প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে আইনি স্বচ্ছতা

বরখাস্তের পরও বহালতবিয়তে অফিস করছেন ডা. সাইফুল!

news paper

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৮-১২-২০২১ রাত ৮:৩০

14Views

মন্ত্রণালয়ের আদেশে সাময়িক বহিষ্কার হয়েও বহালতবিয়তে অফিস করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড প্রমোশনের লাইন ডিরেক্টর ডা. সাইফুল ইসলাম। তিনি অফিসের গাড়ি, ড্রাইভার সবকিছু ব্যবহার করছেন। এ নিয়ে  প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এটা কিভাবে সম্ভব?

দুর্নীতির দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। সে মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনে আসেন  ডা. সাইফুল ইসলাম। এরপর থেকে নিয়মিত অফিস করে চলেছেন তিনি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গতকালও তিনি নিজ দপ্তরে অফিস করেছেন বলে জানা গেছে। নিচ্ছেন অফিসিয়াল সব সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে আইনি জটিলতা। কারণ, আইনি বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে অবশেষে গত ২৮ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত হন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলোচিত দুর্নীতিবাজ হিসেবে খ্যাত ডা. সাইফুল ইসলাম। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশে স্বাক্ষর করেন। একই তারিখে মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. শাহাদাত হোসেন কবির স্বাক্ষরিত চিঠিতে ডা. সাইফুল ইসলাম সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ জারি করে তা সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে অনুলিপি পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের ৪২২ নং স্মারকে এ আদেশ জারি করা হয়। 

ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সার্ভিস রুলন (বিএসআর) পার্ট -১ এর ৭৩ নং বিধির নোট -২ অনুযায়ী ফৌজদারি অভিযোগে অথবা দেনার দায়ে আটক সরকারি কর্মচারি গ্রেফতার হওয়ার তারিখ/ জেল হাজতে প্রেরণের তারিখ সাময়িক বরখাস্ত বলে বিবেচিত হবেন। সেহেতু মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ের সংস্থাপন বিভাগের অফিস স্মারক নং ED(Reg-Vi) –S-123/78115((500)kfdvJ 21 bcHmghv 2078 অনুযায়ী, ‘কোন কর্মচারী গ্রেফতারের পর জামিনে মুক্তি লাভ করিলেও মামলার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত হিসেবে থাকা উচিৎ। এ ক্ষেত্রে যাহাতে কোন জটিলতা সৃষ্টি না হয় সেই জন্য কর্তৃপক্ষের সাময়িক বরখাস্তের আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করিতে হইবে।’

যেহেতু রাষ্টপতির সচিবালয়ের ০৯.০২.১৯৮৯খ্রি. তারিখের রাস/ জানি(দুদ)/চা -১(৩১)ঢাকা /৮৮-১৪৩(৪৫)নং আদেশ অনুযায়ী  দুর্নীতিমূলক মামলায় যে কোন পাবলিক সার্ভেন্ট অভিযুক্ত হয়ে যদি গ্রেফতারকৃত হয় বা কোর্টে আত্মসমর্পণ করেন, তাকেও গ্রেফতার করার বা জামিন পাওয়ার দিন থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করার কথা। সেহেতু ডা. সাইফুল ইসলামকে বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস (বিএসআর) পার্ট-১ এর ৭৩ নং বিধির নোট ২. তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ের  সংস্থাপন বিভাগের অফিস স্মারক ED(Reg-Vi) –S-123/78115((500)kfdvJ 21 bcHmghv 2078 এবং রাষ্ট্রপতি  সচিবালয়ের  ০৯.০২.১৯৮৯ খ্রি.  তারিেেখর রাস/ জানি/(দুদ) চা -১(৩১) ঢাকা ৮৮-১৪৩(৪৫) নং আদেশ অনুযায়ী আদালতে আত্মসমর্পণের তারিখ ২০.০১.২০২০ খ্রি. থেকে চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। অর্থাৎ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ডা. সাইফুল ইসলামের সাময়িক বরখাস্ত ২০.০১.২০২০ হতে বলবৎ হিসেবে কার্যকর হওয়ার কথা। এ সময় থেকে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন। কিন্তু তার অফিস চালিয়ে যাওয়া কি সিদ্ধ হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শাহাদাত হোসেন কবির দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, আমরা তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তার অনুলিপি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন সে কীভাবে অফিস করছে তা সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন। তবে এটা হওয়ার কথা নয়। 

এ বিষয়ে জানতে  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অফিসিয়াল নাম্বারে বারবার চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। একই বিষয়ে জানতে ডা. সাইফুল ইসলামের মোবাইল নাম্বরে বার বার চেষ্টা করে মোবাইল রিং হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। একই বিষয়ে জানতে অধিদপ্তরের এডিজি ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার মোবাইল নন্বরে যোগযোগ করা হলে প্রশ্ন শোনার পর তিনি একটি জরুরি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোনটি কেটে দেন। 

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কেউই মুখ খুলতে চাননি। মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ডা. সাইফুল ইসলামকে অফিস চালিয়ে যেতে কোনো আদেশ দেয়া হয়েছে কি-না তাও জানা যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অনেকেই বলেছেন, সাময়িক বরখাস্ত হলে ওই কর্মকর্তাকে একই ধরনের দায়িত্বে রাখার নজির নেই বললেই চলে।


আরও পড়ুন