বহু অব্দ ধরে আমার একটা 'মানুষ' দেখার বড় শখ

news paper

মো. আরাফাত রহমান, জাককানইবি

প্রকাশিত: ১০-৪-২০২২ দুপুর ২:২৯

16Views

একটা বিশাল আন্দোলন করলে কেমন হয় ? যে আন্দোলনের স্লোগান হবে, 
"তাঁদের মাঝে আমি কই?
চল আমরা মানুষ হই"!!
এত, এত প্রাণীর মধ্যে মানুষের সংখ্যা অতি নগন্য । অদৃশ্য বললে কি ভুল হবে? কেউ হিংস্র প্রাণীর চরিত্র বহন করে। কেউবা আবার  জ্ঞানে সিদ্ধ প্রমত্তের চরিত্র বহন করে। ধরাধামের থিয়েটারে কিছু প্রাণী আছে মুখোশ পরে খুব ভাল অভিনয় করে। কৃত্রিম হাসির জন্য কেউবা হয় জনপ্রিয়। তাঁরা কতশত নির্বোধ প্রাণী হয়ে, নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পছন্দ করে, সেটা বলা বাহুল্য। 

বহু অব্দ ধরে আমার একটা মানুষ দেখার বড় শখ..!
কেমন হয় তাঁদের সাংস্কৃতি?
কেমন তাঁদের মৌলিক চরিত্র? 
কোথায় তাঁদের বসবাস? খুব জানতে ইচ্ছে হয়।


ক্ষনস্থায়ী দেহে মূল্যবান ধাতব লাগিয়ে কিছু প্রাণী জগৎ সংসারকে জানাতে চায় আমি তোমাদের চেয়ে অধিক সম্পদশালী, আমি মরলে আমার শরীর পোকায় খাবে না, জ্বলজ্বল পাবকে পুড়বে না। ছি ছি আমিতো মরবইনা। আমি হাজার বছর টেকসই আরও একটি নিবাস তৈরি করব। সে পারলে দুনিয়ার একভাগ কাগজের কড়ি দিয়ে কিনে ফেলবে। তার যে এখনো কয়েক লক্ষ বছর মৃত্তিকায় থাকতে হবে।


আমি একবার বৈদ্যশালায় গিয়েছিলাম মানুষের খোঁজে। ওখানে না-কি ডাক্তার নামে অনেক মহান কর্মজীবী থাকে। সেখানে যার যত বড় ডিগ্রি তার ততই খাজনা। শল্যচিকিৎসকরা যে কেনো কারণে চামড়া কাটতে পারলেই  গরীবের সম্পদ শুষে নিতে পারে। আবার কতশত ফাঁদ তৈরি করে রেখেছে দেওয়ালের আড়ালে । নিজেকে সামলিয়ে অবশেষে দূর্বল নিজ গৃহে গিয়ে দেহত্যাগ করে। এ কেমন বৈদ্যশালা ডাক্তার তোমার?  প্রচন্ড অপচর্চার ভিড়ে মানুষ পেলাম না। 

মানুষ কি তাহলে এখনো নিষ্পাপ মাতৃগর্ভে ভ্রণ রুপে অধিষ্ঠিত? নাকি এখনো আত্মা রুপে অদৃশ্য  হয়ে রয়েছে  স্রষ্টার কাছে?
আবার এটাও হতে পারে,  নিষ্ফলা ভূমিতে যেমন বেকার আগাছা জন্মে, কিন্তু সেখানে মাটির পিএসের ব্যালেন্স, কার্বণের পরিমাণ, আবহাওয়া, মাটির বিষাক্ততা সব কিছু দূর্ষিত থাকার পরেও আগাছা গুলো জন্ম নেয়। দুঃখের বিষয় এমনতর জমিতে কখনো উপকারী বৃক্ষ জন্মাতে পারেনা।শুধু আগাছা জন্মে, সবুজ আগাছা। গবাদিপশু তাদের দেখে খুব খুশি হয়। ধরায় কি তাহলে আর এক খন্ড উর্বর জমি নাই?

একদিন মস্ত জ্ঞান পিপাসা লাগল, খুঁজতে খুঁজতে গিয়েছিলাম সমাজের সবচেয়ে বড় শিক্ষালয়ে। সেখানে বিশাল জ্ঞানী ব্যক্তির সমারোহ । ভেবেছিলাম সেখানে কিছু মানুষ জীবিত থাকতে পারে। কথা বলব,চর্চা করব,পরিচিত হব,আর মানুষ হব। একি অবস্থা তোমার পাঠশালায়? গন্ধ পরিবেশ, নোংরা সিস্টেম, দূর্বল ভিত্তি। কিছু কিছু শব্দ উচ্চারণ করতে খুব ভয় হয়,কষ্ট হয়। এখানে সবাই কোনো একটা বা একাধিক নেশায় আসক্ত। ভাল নাম্বার পেয়ে কিছু ব্যাক্তি নিজেকে মানুষ দাবি করে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিছু প্রাণী নিজেদেরকে মহামানব বলাতে বাধ্য করে। এখানে সবাই মরিচ বাতি,এক-এক সময় এক একটি রঙে  জ্বলে। কার কোনটি আসল রং বোঝা বড়ই মুশকিল। এখানে থাকতে হলে আপনাকে দৃষ্টিহীন বধির জড় প্রণী হয়ে থাকতে হবে। তার থেকে স্থান ত্যাগ করাই শ্রেয়। 

আমি খুব ক্লান্ত, তৃষ্ণায় ভেতরটা শুকিয়ে গেছে। আমি আর মানুষ খুঁজবো না। দেখবো না তোমরা কোথায় কিভাবে আছো। আমি মানুষ খুঁজতে গিয়ে প্রভাবিত হয়ে পড়ছি। নরম কলিজায় লঘুজ্ঞান বাসা বেঁধেছে কংক্রিটের পিলিয়ার দিয়ে। চোখ গুলো ধারণ করতে পারছে না তোমাদের  মহা কদুক্তি। শ্রবণ তন্ত্র অকালে আত্নহত্যা করেছে। মর্তধামে কায়াতে আমার আর মানুষ দেখা হলো না। আমি আর কখনো মানুষ হতে পারবো না। আমি তো চেয়েছিলাম তোমার অনুকরণ করতে। চেয়েছিলাম একবার মানুষ হতে। তুমি কখনো আমার সাথে দেখা করোনি, বলোনি আসো আমরা সবাই আমাদের মৌলিকত্ব ধরে রাখি। উর্বর মস্তিষ্কের সৎ ব্যাবহার করি। আমি আর কখনো বলবো না, আমি আর কখনো চাইবো না,তবে একটা মানুষ পৃথিবীর জন্য খুব  জরুরী।।

লেখক: 
আবদুল্লাহ আল শাহরিয়ার
চারুকলা অনুষদ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়


আরও পড়ুন