গোপালগঞ্জে সন্তানকে ফেরত পেতে ও মানব পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি করে মা হাসিনা বেগমের সংবাদ সম্মেলন

news paper

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭-৭-২০২৫ দুপুর ১২:২২

41Views

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নে পুত্রসন্তান রেজওয়ান ইসলামকে (১৯) ফিরে পেতে এবং মানব পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আজ বুধবার (১৬ জুলাই) বেলা ১১টায় জলিরপাড় বাজারের নিজ বাড়িতে মা হাসিনা বেগম সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

হাসিনা বেগমের পক্ষে তার ছোট বোন লাবনী আক্তার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন। লাবনী আক্তারের লিখিত বক্তব্যে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের জলিরপাড় (বনগ্রাম) বাজারের মৃত আবুল কাসেম শেখের স্ত্রী হাসিনা বেগমের হোসাইন মানিক ও রেজওয়ান ইসলাম রতন (১৯) নামে দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ছোট ছেলে মো: রেজওয়ান ইসলাম রতন মাদারীপুর শিবচর উপজেলার বাদশা মিয়ার মাদ্রাসায় মাওলানা বিভাগে লেখাপড়া করত।

হাসিনা বেগম তার নিকট আত্মীয় (১) জুয়েল শেখ (৩৭) ও (২) কালা শেখ (৪২) পিতা- মান্নান শেখ, (৩) বর্ষা (২৫) স্বামী সোহেল শেখ, (৪) শিউলী আক্তার শারমিন (২৮) স্বামী জুয়েল শেখ, সর্ব সাং মোল্লা কান্দি (থানার সামনে), উপজেলা রাজৈর, জেলা- মাদারীপুর। (৫) সুইটি বেগম (২৫) স্বামী আমিনুল সাং বড় ভাটরা, মুকসুদপুর, (৬) সাবানা (৩৫) স্বামী ভাষানী ও (৭) ভাষানী (৪২) পিতা- অজ্ঞাত জেলা- গাজীপুর। এরা সকলেই আদম ব্যবসার সাথে জড়িত বলে লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

উপরে উল্লেখিত চক্রটি হাসিনা বেগমের সম্পর্কে নিকট আত্মীয়-স্বজন হওয়ায়, তার ছোট ছেলে মো: রেজওয়ান ইসলাম রতনকে ইতালি পাঠিয়ে ভালো বেতনের চাকুরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে বলে প্রলোভন দেখায়। তাকে ইতালি পাঠাতে ২০ লক্ষ টাকা লাগবে বলে জানায়। চক্রটি হাসিনা বেগমকে বলে এখন ৮ লক্ষ টাকা দিতে হবে, বাকি টাকা ইতালি পৌঁছানোর পরে দিতে হবে।

তাদের কথা মোতাবেক হাসিনা বেগম তার জলিরপাড় নিজ বাড়িতে স্থানীয় কয়েকজনকে সাক্ষী রেখে জুয়েল শেখ গংদের হাতে ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর ৮ লক্ষ টাকা এবং ছেলের পাসপোর্ট তুলে দেন। টাকা হাতে পেয়ে চক্রটি ৩ মাসের মধ্যেই রেজওয়ান ইসলামকে ইতালি পাঠিয়ে দিবে বলে আশ্বস্ত করে। পরবর্তীতে জুয়েল শেখ গংরা ২০২৫ সালের ২৮ জানুয়ারি রেজওয়ানকে ইতালি পাঠানোর উদ্দেশ্যে হাসিনার বাড়িতে আসে এবং ২ লক্ষ টাকা দাবি করে। হাসিনা বেগম তাদের কথা মোতাবেক সন্তানকে বিদেশে পাঠানোর স্বপ্নে স্থানীয় সাক্ষীদের উপস্থিতিতে পুনরায় আরও ২ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। এরপর মানব পাচারকারী আদম ব্যবসায়ী জুয়েল শেখ গংরা রেজওয়ানকে বাড়ি হতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

ইতালি না পাঠিয়ে লিবিয়া পাঠিয়ে বাকি টাকা না দিলে তাকে ইতালি পাঠানো সম্ভব হবে না বলে মা হাসিনা বেগম সহ তার পরিবারকে জানায়। তখন হাসিনা বেগম ও তার পরিবার নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জুয়েল গংদের ৬ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। উক্ত টাকা পাওয়ার পরও জুয়েল গংরা রেজওয়ানকে ইতালি না পাঠিয়ে লিবিয়া জুয়েল গংগের সহযোগী মাফিয়া চক্রের মাধ্যমে একটি ঘরে আটকে রেখে পুনরায় তারা ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। লিখিত বক্তব্যে লাবনী আক্তার আরও জানান, আজ কয়েক মাস যাবৎ হাসিনা বেগমের সন্তানের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। রেজওয়ানের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। হাসিনা বেগম মুক্তিপণের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সন্তানকে ফেরত পেতে তাদের কাছে দাবি জানান। মানব পাচারকারী জুয়েল শেখ গংরা সন্তান ফেরতের ব্যাপারে হাসিনা বেগমকে কোনো সমাধান না দিয়ে মুক্তিপণের টাকার জন্য বার বার চাপ দিতে থাকে।

নিরুপায় হাসিনা বেগম সন্তান ফিরে পেতে গত ২০২৫ সালের ২৯ মে মুকসুদপুর থানায় (১) জুয়েল শেখ (৩৭) ও (২) কালা শেখ (৪২) পিতা- মান্নান শেখ, (৩) বর্ষা (২৫) স্বামী সোহেল শেখ, (৪) শিউলী আক্তার শারমিন (২৮) স্বামী জুয়েল শেখ, সর্ব সাং পশ্চিম রাজৈর উপজেলার মোল্লাকান্দি, জেলা- মাদারীপুর, (৫) সুইটি বেগম (২৫) স্বামী আমিনুল সাং বড় ভাটরা, মুকসুদপুর, (৬) সাবানা (৩৫) স্বামী ভাষানী ও (৭) ভাষানী (৪২) পিতা- অজ্ঞাত, জেলা- গাজীপুর ৭জনকে আসামি করে মুকসুদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং জি আর-১৭৯/২৫। সম্প্রতি ২৯ জুন ভোর রাতে তাদের নিজ বাড়ি হতে ১নং আসামি জুয়েল শেখ ও ২নং আসামি কালা শেখ পিতা- মান্নান শেখকে র‍্যাব-৮ আটক করে এবং বর্তমানে তারা গোপালগঞ্জ জেল হাজতে রয়েছে বলে জানা গেছে।

১৬ জুলাই, ২০২৫ বেলা ১১টায় জলিরপাড় (বনগ্রাম) বাজারের নিজ বাড়িতে হাসিনা বেগম সন্তান রেজওয়ান ইসলাম রতনকে ফিরে পেতে এবং মানব পাচারকারী আসামি জুয়েল শেখ গংদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিচার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লাবনী আক্তার আরও জানান, জুয়েল শেখ গংরা প্রকৃতপক্ষে একটি মানব পাচারকারী চক্র।

মুকসুদপুর থানার অধীনস্থ গোহালা পুলিশ ফাঁড়ির সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) আলমগীর হোসেনের তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, উক্ত আসামিদয় একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী দলের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন লোকজনদের উন্নত জীবন যাপনের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়া নিয়ে সহযোগী মাফিয়া চক্রের মাধ্যমে আটক করে মুক্তিপণ আদায় করাসহ মানব পাচার করে থাকে।


আরও পড়ুন