বিরামপুরে সনদপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট ছাড়াই কাজের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে চলছে ফার্মেসি ব্যবসা

news paper

জাকিরুল ইসলাম, বিরামপুর

প্রকাশিত: ১৫-৫-২০২২ দুপুর ১২:৪৪

9Views

একজন রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট ছাড়া কোনোভাবেই ফার্মেসি পরিচালনা করা যাবে না। এমনকি ফার্মেসির অনুমোদন নিতে হলেও ফার্মেসির উদ্যোক্তাকে নিজে ফার্মাসিস্ট হতে হবে। অন্যথায় একজন ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দিয়ে তাকে সাথে নিয়ে যেতে হবে। তবে আইনের এই বাধ্যবাধকতা গৌণ বিষয়ে পরিণত হয়ে ফার্মাসিস্ট ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার অধিকাংশ ফার্মেসি। ফার্মেসিতে কাজের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই চলছে এ ব্যবসা।

প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানজনক ব্যবসার মধ্যে ফার্মেসি ব্যবসা অন্যতম। এই ব্যবসা করার জন্য বাধ্যতামূলক হচ্ছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে ড্রাগ লাইসেন্স নেয়া এবং প্রত্যেক ফার্মেসিতে একজন সনদপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট থাকা। অথচ অনেক ফার্মেসিতে কেমিস্ট বা সনদপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট না থাকলেও সবধরনের রোগের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। প্রশাসনের কোন রকম নজরদারি না থাকায় আইনের তোয়াক্কা না করেই অলিগলিতে গড়ে উঠেছে এসব ফার্মেসি।

এছাড়াও সরকারি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিকসহ সব ধরনের ঔষধও বিক্রি করছেন ওইসব ফার্মেসির মালিকরা। বিক্রি করা হচ্ছে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ঔষধও। তাছাড়া অবাধে বিক্রি হচ্ছে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ও মহিলাদের গর্ভপাতের ঔষধ। এতে করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছে উপজেলাবাসী। আর এভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ঔষধ প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ।

এদিকে সনদপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট, ড্রাগ লাইসেন্স না থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রয়ের মতো অপরাধে বিরামপুর উপজেলা প্রশাসন নামিদামী ফার্মেসিসহ বিভিন্ন ফার্মেসিতে জরিমানা করলেও কোনো কাজে আসেনি।

সরেজমিন দেখা যায়, বিরামপুর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের অলিগলিতে ছোটবড় সব মিলিয়ে ২ শতাধিকের বেশি ফার্মেসি গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে অধিকাংশ ফার্মেসিতে নেই সনদপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট কিংবা ড্রাগ লাইসেন্স। এদের অনেকের বিরুদ্ধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন রোগের স্পর্শকাতর ঔষধ বিক্রিরও অভিযোগ আছে। একই চিত্র উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের হাট-বাজার ও গ্রামে গড়ে ওঠা ফার্মেসিগুলোতেও।

এছাড়াও পৌর শহরের বিভিন্ন ফার্মেসিতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অবৈধভাবে বাজারজাত করা বিদেশি ঔষধ। এসব ঔষধ সংরক্ষণও করা হয় যেনতেনভাবে। আবার ক্রেতাদের কাছ থেকে বিদেশি ওষধ বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

পৌরশহরের মেসার্স জলিল ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী শাহ্জালাল সরকার সুইট বলেন, ঔষধ ব্যবসা পরিচালনা করতে সরকারি যে সকল পেপার্স প্রয়োজন তা সবই আমার হালনাগাদ রয়েছে। আমার দোকানে সব সময় ফার্মাসিস্ট থাকে এবং রেজির্স্টাট চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এ্যান্টিবায়োটিক ওষধ দেয়া হয় না।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এসএম সুলতানুল আরেফিন বলেন, ফার্মেসিতে তিনিই ঔষধ বিক্রি করতে পারবেন, যার ফার্মাসিস্ট ট্রেনিং আছে এবং যিনি ড্রাগ লাইসেন্স পেয়েছেন। ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া ঔষধের ব্যবসা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং আইনগত দন্ডনীয় অপরাধ।

এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরওয়ারুল ইসলাম মুক্তা বলেন, বিদেশি ঔষধগুলো কোল্ড চেইন মেনটেইন করে তৈরি করা হয়। সেগুলো আমাদের দেশে যারা বিভিন্ন পন্থায় নিয়ে আসে, তারা মূলত মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে। কারণ, এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা মানা হয়না। তাই বেশির ভাগ ঔষধই নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ, যা খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে হতে পারে। এমনকি লিভারেরও ক্ষতি হতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার বলেন, বিষয়টি জানলাম, নিয়মের ব্যত্যয় হলে আমরা ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিষয়টি মনিটরিং করা হবে।


আরও পড়ুন