ভোটারধিকার বঞ্চিত শ্রমিকরা

বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারি ফেডারেশনের সাধারণসভায় কেরুজ চিনিকলের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত

news paper

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্র‌তি‌নিধি

প্রকাশিত: ১৭-৭-২০২৫ বিকাল ৫:২৬

10Views

এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং দেশের সর্ববৃহৎ ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান কেরুজ কমপ্লেক্স ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্য এবং মুনাফা অর্জনে বরাবরই দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে এটি অগ্রগামী। তবে, বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী কেরুজ চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা অবহেলিত অবস্থায় রয়েছেন। বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারি ফেডারেশনের আগামী ২০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য সাধারণসভায় তাদের নিমন্ত্রণপত্র নেই, এমনকি কোনো নেতার ভোটাধিকার প্রয়োগেরও সুযোগ থাকছে না। এই সভা থেকেই ২৮ জুলাই ভোটের সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ হতে পারে বলে জানা গেছে।

ফেডারেশনের প্রতিটি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদের মধ্যে অন্তত একটিতে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের কোনো না কোনো নেতা নির্বাচিত হলেও এবার তা সম্ভব হচ্ছে না। যেহেতু তারা ভোটারই হতে পারছেন না, সেহেতু পদ-পদবী পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ১৯৩৮ সালে কেরুজ চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হলেও শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৮ সালে। সে থেকেই প্রতি দুই বছর পরপর এই ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে, এবার স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙে এক কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হয়েছে। সঠিক সময়ে যেমন ভোট হয়নি, তেমনি এই ভোট নিয়ে শুরু থেকেই চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। আইনি জটিলতায় আটকে থাকা এই নির্বাচন নিয়ে একপক্ষ চাইলেও অন্যপক্ষ তার বিরোধিতা করছে। ফলে নির্বাচনী কার্যক্রম আটকে আছে।

কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়ন নির্বাচন দেখার অপেক্ষার পালা থাকলেও বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারি ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সাধারণসভা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২০ জুলাই। গত ১৪ জুন গঠিত ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বানে সাধারণসভা থেকেই ২৮ জুলাই নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হতে পারে বলে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে।

বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারি ফেডারেশন গঠিত হয়েছে কেরুজ, রাজশাহী, নাটোর, জয়পুরহাট, নর্থবেঙ্গল, ঠাকুরগাঁও, ঝিলবাংলা, মোবারকগঞ্জ, ফরিদপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া, পাবনা, শ্যামপুর, সেতাবগঞ্জ চিনিকল, রেইন উইক যজ্ঞেশ্বর এবং বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের শ্রমিক ইউনিয়নগুলোকে নিয়ে। বছর কয়েক আগে তৎকালীন সরকার রংপুর, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া, পাবনা, সেতাবগঞ্জ ও শ্যামপুর চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করলে বাকি ১০টি চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ফেডারেশন গঠিত হবে।

ফেডারেশনের প্রতিটি নির্বাচনেই কেরুজ চিনিকলের কোনো না কোনো নেতাকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে নির্বাচিত হতে দেখা গেছে। এবার তার পুরোটাই ব্যতিক্রম ঘটতে যাচ্ছে। ২০ জুলাইয়ের ফেডারেশনের সাধারণসভায় কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের কোনো নেতা নিমন্ত্রিত মেহমান নন। যেহেতু কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়ন বিলুপ্ত, সেহেতু এবার কেরুজ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারি নেতৃবৃন্দ ছাড়াই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সূত্র থেকে জানা গেছে, গত নির্বাচনে ফেডারেশনের মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১৬৫ জন। ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি ছিলেন কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের সাবেক অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান। গত বছরের ১৭ অক্টোবর তিনি অবসর গ্রহণ করায় ওই পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। প্রত্যেক নির্বাচন ও সাধারণসভায় কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়ন থেকে অসংখ্য ভোটার ও নিমন্ত্রিত থাকতেন। সর্বশেষ গত নির্বাচনে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের ভোটার ছিলেন ১৫ জন। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া, এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই শ্রমিক-কর্মচারি নেতৃবৃন্দ অনেকটাই প্রকাশ্যে দুভাগে বিভক্ত রয়েছেন। একপক্ষ প্রকাশ্যে ভোটের পক্ষে থাকলেও অপরপক্ষ গোপনে হলেও ভোটের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আজ অবধি ভোট হয়নি। তবে কবে নাগাদ এই ভোট হবে তা অনেকটাই অনিশ্চিত। ফেডারেশনের এবারের নির্বাচনে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি নেতৃবৃন্দ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে এক কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।


আরও পড়ুন