ঢাকা রিজেন্সি হোটেলে বিনিয়োগ

লন্ডন প্রবাসিদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ

news paper

আব্দুল লতিফ রানা

প্রকাশিত: ১৮-১২-২০২১ দুপুর ১১:২৬

12Views

ঢাকা রিজেন্সি হোটেল এন্ড রিসোর্ট লিমিটেডের নামে প্রতারণার মাধ্যে প্রবাসিদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার দায়ে ফেঁসে যাচ্ছেন কোম্পানীর কর্মকর্তাগণ।আর তাদেরকে প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করতে লন্ডনের প্রবাসিদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানী নির্যাতনের অভিযোগেও প্রশাসনের কয়েকজন ব্যক্তি ফেঁসে যাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন। 

সূত্র জানায়, ঢাকা রিজেন্সি হোটের এন্ড রিসোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এক পরিচালকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ মামলায় আদালত জামিন দেওয়ায় আদালত ব্যাখ্যা চেয়েছেন। কোন ক্ষমতা বলে জামিন দেওয়া হয়েছে তা হাইকোট জানতে চেয়েছেন। ওই দুই কর্মকর্তা হলেন, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির রেজা ও পরিচালক ফাহিম আরিফ মোতাহার।মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট সত্যব্রত শিকদারকে দুই সপ্তাহের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে লন্ডন প্রবাসি এম মোহিদ আলী মিঠুর দায়েরকৃত মামলা নং ২৯/২০দায়ের করেন।ধারা ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৫০৬/১০৯ পেনাল কোড -১৮৬০। উক্ত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টেগেশন (পিবিআই) এর ক্রিমিনাল কেস নং ২৭/২০২০, কোর্ড নং ২২ সিএমএম আদাল ঢাকা তদন্ত করেন। উক্ত মামলাটি চলতি বছরের গত ৩ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন শুনানীর দিন ধার্য ছিল। উল্লেখিত দিন পিবিআই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। ফলে আদালত মামলার আসামি মোসলেহ উদ্দিন, কবির রেজা ও আরিফ মোতাহার বিরদদ্ধে দন্ডবিধির উল্লেখিত ধারা মোতাবেক অপরাধের বিচারার্থে আমলে নিয়েছেন বলে আদালত সূত্র জানিয়েছেন। মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ পলাতক। তিনি কোম্পানীর চেয়ারম্যান। শর্ত সাপেক্ষে কবির রেজা  ও আরিফ মোতাহার জামিন নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোর্টের শর্ত সাপেক্ষ বাস্তবায়ন করেননি। 

উচ্চ আদালত -১৪৯ নং মামলা জার্জমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছেন মামলার বাদি। আর ২৩৫/২০১৪ এবং ৮২/২০১৮ নং মামলা বিচারাধীন রয়েছে উচ্চ আদালতে।লন্ডন প্রবাসি এম মোহিদ আলী মিঠু  জানান, তার বিরুদ্ধে হয়রানীমুলক পুলিশের সহযোগিতা মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলার বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে।উক্ত তদন্তে তারা দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। আর তাদের বিরুদ্ধে আমি ক্ষতিপূরণ মামলা নম্বর ৪২/২০২১ দায়ের করেছি। মামলাটি ঢাকা প্রথম যুগ্ম ডিস্ট্রিক জজ আদালতে পেন্ডিং আছে। আমরা প্রবাসিরা ন্যায় বিচারের জন্য আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। আদালতের আইনের প্রতি সম্মান রেখে আমরা বিশ্বাস করছি বাংলাদেশের সমস্ত আদালত থেকে ন্যায় বিচার পাবো ইনশাআল্লাহ। 

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে অবস্থারত প্রবাসিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আবহ্বান করেন। দেশের উন্নয়নের জন্য। কিন্তু একই তিন ব্যক্তির প্রতারনার কারণে যুক্তরাজ্য প্রবাসিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে না। আমাদের দেশের উন্নয়নের এদের জন্যই বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে আমি মনে করছি। 

জানা গেছে, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল এন্ড রিসোর্ট লিমিটেডের ব্যবসায়ীক বিরোধে বৃট্রিশ নাগরিক এম মোহিদ আলী মিঠু নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশী আদালতে মামলা করেন। উক্ত মামলায় রামপুরা থানার তৎকালীন ওসি সহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা, রিজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কয়েকজন নির্বাহী পরিচালকসহ প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ২৬জন আসামি করা হয়। উক্ত সিআর মামলা নং ৪২৩/ (পল্টন)। ধারা ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৫০৬/১০৯। মামলাটি আদালতের নির্দেশে পিবিআই এর একজন পরিদর্শক (নিরস্ত্র) তদন্ত করেন। এছাড়া ঢাকা রিজেন্সির হোটেল এন্ড রিসোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কয়েকজন পুলিশ কর্তকর্তা রামপুরা থানা পুলিশের সহযোগিতায় এম মোহিদ আলী মিঠুর বিরুদ্ধে মোট ৭টি মিথ্যা হয়রানী মূলক মামলা দিয়ে জেলখাটানোসহ হয়রানী করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগি মিঠু সকালের সময়কে জানিয়েছেন।

অপর সুত্র জানায়, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড কোম্পানীতে বিনিয়োগের নামে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সহ প্রবাসি বাংলাদেশিদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ সংগ্রহ করা হয়েছে।ওই সব বিনিয়োগকারী প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এসব অভিযোগে ভুক্তভোগি লন্ডন প্রবাসি মজিদ খান ২৭/২০২০ নম্বর মামলা করেছেন। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া সিএমএম কোট এর সিআর মামলা নং ১০৫/২০২১ খিলক্ষেত কোর্ট নং ২২২। আর ভুক্তভোগি প্রবাসি জামাল উদ্দিন মামলা করেছেন। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।  

আদালত সূত্র জানায়, গত ২২ নভেম্বরর সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে কবির রেজা ও ফাহিম আরিফ মোতাহারকে দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত। আর আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জামিন পাওয়া দুই আসামিকে আদালত আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুরাদ রেজা। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান, রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক শুনানি করেন।

আইনজীবী খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমে বলেন, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের কোটি টাকা বিনিয়োগে হোটেল নির্মাণের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বিনিয়োগ সংগ্রহ করে ১৮কোটি ৯৭হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। সেই মামলায় কবির রেজা ও ফাহিম আরিফ মোতাহারকে চলতি বছরের ১৮ মার্চ জামিন দেন ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার।আর ওই জামিনের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ জজ আদালতে আবেদন করেন। জজ আদালত সেই আবেদন খারিজ করলে বাদী পক্ষ হাইকোর্টের স্বরনাপূর্ন হণ। এরপর হাইকোর্ট তাদের জামিন স্থগিত করে দুই সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এ  ঘটনায় বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেন।


আরও পড়ুন