জসিম উদ্দিনের প্রতারণার সাতকাহন (১)

একই জমি মর্টগেইজে দুই ব্যাংকের ঋণ!

news paper

জাহিদুল ইসলাম শিশির

প্রকাশিত: ২৫-৪-২০২২ দুপুর ৪:১১

8Views

একই জমি দুই ব্যাংকে মর্টগেইজ দেখিয়ে আভিনব প্রতারণার মাধ্যমে ঋণ জালিয়াতির এক তথ্য এসেছে দৈনিক সকালের সময়ের হাতে। এ প্রতারণার মূল খলনায়ক মো. জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। তার পিতার নাম আব্দুল আজিজ সরদার। তিনি রাজধানীর ডিস্টিলারি রোডের বাসিন্দা। জসিম প্রথমে আরব বাংলাদেশ ব্যাংকের (এবি ব্যাংক) ফতুল্লাহ শাখা থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা এবং পরে একই মর্টগেইজ দেখিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড গেন্ডারিয়া শাখা থেকে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঘটনা সামনে এলে এবি ব্যাংক একটি মামলা করলেও ইসলামী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা বিষয়টি পুরোপুরি চেপে বসে আছে বলে জানা গেছে।  তথ্যসূত্রে জানা যায়, মর্টগেইজ রাখা সেই জমির বড় একটি অংশ তিনি আবারো প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রিও করে দিয়েছেন। ব্যাংকিং খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মহল বলছেন, এমন ঘটনা কোনোভাবেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া ঘটানো সম্ভব নয়।

সেই সাথে ঋণ ইস্যুকারি ব্যাংক দুটির সংশ্লিষ্ট শাখার তৎকালিন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সততা দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আবার অনেকেই বলছেন প্রতারকের কাছ থেকে মোটা অংকের কমিশন বা ঘুষ নিয়েই এমন ঘটনার জন্ম দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক দুটির কর্মকর্তারা। এতে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ও দায়বদ্ধতার প্রশ্নটিও সামনে আসছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মো. জসিম উদ্দিন প্রোপ্রাইটর মেসার্স সদরপুর স্টিল হাউজ, জামান এন্ড ব্রদার্স মার্কেট ডিএন রোড, থানা ফতুল্লাহ এই ঠিকানা দেখিয়ে এবি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকে নিউ সদরপুর স্টিল নামে ঋণ ইস্যু করা হয়েছে। যে জমি মর্টগেইজ দেখিয়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে নিউ সদরপুর স্টিল এর জসিম উদ্দিন সেই জমি আগেই আরব বাংলাদেশ ব্যাংক ফতুল্লা শাখায় সদরপুর স্টিল এর নামে দেখিয়ে এবি ব্যাংকে মর্টগেইজ দিয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে একই ব্যক্তি। একই জমি মর্টগেইজ রেখে দুটি ব্যাংক কীভাবে ঋণ দিল এ প্রশ্নের উত্তর জানতে ইসলামী ব্যাংক গেন্ডারিয়া শাখায় গেলে শাখা ম্যানেজার জানান, এ ঋণটি তার সময় হয়নি।

যিনি ঋণ দিয়ে গেছেন তিনি এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন। তবে নিউ সদরপুর স্টিলের নামে একটি ঋণ রয়েছে। আমার জানা মতে, তারা নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করছে। কিস্তি পরিশোধের বিষয় নয়, নিয়ম মেনে ঋণটি হয়নি এখানে মর্টগেইজ জালিয়াতি হয়েছে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি জেনে পরে কথা বলতে হবে। একই বিষয়ে জানতে চাইলে নিউ সদরপুর স্টিলের নামে ঋণ গ্রহীতা জসিম উদ্দিন  জানান, এটা ব্যাংকের সাথে আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ নিয়ে গণমাধ্যমের মাথাব্যথার কিছু নেই। একই জমি দুই ব্যাংকে কীভাবে মর্টগেইজ দিলেন আর কীভাবে উভয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা ঋণ অনুমোদন করলো- এমন প্রশ্নে একই ধরনের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, শাখা কর্তৃপক্ষ খুশি হয়েইতো ঋণ দিয়েছে।

আমি ঋণ পরিশোধ করে দিচ্ছি। ঋণ পরিশোধ করলে এবি ব্যাংক কেন মামলা করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এ দিকে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু ব্যাংকের সাথে প্রতারণা করেছেন জসিম উদ্দিন এমন নয়, ব্যাংকের শাখায় মর্টগেইজ রাখা লালবাগ এলাকার দুটি জমি ইতোমধ্যে তিনি প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রিও করে দিয়েছেন। এ কাজে কখনো তিনি নিজ স্ত্রী আবার কখনো মাকে ব্যবহার করেছেন। 


আরও পড়ুন