পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে বাধা, সহিংসতায় আহত ৩

news paper

সৈয়দ আককাস উদদীন, সাতকানিয়া

প্রকাশিত: ৩০-৯-২০২১ রাত ৮:৫৯

51Views

সাতকানিয়ায় চরতীর কেশুয়া এলাকার সাঙ্গু নদী থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের জন্য নদী থেকে মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে আর ওই বালু তোলার পাইপ কৃষকের ফসলি জমির মাঝখান দিয়ে নেয়া হচ্ছে- এমন অভিযোগ তোলেন চরতীর ৪নং ওয়ার্ডের কয়েকজন কৃষক। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে বাধা দেন স্থানীয় ফয়েজ আহমদ ও কায়সার সওদাগররা। পরে একপর্যায়ে ফয়েজ আহমদরা প্রায় ২০০ জনের মতো একটি দল পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার মেশিন ভাংচুর করলে ড্রেজার বহনকারী গাড়ি ও মেশিন এবং পাইপসহ অন্যান্য সামগ্রী ভাংচুর চালায়। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্তত ২০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয় বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে দায়িত্বরত মো. আবছার।
 
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরেক কর্মকর্তা ছবুর বলেন, কায়সার গ্রুপ বেশ কয়েক দিন আগে কন্ট্রাক্টর থেকে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল আর ওই চাঁদার ক্ষোভে আজকে কায়সার গ্রুপ আমরা যখন সরকারি কাজ করছিলাম তখন বাধা প্রদান করে। তিনি আরো বলেন, তারা দুদিক দিয়েই এসে আমাদের গুলি করে সাঙ্গু নদীতে ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিল। পরে আমরা যখন বসে যাই। তখন তাদের ছোড়া গুলি তাদের হাত-পায়ে লেগেছে। এখানে রুহুল্লাহ চৌধুরী ছিল না, তাকে টেনে আনা এখানে সমীচীন হবে বলে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে যারা কাজ করছি তারা তা মনে করি না।
 
অন্যদিকে কেশুয়ার আরেক কায়সার হামিদ বলেন, কায়সার সওদাগররা দুইদিকে অনবরত গুলিবর্ষণ করার দৃশ্য আমরা দেখেছি এবং তুলাতলি থেকে শতাধিক লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে কাজ করা লোকদের ওপর হামলে পড়ে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকেরাও ছাড় দেয়নি। আত্মরক্ষার্থে তারাও পাল্টা হামলা চালায়।
 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আজকে যারা আহত বলছে তারা তাদের নিজেদের করা গুলিতেই আহত হয়েছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অফিস সাতকানিয়া থানায় ইতোমধ্যে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আর আজকের অভিযোগের বিষয়েও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 
চরতীর কেশুয়ার রুহুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আসলে আমি ছিলাম না। কিন্তু পরে এলাকায় এসে খবর পেলাম কায়সার সওদাগর এবং ফয়েজ আহমদরা ২০০ জনের মতো লোক এসে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ করা লোকজনের ওপর।
 
রুহুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, বেশকিছু মিডিয়া আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছে। কারণ স্থানীয় একটি জামায়াত-শিবিরের বলয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতার শেল্টারে থাকে।  তারা ভালো করেই জানে আমি আগামী ইউপি নির্বাচনে নির্বাচন করতে যাচ্ছি। তাই আমাকে জনরোষে ফেলার কুমানসে তারা আজকের ঘটনার সূচনা করে। তবে আমি বলব, প্রধানমন্ত্রীর কাজে কেউ বাধা প্রদান করা মানে ফৌজদারি অপরাধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি ভেঙে বিকল করে দেয়া হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।
 
তুলাতলির মনসুরপাড়া এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, চরতীর ৪নং ওয়ার্ডের বেশকিছু লোক বন্দুক নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার মেশিনের দিকে গিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। পরে তাদের ড্রেজার মেশিন চালানো লোকজনও পাল্টা  হামলা করেন। আমি এখানে দীর্ঘকাল ধরে বসত করে আসছি। এখানে এমপি মহোদয়ের শ্যালক রুহুল্লাহ চৌধুরীর গ্রুপ আছে, সেটা পর্যন্তও কখনো শুনিনি। তার বিরুদ্ধে কুৎসা ছাড়া আর কিছুই নয়।
 
এদিকে, সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় সাংসদ প্রফেসর ড. আবু রেজা নদভী। তিনি ঘটনাস্থল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ঘটনাস্থলেই পুলিশ প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দেন।
 
সাংসদ নদভী আরো বলেন, দুই কিলোমিটার দূর থেকে চরতীর সাইফুল আর গিয়াস উদদীন খান মিন্টুর নেতৃত্বে ২০০ জনের মতো লোক এসে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করবে, তা মোটেও সহ্য করা হবে না। বেশ কয়েক দিন আগেও চরতীর মিন্টু আর সাইফুল গং ড্রেজিংয়ের চলা কাজ থেকে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছেন, যা সরকারি কাজে বাধা দেয়ার চরম উদাহরণ। সুতরাং আমি কষ্ট করে সরকার থেকে চরতীসহ সাতকানিয়া-লোহাগাড়াবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে নদী নিষ্কাশনের জন্য ড্রেজিং কাজে ৫৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প এনেছি। আর ‍এই প্রকল্পের কাজে চাঁদা দাবি- এটা সাইফুল আর মিন্টুর দুঃসাহস। অতএব আমি প্রশাসনকে বলেছি মিন্টু আর সাইফুলদের চাদাঁবাজির সংঘবদ্ধ চক্রকে থামানোর জন্য।
 
সাংসদ নদভী আরো বলেন, মিন্টু আর সাইফুল বিভিন্ন মিডিয়ায় ভুল তথ্য দিয়ে উন্নয়নমূলক কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পা‍ঁয়তারায় লিপ্ত। আমি প্রশাসনকে তাদের বিষয়ে জিরোটলারেন্স থাকতে বলেছি। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে প্রকৃত সত্যটা কাভার করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
 
সাতকানিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে স্থানীয় কিছু লোকের বনিবনা না হওয়ার ক্ষোভেই মূলত আজকের এ ঘটনা ঘটে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে কেন একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ বাধা দেবে, তা আমরা ইতোমধ্যে  তদন্ত শুরু করেছি। দোষীদের বিষয়ে তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি কাজে বাধা মোটেও বরদাশত করা হবে না।
 
অভিযুক্ত চরতীর গিয়াস উদদীন খান মিন্টু গণমাধ্যমকে বলেন, আমার নির্দিষ্ট কোনো গ্রুপ নেই। আমার বোন দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে তাই আমি বেশ কয়েক দিন ধরেই চট্টগ্রাম শহরে। এখন ডিজিটাল যুগ, প্রশাসন তদন্ত করে বের করুক আমি কোনো ধরনের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত কি-না।

আরও পড়ুন