউর সি ব্লকের ডা. মিল্টন হলে মাঙ্কিপক্স নিয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স থেকে ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দেয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে অথবা সম্ভব হলে চার দিনের মধ্যে এই টিকা ব্যবহার করতে হবে।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এফডিএ গুটিবসন্ত বা মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের জন্য উচ্চঝুঁকিতে থাকা প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেয়ার জন্য একটি লাইভ, নন-রিপ্লিকেটিং স্মলপক্স এবং মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে। সিডোফোভির মাঙ্কিপক্সের জন্য অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ স্মলপক্স ভ্যাকসিন, মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিন উভয়ই লাইভ অ্যাটেনুয়েটেড ভ্যাক্সিনিয়া স্ট্রেন থেকে উদ্ভূত।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, এই ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড গড়ে ১২ দিন, ৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত। প্রড্রোম ১ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হয়। জ্বরজনিত অসুখের সঙ্গে ঠাণ্ডা লাগা, ঘাম, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, ফ্যারিঞ্জাইটিস, শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হয়ে থাকে।

মাঙ্কিপক্সের পরিচিতি বর্ণনা করে তিনি বলেন, মাঙ্কিপক্স একটি ডিএনএ ভাইরাস। কাউপক্স, ভ্যাক্সিনিয়া এবং ভ্যারিওলা (স্ম্যালপক্স) এই গ্রুপের ভাইরাস। এটি একটি জুনোটিক ভাইরাস যার প্রাথমিক সংক্রমণ সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বা সম্ভবত তাদের অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে ঘটে বলে বিশ্বাস করা হয়। জংলি কুকুর, ইঁদুর, খরগোশ, কাঠবিড়ালি, বানর, সজারু ইত্যাদি এর উদাহরণ। ১৯৫৮ সালে ল্যাবরেটরিতে প্রথম বানরের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম দেখা দিয়েছিল বলে ১৯৭০ সালে এর নামকরণ হয় মাঙ্কিপক্স।

এই ভাইরাসের দুটি স্ট্রেইন আছে জানিয়ে তিনি বলেন, কঙ্গো বেসিন স্ট্রেন পশ্চিম আফ্রিকার স্ট্রেইনের চেয়ে বেশি মারাত্মক। এই ভাইরাস পশু থেকে প্রাণি এবং পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণই সবচেয়ে ভয়ংকর মাধ্যম বলে বিবেচিত। ৯০ শতাংশ রোগী ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। গুটিবসন্তের টিকা বন্ধ করা এর একটি কারণ হতে পারে। আফ্রিকাতে ১ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুর হার রিপোর্ট করা হয়েছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে প্রাদুর্ভাবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। জটিলতার মধ্যে রয়েছে স্থায়ী ক্ষত, বিকৃত দাগ, সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কেরাটাইটিস, কর্নিয়ার আলসারেশন, অন্ধত্ব, সেপ্টিসেমিয়া এবং এনসেফালাইটিস।

শারফুদ্দিন বলেন, লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি জ্বরের পরে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে ঘাড়ের চারদিকে দেখা যায়। ১ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ফুসকুড়ি তৈরি হয়। ফুসকুড়ি প্রায়ই মুখে শুরু হয় এবং তারপর শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে। এগুলো মুখমণ্ডল, শরীর , হাত-পা এবং মাথার ত্বক জড়িত। হাতের তালু এবং পায়ের পাতায় ক্ষত দেখা যেতে পারে। এগুলি ব্যথাহীন হয়। যদি ব্যথা থাকে তাহলে এটি সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হতে পারে। চুলকানি থাকতে পারে। হেমোরেজিক এবং ফ্ল্যাট ফর্ম, যা গুটিবসন্তের সঙ্গে দেখা যায়, মাঙ্কিপক্সের রোগীদের ক্ষেত্রে এটা দেখা যায় না। এই রোগ সাধারণত সেল্ফ লিমিটেড।

তিনি আরো বলেন, আক্রান্ত বা সন্দেহযুক্ত প্রাণির সংস্পর্শে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। প্রাণির কামড়, আঁচড় এবং লালা বা প্রস্রাবের স্পর্শ থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। আর আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে সব ক্ষত শুকানো পর্যন্ত আইসোলেশন আর কোয়ারেন্টাইন করে চিকিৎসা করা আবশ্যক।

সম্মেলনে বিএসএমএমইউর অধ্যাপক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।


আরও পড়ুন