টেন্ডার প্রক্রিয়ার বিধি লঙ্ঘন করছে ব্যানবেইস

news paper

সাদিক হাসান পলাশ

প্রকাশিত: ১৬-৫-২০২২ রাত ৮:১৬

7Views

একটি বিদেশি ব্র্যান্ডকে কাজ দিতে নামমাত্র দরপত্র আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। দরপত্রে এমন কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে যা ঐ বিদেশি ব্র্যান্ড ছাড়া আর কেউ অংশ নিতে পারবে না। ফলে দরপত্রে প্রতিযোগিতার সুযোগ কমবে এবং অন্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ সংকুচিত হবে। এই জন্য দরপত্রটি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

দরপত্র এখন ডিজিটালি হয়। আর এই কাজটি করে থাকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)। অনেক প্রতিষ্ঠান নানা নিজেদের কোম্পানিকে কাজ দিতে নানা ধরণের শর্ত জুড়ে দিচ্ছে ই-টেন্ডারে।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, পিপিআর-এর নিয়ম অনুযায়ী কোন ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করা যায় না দরপত্রে। কেউ যদি  একটি কোম্পানি লিখে থাকে তবে এটা নিয়ম অনুযায়ী করতে পারে না। নাম উল্লেখ করলে এটা একজনের জন্য করা হচ্ছে। এতে স্বচ্ছতা ব্যাহত হয় ও ম্যানুপুলেশেনের সুযোগ থাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যানবেইস ৩১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইইআইএমএস)’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর।প্রকল্পের অধীনে তারা দুই ধাপে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনবে। হার্ডওয়্যার, সার্ভার কক্ষের জন্য সরঞ্জাম, রাউটার, ফায়ারওয়্যাল, কানেকটিভিটি সুইচ, ইউপিএস, এভিআর, ডিজেল জেনারেটরসহ ৬৩ ধরণের আইটেম কেনা হবে।

ব্যানবেইস-এর দরপত্রে দেয়া টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশনে দেখা গেছে, ২৩ নম্বর পাতায় আইসোলেশন ফায়ারওয়েল কেনার কথা বলা হয়েছে। এর ২০ নম্বর সিরিয়ালে লাইসেন্সিং কেনার কথা বলা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে স্পস্ট আমেরিকান ব্র্যান্ড সিসকোর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- একটা লাইনে বলা হয়েছে, সিসকো ফায়ারপাওয়ার ১০০০ স্ট্যান্ডার্ড এসএ লিসেনসর ইকিউভ্যালেন্ট অর বেটার।

২৭টি আইটেমে ৩৩ বার সিসকোর কথা উল্লেখ আছে। যে ফার্ম কাজ করবে তার ১০ বছরে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এমন শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের এই অভিজ্ঞতা নেই। বড় টেন্ডার দুই প্যাকেজে সরঞ্জামাদি কেনার কথা বলা হয়েছে। এটা দুই লটে না কিনে একাধিক লটে কেনার দাবি করেছে অনেকে।  দরপত্রে এমন শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে তাতে অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। সবাইকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত সহজ করার দাবি সংশ্লিষ্টদের।

দরপত্র দুটিতে অংশ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে সাতটি প্রতিষ্ঠান। প্রাক্-দরপত্র বৈঠকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়গুলো বাতিল করার অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে তা রাখা হয়নি।

সরকারের ই-প্রকিউরমেন্ট ওয়েবসাইটে প্রথম ধাপে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনার জন্য গত ৬ ও ৭ এপ্রিল দুটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। অংশ নেওয়ার শেষ সময় ১২ মে ও ১৬ মে। ব্যানবেইস তাদের দরপত্র ও পণ্যের বিবরণে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নেটওয়ার্কিং পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিসকোর নাম বারবার উল্লেখ করেছে। দরপত্রে লেখা হয়েছে, আন্তর্জাতিক নামী ব্র্যান্ড সিসকো বা তার সমতুল্য মানের পণ্য হতে হবে। সিসকো বাংলাদেশেও ব্যবসা করে।

দরপত্রে একই ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করা প্রসঙ্গে ব্যানবেইসের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার নজরে নেই পিডি’র (প্রকল্প পরিচালক) সঙ্গে কথা বলেন। উনি এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালক মো. শামছুল আলমকে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে উপ-প্রকল্প পরিচালক ড. মো. নাসির উদ্দিন গণি বলেন, পিপিআর-২৯ এর নম্বর আইনে লেখা আছে কারিগরি বিষয় বোঝানোর জন্য  সিমিলারিটি বা বেটার বোঝাতে এটা লেখা যেতে পারে। নির্দিষ্ট কোম্পানির লেখা যায়। আমরা ঐ কোম্পানির পণ্য নেবো ব্যাপারটা এমন নয়।

তবে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন জানায়, দরপত্রে স্পেসিফিক কোন কোম্পানির নাম উল্লেখ করা যাবে না। এটা স্পষ্ট পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা লঙ্ঘন। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, দরপত্রে চাহিদা লিখতে পারা যাবে। কিন্তু কোন কোম্পানির পণ্যের নাম দরপত্রে উল্লেখ করা যাবে না। এটা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা লঙ্ঘন। এটা টিকবে না।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ বলা আছে, দরপত্রে প্রতিযোগিতা সীমিত করতে পারে, এমন কোনো শর্ত আরোপ করা যাবে না। একই আইনের বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো পণ্যের ট্রেডমার্ক বা পণ্যের ব্যবসায়িক নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা যাবে না।

সরকার গত বছর জুনে যে পরিপত্র জারি করে তাতে বলা হয়, দরপত্রদাতাদের কাছে সহজবোধ্য করতে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্যের বিবরণ উল্লেখ করা যাবে। তবে সেখানে ‘একইরূপ বা সমতুল্য’ শব্দ যোগ করতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই বিশেষ ব্র্যান্ড বা উৎসের প্রতি আনুকূল্য প্রদর্শনের জন্য উল্লেখ করা যাবে না। পরিপত্রে এটাও উল্লেখ ছিল যে দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে কোনো কোনো ক্রয়কারী পণ্যের ব্র্যান্ড নাম, মডেল, নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের নাম উল্লেখ করছে, যা বিধান পরিপন্থী।


আরও পড়ুন