কিশোরী সামিয়ার জীবনে আশার আলো ফুটিয়ে ঢাকা পুলিশ সুপারের মানবিক দৃষ্টান্ত
প্রকাশিত: ১৬-৭-২০২৫ দুপুর ৩:৬
জীবনের প্রতিটি মানুষেরই একটি আশা ও একটি স্বপ্ন থাকে। এই স্বপ্নকে ঘিরে সন্তানের বাবা-মায়ের প্রাণান্ত চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে দ্বিধাবোধ করেন না। তবে সেটি যদি হয় নিজের সাধ্যের মধ্যে। সাধ্যের বাইরে কোনো কিছু ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে মানুষের অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তবে মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপা লাভের ক্ষেত্রে কিছু মানবিক ও মহৎ মানুষ পাশে এসে দাঁড়ান, তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছিল পোশাক শ্রমিক শামীম হোসেন ও রীমা আক্তারের মেয়ে সামিয়ার ক্ষেত্রে।
কিশোরী সামিয়ার হৃদপিণ্ডের ভাল্ব ছিদ্র হওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমের কল্যাণে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুজ্জামানের নজরে আসে। এরপর এই স্বল্প আয়ের বাবা-মায়ের চিন্তাটুকু নিজের কাঁধে নিতে দ্বিধাবোধ করেন নাই এই মানবিক পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুজ্জামান।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনিসুজ্জামানের মানবিকতায় নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে কিশোরী সামিয়া (১২)। চিকিৎসকদের তথ্য মোতাবেক মেয়েটি হৃৎপিণ্ডের ছিদ্র নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিল। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তার হৃৎপিণ্ডের ভাল্বগুলোর কার্যকারিতা কমে আসছিল, বিপন্ন হয়ে উঠছিল তার জীবন। তার চিকিৎসার সার্বিক ব্যয় বহন করে পাশে দাঁড়ান পুলিশের এসপি মো. আনিসুজ্জামান।
ফুসফুসের রক্তনালী সরু হওয়া এবং ফুসফুসের রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ায় শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, তীব্র চাপ, মাথা ঘোরা, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের কারণে প্রায়শই অজ্ঞান হয়ে যেত কিশোরী সামিয়া। তাকে নিয়ে পরিবার চিন্তিত থাকত। সামিয়ার বাবা শামীম হোসেন একজন পোশাক শ্রমিক এবং মা রীমা আক্তার গৃহিণী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সামিয়া দ্বিতীয়।
‘অভাবে চিকিৎসা বন্ধ শিশু সামিয়ার’—গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান এবং তার স্ত্রী রিফাত জাহানের নজরে আসে। তারা সামিয়ার চিকিৎসায় এগিয়ে আসেন।
ঢাকা জেলার (উত্তর) ট্র্যাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) মো. গোলাম সরোয়ারের মাধ্যমে সামিয়াকে গত ২৩ জুন রাজধানীর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ৮ জুলাই তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। অধ্যাপক ডা. মো. শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে মেডিকেল টিম দীর্ঘ সাত ঘণ্টার অস্ত্রোপচার করে। এতে পুরো পরিবারের মুখেই তখন হাসি ফোটে।
হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বাড়ি ফেরার পথে শামীম হোসেন বলেন, "নীরবে থেকেই চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করেছেন পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান দম্পতি। চোখের সামনে যেখানে আমরা মেয়ের মৃত্যুর প্রহর গুনছিলাম, সেখানে আজ তাকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি—এটা যে আমাদের কাছে কতটা বিস্ময়ের তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।"
কিশোরী সামিয়া বলে, "আমিতো মরেই যেতাম। আল্লাহ তায়ালা তাকে পাঠিয়েছিলেন আমাকে বাঁচাতে। আমরা তার জন্য দোয়া করি।"
সামিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও তদারকির দায়িত্বে থাকা ট্র্যাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, "তিনি (এসপি মো. আনিসুজ্জামান) আড়ালে থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পছন্দ করেন। তাঁর এই মানবিক গুণাবলীর জন্য ফোর্সের সদস্যরা তাঁকে শ্রদ্ধা করে। তার এই মানবিকতা শুধু সামিয়ার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বর্তমানে বিভিন্ন মানুষের মুখে এই বিষয়টি আলোচনায় আসতে সময় লাগেনি। তাই অনেকে মনে করেন, মহৎ কাজের মধ্য থেকেই মহৎ ব্যক্তির আবির্ভাব হয়। এক্ষেত্রে কোনো পদপদবি নেই। যেকোনো মহৎ কাজের মধ্যে মহৎ ব্যক্তি সামনে এসে যায়।"