গাজীপুরের বাতাসে বিষ সবুজ, অবশিষ্ট ৩ ভাগ : সবুজ আন্দোলন

news paper

নিজস্ব সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৪-৫-২০২২ রাত ৮:৪৬

3Views

পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে। সবুজ আন্দোলন গাজীপুর জেলা শাখার উদ্যোগে আজ শনিবার (১৪ মে) গাজীপুর জেলার পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। বিশিষ্ট সমাজসেবক ও সাংবাদিক মো. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার।
 
উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের পরিচালক অভিনেতা উদয় খান। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক আলহাজ মো. লেহাজ উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- গনসেবা ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ডা. মো. সফিকুল ইসলাম, বিশিষ্ট সমাজসেবক শরিফুল ইসলাম শরীফ। সঞ্চালনা করেন গাজীপুর জেলার সমন্বয়কারী সাংবাদিক মনির হোসেন মানিক।
 
ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল এলাকা হিসেবে সারাদেশে সুখ্যাতি রয়েছে। ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণশীল  অর্থনৈতিক এলাকা একদিকে যেমন জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন এগিয়ে চলেছে, অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্যয় রূপ নিয়েছে ভয়াবহ আকার। বিগত নব্বই দশকে এসে বিভিন্ন কলকারখানা গড়ে তোলা শুরু হয়। এক সময় গাজীপুরে ছোট-বড় প্রায় ২০টি নদী, ৩০টি খাল ও শতাধিক লেক ছিল। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিলাঞ্চল ছিল, যার অধিকাংশই এখন ইতিহাস।
 
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বংশী, বালু, বানার লেয়ার, গারগারা, চিলাই, খিরু, টঙ্গী, নাগদা, নলজুরি, পারুনী, লাবুন্ধা, লৌহজং, শালদহ, সুতি নদী অন্যতম। এছাড়াও বিলাইজুড়ি, মনপুরা খাল, মকশবিল ও বেলাই বিল অন্যতম। সরকারি ফরেস্টের জায়গা দখল করতে করতে এখন যা নিয়মে পরিণত হয়েছে। সবুজায়ন নেই বললেই চলে। গাজীপুরে ইতোমধ্যে ৬২  হাজার হেক্টর জায়গা দখল হয়েছে।
 
নদীর বর্তমান অবস্থা : ইতোমধ্যে সেরমা ও লবনদহ নদী বিলীন হয়েছে শালদহ নদীর গতিপথ হারিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে মাছ চাষের খালে পরিণত হয়েছে। বালু নদী সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দখলে দূষণে জর্জরিত। তুরাগ নদী শিল্পাঞ্চল সম্প্রসারণের  ফলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদী সহ সকল নদীর পানি কলকারখানার বর্জে বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। নদীগুলোর পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ 0% থেকেও কম। মাছ ও জলজ প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। 
 
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গাজীপুর জেলার সবুজায়নের পরিমাণ ছিল ৪০ ভাগ। নব্বইয়ের দশকে এসে যা দাঁড়ায় ২০ ভাগ। গত ১০ বছর আগেও ১৪ ভাগ সবুজায়ান অবশিষ্ট ছিল। এখন মাত্র ৩ ভাগ বনাঞ্চল  রয়েছে। বাতাসে রয়েছে বিষ।যার মূল কারণ বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অনিয়ম ও লোকবলের অভাব। পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রভাব সব থেকে বেশি কাজ করেছে বনাঞ্চল ধ্বংস করার জন্য।
 
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় :
 
১/ প্রত্যেকটি নদীর সীমানা পিলার নির্ধারণ এবং দখলমুক্ত করতে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
 
২/ নদীর দুই পাড় ধরে বৃক্ষরোপন করা  ও মানুষ চলাচল করার জন্য হাঁটার রাস্তার ব্যবস্থা করা।
 
৩/ শিল্পাঞ্চল এলাকার জন্য "বাইপাস ক্যানেল"পদ্ধতি অবলম্বন করে সিইটিপি ফর্মুলা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং সিসি ক্যামেরা সংযুক্ত করা।
 
৪/ ম্যাপ অনুযায়ী দখলকৃত সকল লেক উদ্ধার করা এবং খননের উদ্যোগ নেওয়া।  সরকারি পুকুরের সংখ্যা নির্ধারণ করা এবং দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
 
৫/ উপজেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য সুনিদৃষ্ট রোড ম্যাপ তৈরি করা এবং সবুজায়ন নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা।
 
৬/ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা দিয়ে যে সকল খাল ছিল তা পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করা এবং নদী গুলোর খনন কাজ শুরু করা।
 
৭/ গাজীপুরের নদী ও খালের জায়গা পুনরুদ্ধারে আলাদা ভাবে শক্তিশালী কমিশন গঠন করা যা সকল রকম রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা।
 
৮/ সরকারি ফরেস্টের জায়গা পুনরুদ্ধার করা এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল সম্প্রসারণে জায়গা নির্ধারণ করা, ভূমিদস্যুদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা।
 
৯/ বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়নের বর্জ্য রাখার জন্য জায়গা অধিক গ্রহণ করা এবং সবুজায়ন বৃদ্ধি করতে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
 
১০/ সরকারি কর্মকর্তাদের সকল রকম দুর্নীতি বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে অর্থ ও লোকবল নিয়োগ করতে হবে।
 
অনুষ্ঠানে আলহাজ মো. লেহাজ উদ্দিনকে গাজীপুর জেলার আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয়। এ সময় জেলা ও উপজেলার সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন