চট্টগ্রামে ময়লার গাড়িতে রেলের স্ক্র্যাপ চুরি

news paper

চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ১৭-৭-২০২৫ দুপুর ৩:২১

157Views

চট্টগ্রামে রেলের একমাত্র ক্যারেজ এবং ওয়াগন মেরামত কারখানা থেকে যন্ত্রঅংশ ও স্ক্র্যাপ মালামাল চুরির অভিযোগ ওঠেছে। ময়লার গাড়িতে করে দীর্ঘদিন যাবৎ এই চুরি যজ্ঞ চলে আসলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই (বুধবার) চুরির ঘটনা ধরা পড়ার পর নড়েচড়ে বসেছে দায়িত্বশীলরা। তবে চুরির মূলহোতারা বরাবরই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় অপরাধ কমছেনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এবারও চালককে সাসপেন্ড করে মাফিয়া চোরেরা পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন। বিষয়টি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। মালামাল চুরি ও চালককে সাসপেন্ড করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাহাড়তলী ক্যারেজ এবং ওয়াগন মেরামত কারখানার কর্ম ব্যবস্থাপক রাজিব কুমার দেব নাথ।
জানা যায়, ১৯৪৭ সালে পাহাড়তলী ক্যারেজ এবং ওয়াগন মেরামত কারখানা প্রায় ৩১ একর জায়গার ওপর নির্মিত। এ কারখানায় প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৯শ’ যাত্রীবাহী গাড়ি এবং প্রায় ৭ হাজার মালবাহী গাড়ির যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিশেষ মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়।
এক বছর পরপর রেলওয়ের বগিগুলোর রঙ করার পাশাপাশি প্রতিবছর ইঞ্জিনও মেরামত করতে হয়। প্রতি তিন বছর পর লোকোমোটিভ, চাকা ও সিট নিয়মিত মেরামত করতে হয়। আর এসব কাজের জন্য প্রধান ভরসা পাহাড়তলীর এই কারখানাটি। ফলে এখানে প্রচুর পরিমান যন্ত্রাংশ ও স্ক্র্যাপ জমা থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্র বছরের পর বছর মালামাল চুরি করে রেলের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সুত্র জানায় প্রতিদিন কারখানা থেকে ট্রাকে করে ময়লা বের করা হয় আর সেই ময়লার সাথে কোন কোন গাড়িতে ৫ থেকে ৭শ কেজি করে মালামাল বের করা হয়। মাসে যার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কেজি, বছরে প্রায় ৬০ হাজার কেজি। ৫০ টাকা হিসেবে যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা কম/বেশি। ৫ বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা লোপাট। রেলকে কোন টাকা না দিয়ে দুষ্টু চক্রকে ম্যানেজ করে এভাবেই প্রতিনিয়ত মালামাল চুরি করে থাকে চক্রটি। প্রতিনিয়ত চুরি হলেও এসবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাতো নেয়া হয়নি বরং পুলিশের উদ্ধার করা মালামালকে রাবিশ বলে চালিয়ে দিতে তৎপরতা চালাচ্ছে চক্রের কেউ কেউ।
জানা যায়, গত ১৬ জুলাই (বুধবার) বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমবাগান ভাঙ্গাপুল এলাকায় জসিমের স্ক্র্যাপ এর দোকান থেকে কিছু স্ক্র্যাপ লোহা জাতীয় টুকরা আপনার থানার পুলিশ সদস্য কর্তৃক জব্দ করা হয়। খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আফতাব হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ”গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কিছু স্ক্র্যাপ মালামাল উদ্ধার করা হয়েছিল। রেলওয়ে কর্মকর্তারা দেখে মালগুলো তাদের বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলা করা হয়নি বরং চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন মালামালগুলো অকেজো স্ক্র্যাপ, যা ময়লার সাথে মিশে থাকে, সাইজে ছোট হওয়ায় আলাদা করা যায়না।”
রেলের স্ক্র্যাপ চুরির সাথে জড়িতদের বাঁচাতে খুলশী থানায় ওসি বরাবরে চিঠি দিয়েছেন পাহাড়তলী কারখানার এসএসএই (ইনচার্জ বগি সপ) মো. মোশাররফ হোসেন। উদ্ধার হওয়া মালামালকে রাবিশ দাবী করে চিঠিতে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, পাহাড়তলী কারখানা, চট্টগ্রাম হতে প্রতিদিন গেইট পাশ এবং যথাযথ পক্রিয়ার মাধ্যমে কারখানার অভ্যন্তর হতে নিজস্ব পিকআপ ট্রাকে করে টিএলআর এর মাধ্যমে প্রতিদিন ২/১ গাড়ী ময়লা বাইরে বের করে রেলওয়ের নির্দিষ্ট জায়গায় ড্রাম্পিং করা হয়। ময়লা গাড়ীর সাথে প্রতি গাড়ীতে কিছু ব্যবহার অনুপযোগী নাট, বল্টু ও বিভিন্ন প্রকারের স্ক্র্যাপ লোহার টুকরা থাকতে পারে। যাহা ময়লার সাথে থাকা লোহার টুকরাগুলো আলাদা করা সম্ভব হয় না।  মালামালগুলো ময়লার সাথে থাকা লোহার টুকরাগুলো আলাদা করা সম্ভব না হওয়ায় ময়লা গাড়ির সাথে অকেজো স্ক্র্যাপ লোহার টুকরোগুলো ময়লা মিশ্রিতভাবে পাহাড়তলী কারখানা হইতে বের হতে পারে। ময়লাগুলো থেকে ছোট ছোট শিশুরা এবং স্থানীয় গরীব মহিলারা খুঁজে খুঁজে সংগ্রহ করে পরবর্তীতে স্ক্র্যাপের দোকানে বিক্রি করে থাকতে পারে। পাহাড়তলী কারখানা থেকে অবৈধভাবে এই জাতীয় মালামাল বাহির করা সম্ভব নয়।
মালামাল চুরির বিষয়টি স্বীকার করে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্ক্র্যাপ মালামাল চুরির সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ট্রাকের চালক মো. রাছেল নামে একজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নজরে রেখেছি, যারাই এসব অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের স্বস্ব বিভাগে জানানো হয়েছে। 
গত ১৬ জুলাই এর একটি গেইট পাশ এ লেখা আছে, ”বিভিন্ন সপ, সাবসপ সমূহের স্তূপাকৃত রাবিশ, ময়লা আবর্জনা কারখানার বাহিরে ফেলার জন্য ট্রাক নং- ১০৫৬ এর সাথে মো. রাছেল টি নং-৯৩১০ এ ট্রাক নিয়ে কারখবানার বাহিরে যাবে এবং কাজ শেষে কারখানায় ফেরৎ আসিবে। আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী বগী সাপের ডাস্টবীন প্রতিনিধি, আমার উপস্থিতিতে ট্রাকে রাবিশ লোড করা হয়েছে। উহাতে রাবিশ ব্যতীত অন্য কোন মালামাল নেই। স্বাক্ষরিত - মো. নূরুল ইসলাম, পদবীঃ-ফিটার-১ম, টি/নংঃ-১৩১৫। ক্যারেজসপের উপ সহকারী প্রকৌশলী। গেইট পাশ এ আরো স্বাক্ষর করেছেন সহকারী কর্ম ব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান ও এসএসএই/ইনচার্জ/প্রোগ্রেস সপ লিংকন মজুমদার।
চুরির বিষয়টি মানতে নারাজ আরএনবি। এই বিষয়ে আরএনবির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমান্ডেন্ট মো. শহিদুল্লাহ বলেন, বিষয়টি আসলে চুরি নয়, ময়লার সাথে খুব ছোট আকারের কিছু নাট/বল্টু বেরিয়েছে, এটা প্রকৌশলীরা স্বীকার করেছেন। এখানে আরএনবির কোন দোষ নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন যেসব মালামাল দোকানে দেখে বুঝা যায় যে রেলের মালামাল তা রাবিশ হতে পারে না। আর পুলিশ যেসব স্ক্র্যাপ উদ্ধার করেছে তা এতো ছোট নয় যে ময়লার সাথে রাবিশ হিসেবে চলে যাবে। নিশ্চয় চুরি হয়েছে আর চোরকে বাঁচাতে রাবিশের নাটক সাজানো হয়েছে।


আরও পড়ুন