খাদ্য ঘাটতি মেটাতে ইউক্রেনের বন্দরগুলো মুক্ত করা প্রয়োজন

news paper

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯-৫-২০২২ দুপুর ১:৩৫

3Views

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে। দেশে দেশে দেখা দিয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বেড়ে গেছে জীবনযাত্রার ব্যয়। মানুষের মধ্যে বেড়েছে ক্ষোভ-হতাশা। বিশ্বে খাদ্য চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে রাশিয়া ও ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।

ইউক্রেন এবং রাশিয়া বিশ্বব্যাপী খাদ্যের ১০ ভাগের এক ভাগ সরবরাহ করে। তারা বিশ্বের গম রপ্তানির ৩০ শতাংশের পাশাপাশি সূর্যমুখী তেলের ৬০ শতাংশ উৎপাদন করে। কমপক্ষে ২৬টি দেশ তাদের অর্ধেকেরও বেশি খাদ্যশস্যের জন্য রাশিয়া এবং ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা বলছে, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ জমি ২০২২ সালের মৌসুমে অনাবাদি বা চাষের আওতার বাইরে থেকে যাবে। সম্প্রতি জি-৭ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ইউক্রেনের বন্দর রাশিয়া দ্বারা অবরুদ্ধ থাকা এবং খাদ্যশস্য রপ্তানি আটকে থাকার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। যদিও রাশিয়ান কৃষকরা এখনও উৎপাদন করতে পারছেন। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মস্কোর ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের বন্দরগুলো অবরোধ করে রেখেছে রাশিয়া। ফলে ইউক্রেন থেকে অন্য কোনো দেশে খাদ্যপণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তাই প্রশ্ন ওঠেছে কীভাবে ইউক্রেনের বন্দরগুলো মুক্ত করা যায়।

ইউক্রেনের বৃহত্তম বেসরকারি শিপিং-টার্মিনাল অপারেটর ও ট্রান্সইনভেস্ট সার্ভিসের মালিক আন্দ্রেই স্ট্যাভনিটসার বলেন, ইউক্রেনের শস্য রাখার গুদামগুলো সম্পূর্ণ ভর্তি হয়ে গেছে। এখানে এক বছরের ফসল ধরে রাখার মতোও যথেষ্ট জায়গা নেই। যদি এগুলো সংরক্ষণ করা না যায় তাহলে শিগগির নষ্ট হতে শুরু করবে। অন্যদিকে রাশিয়া তাদের পণ্য কৃষ্ণ সাগর দিয়ে রপ্তানি করতে পারছে। এই মুহূর্তে ইউক্রেনের ওডিশা বন্দরটি অবরোধ থেকে মুক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এ বিষয়ে ট্রেন ও সড়ক ব্যবহারের মাধ্যমে বিকল্প খুঁজছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু এ পথে ইউক্রেনের রপ্তানির সামান্যই সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ইউক্রেনের শস্যের সিংহভাগ বের করতে হলে অবশ্যই সমুদ্র পথকে ব্যবহার করতে হবে। তবে এটা কীভাবে সম্ভব? কিছু লোক এখন ওডিশা ও আশেপাশের বন্দরগুলো থেকে পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে নৌ বাহিনীর বহর ব্যবহারের কথা বলছেন।

১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় পারস্য উপসাগরের তেলের ট্যাঙ্কারগুলোকে রক্ষা করতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয় তেমনটা এখানে উপযুক্ত নাও হতে পারে। কারণ ইরান পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ছিল না, কিন্তু রাশিয়ার কাছে এই শক্তিশালী অস্ত্র রয়েছে।

২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। এখান থেকেই কৃষ্ণ সাগরে আধিপত্য বিস্তার করছে মস্কো। একটি যুদ্ধ জাহাজ ডুবে যাওয়া সত্ত্বেও সাগরটি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রুশ বাহিনী। যুদ্ধ জাহাজ, সাবমেরিন ও ক্ষেপণাস্ত্রের বহর নিয়ে দেশটির নৌ বাহিনী খুবই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। রাশিয়া আক্রমণ বন্ধ করলেও জাহাজগুলো বন্দরে বসে থাকতে পারে। তাছাড়া ওডিশা বন্দরটি রাশিয়ার ঘাঁটির আওতার মধ্যেই রয়েছে।

রাশিয়ার উভয় দিকের হামলা ঠেকাতে ইউক্রেন এরই মধ্যে জলসীমায় সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ওডিশার সৈকত, বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। এদিকে বন্দরটিতে এখনো ৮০টি বিদেশি জাহাজ আটকা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু জাহাজ ডুবে গেছে।

কূটনৈতিকরা জানিয়েছেন, গম সরবরাহের জন্য যদি সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করা হয় তাহলে রাশিয়া ওডিশায় হামলা চালাতে পারে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, কৃষ্ণ সাগরে সামরিক কার্যক্রম অর্থাৎ ডি-মাইনিং শুরু করা হবে।

পণ্যবাহী জাহাজগুলোর পাহারার ক্ষেত্রে ন্যাটোর নৌ বাহিনীর উপস্থিতির প্রয়োজন হতে পারে। ১৯৩৬ সালের কনভেনশন অনুযায়ী, তুর্কি প্রণালীতে জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অনুচ্ছেদ ১৯ এর মাধ্যমে তুরস্ক যুদ্ধ জাহাজ চলাচল বন্ধ করেছে। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাশিয়া। অন্য কোনো রাষ্ট্রও সেখানে যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করতে পারে না।

আশার কথা হলো পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে অন্য রাষ্ট্রগুলোর চাপে কিছুটা সহনশীল হতে পারে রাশিয়া। অনেকেই মনে করছেন, পুতিন বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট তৈরি করতে চান না। জাতিসংঘের মহাসচিব একটি চুক্তির কথা নির্দেশ করেছেন। যাতে বলা হয়, মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করলে বন্দর থেকে খাদ্য সরবরাহ করতে দিতে পারে।

অনেক কর্মকর্তারাই মনে করছেন পুতিন ইউক্রেনকে অর্থনৈতিকভাকে পঙ্গু করে দিতে পারে। পশ্চিমা কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, ইউক্রেনের বন্দরগুলো চালু করা বাস্তব সম্মত বিকল্প হবে না। একজন ইউক্রেনীয় বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা গুলি চালানোর প্রস্তুতি না নিলে কোনো জাহাজই চলাচল করতে পারবে না। রাশিয়ার পরাজয়ই মুক্তির একমাত্র উপায়।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট


আরও পড়ুন