জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দিবে প্রবাসীরা, আনন্দে ভাসছে পরবাসে বাঙালীরা

news paper

এস এম আকাশ

প্রকাশিত: ১৬-৭-২০২৫ দুপুর ১২:৩৭

195Views

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান অন্তবর্তী সরকার। তাই বিশ্বের সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে ব্যপক আনন্দ বিরাজ করছে প্রিয় মাতৃভূমির জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবার গণরায়ে যোগ দিতে পারার আনন্দে। যা অতীতের কোনো সরকারই এটা কার্যকর করেনি এবং করতে পারেনি। আগামী নির্বাচনে লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিকে ভোটাধিকারের আওতায় আনতে অসাধ্য এই কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাতে নিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালিন সরকার।বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনও প্রবাসীদের জন্য ভোটের ব্যবস্থা করতে যথেষ্ট আন্তরিক। যার উদ্যোগ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কর্মশালা ও সেমিনারে আলোচনা করে যাচ্ছেন ক্রমাগত। মতামত নেয়া হচ্ছে বিশেষজ্ঞদেরও।
নির্বাচন কমিশন থেকে সরাসরি জানা যায়, প্রথমে প্রক্সি ভোটের কথায় রাজনৈতিক দল গুলো ভেটো দেয়। তাদের বক্তব্য ছিল প্রক্সি সিস্টেমে ভোট হলে যে প্রতীকে ভোট পড়ার কথা তা নাও পড়তে পারে। তাই অনলাইনে ও পোস্টাল পদ্ধতির কথা আলোচনায় গুরুত্ব পায়। এ পদ্ধতি আগেকার পোস্টাল সিস্টেমেই হবে। শুধু শর্ত হলো অনলাইনে প্রাবাসীরা সকল তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করবে। অপরদিকে এটি আয়োজনে সরকারি ডাক বিভাগের ই এম এস যোগে ভোটার প্রতি ৫০০/-টাকা আর বেসরকারি ভাবে অনূর্ধ্ব ৫০০০/-টাকা পর্যন্ত ব্যয় হবে। কিন্তু প্রশ্ন এসে ঠেকে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ভোটার। লাখ লাখ এসব প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে। বিশাল এই ব্যয়ের বিষয়টি ভাবনায় ফেলেছে ইসি সরকার ও সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু সাহস করে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।
বিশ্লেষণে উঠে আসে প্রবাসীদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিকে কীভাবে আরও কার্যকর করা যায় তা গবেষণা করতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নিয়ে গঠিত তথ্য প্রযুক্তি কমিটিকে দিয়ে ডাক বিভাগ,ফেডএক্স ডি-এইচ-এল প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রক্রিয়াগত মতামত নিতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বিশ্লেষণে আরও উঠে আসে,বেসরকারিভাবে কুরিয়ার সার্ভিসে প্রবাসীরা কিভাবে 'পোস্টাল ব্যালট সার্ভিস' প্রোগ্রামে সংযুক্ত হতে পারবে তার উপর সহজ পন্থা বের করা অত্যাবশক। পাশাপাশি তাদেরকে এটাও অবগত করত হবে যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তাদের জন্য সরকারি ভাবে ভোটার প্রতি ৫০০/-টাকা এবং বেসরকারি ভাবে অনূর্ধ্ব ৫০০০/-টাকা পর্যন্ত ব্যায় করছে সুতরাং কেউ যেন এই প্রোগ্রামকে অবহেলা না করে। একই সাথে তাদের ভোট দান প্রক্রিয়া কিভাবে হবে বা দিবে তা জানানোর নিশ্চিয়তা ইসি থেকে প্রতিশ্রুতি দিবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ইসি"র অবস্থান সম্মন্ধে জানা যায়, চলতি বছরের ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। উক্ত বৈঠকে প্রবাসীদের ভোটাদানের ব্যয় ও পোস্টাল ব্যালটে ভোটগ্রহণে বিপুল অর্থের প্রয়োজন বলে তুলে ধরেছেন তিনি। এসবের মধ্যে নির্বাচন কমিশন আরও একটি সুখবর দিয়ে জাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। গত ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র সহ নতুন করে আরও ৬টি দেশে ভোটার নিবন্ধনের সম্মতি পেয়েছে ইসি। এ নিয়ে সর্বশেষ বিশ্বের ১৫টি দেশে বাংলাদেশিদের ভোটার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পেলো দেশের স্বাধীন ও সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর এ তথ্য জানান। তিনি আরও অবগত করেন,নতুন করে ৮টি দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেয়া চিঠির মধ্যে প্রথমে  যুক্তরাষ্ট্র,মালদ্বীপ,জর্ডান,দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওমান সহ মোট পাঁচ দেশে পরে ১৫ জুলাই জাপানে নতুন করে ভোটার নিবন্ধন করার অনুমতি পেয়েছে ইসি। এর আগে কমিশন ৪০টি দেশে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। তার মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতিক্রমে বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত,সৌদি আরব,ইতালি, যুক্তরাজ্য,কুয়েত,কাতার,মালয়েশিয়া অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা সহ মোট ৯টি দেশে ১৬ টি বিশেষ স্টেশনের মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য মতে বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন প্রবাসী বাংলাদেশী নিয়ে প্রথম স্থানে সৌদি আরব এবং মাত্র ২ হাজার ৫০০ জন প্রবাসী নিয়ে সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। এর মধ্যে এ পর্যন্ত পূর্বে অনুমতি পাওয়া ৯টি দেশ থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের আবেদন জমা পড়েছে ৪৭ হাজার ৩৮০টি। তন্মধ্যে যাচাই বাছাইয়ে বাদ পড়েছে ৩ হাজার ৬৯২টি আবেদন।

প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনতে কি পরিমাণ ভোটার অন্তর্ভুক্ত হবে..? মোট কত টাকার প্রয়োজন হবে..? এবং এটি কতটুকু কার্যকর হবে..? এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় কি সিদ্ধান্ত পেলেন সিইসি..? এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে নিয়োজিত কোন কমিশনার বৃন্দ আপাতত এ বিষয়ে কোন তথ্য দেননি বরং ধৈর্য্য রাখতে বলেছেন ও চমকেট অপেক্ষা করার ঈঙ্গিত দিলেন। আলাদা এক সাক্ষাৎ এ নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ শুধু এতটুকু জানিয়েছেন,প্রক্সি বাদ দিয়ে ডিজিটাল পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির দিকে আছি আমরা এবং রেজিস্ট্রেশন পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিকে আরও কিভাবে কার্যকর করা যায় তা নিয়ে পর্যালোচনা করছে কমিশন। এবং আইটি বেইজড ও পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিটি সহজতর এবং ব্যয় সাশ্রয়ী করতেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। বিশ্লেষণে আরও উঠে আসে,ইসি সংশ্লিষ্ট অ্যাডভাইজরি কমিটি ইতিমধ্যে সরকারি বেসরকারি ডাক বিভাগ,ফেডএক্স ও ডি এইচ এল প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ ও মতামত আদান-প্রদান করে এগুচ্ছে।যেহেতু সংবিধানের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।সেক্ষেত্রে প্রবাসীদের কাছে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিকে আরও সহজতর করার জন্য সক্রিয় ভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বতন্ত্র বিশ্লেষণ থেকে উঠে আসে,সরকারি ডাক বিভাগ জানায় ইএমএস ও রেজিস্টার্ড সার্ভিসে একজন ভোটারের ব্যালট পেপার প্রবাসে পাঠানো এবং পরবর্তীতে ফেরত আনতে তাদের ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে। অপরদিকে বেসরকারি সার্ভিসের কর্তৃপক্ষ জানায় সর্বনিম্ন ১২ দিনের মধ্যে পোস্টাল ব্যালট প্রবাসে পাঠানো ও ভোট শেষে ফেরত আনা সম্ভব। তারা আরও জানায় আমাদের নিয়োজিত প্রতিনিধি প্রবাসী ভোটারকে ফোন করে তার কাছে পোস্টাল ব্যালট পৌঁছাবে এবং তাৎক্ষণিক ভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করে রাষ্ট্রীয় সীলমোহর গ্রহণের মাধ্যমে ভোট নিয়ে সরকারি খামে পূণরায় সীলগালা করে ফেরত আনবে। উক্ত পোস্টাল ব্যালট আনা-নেওয়ার বিবিধ খরচ মিলিয়ে ৪০-৪৫ ডলার খরচ হতে পারে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫০০০/- টাকা। এ ধারাবাহিকতায় ইসি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান,চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল নির্বাচন ভবনে এক কর্মশালার মাধ্যমে ইসি সংশ্লিষ্ট অ্যাডভাইজরি কমিটি পুনঃগঠন করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। সমন্বিত ভাবে প্রবাসীদের ভোটদান নিশ্চিত করতে সরকারি বেসরকারি সংস্থা,স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন,সুশীল সমাজের প্রতিনিধি,সামাজ প্রতিনিধি,নাগরিক অধিকার ও নির্বাচন বিশ্লেষক বৃন্দ,সংবিধান বিশেষজ্ঞ,প্রিন্ট- ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রতিনিধিদের সমন্বয় করে অ্যাডভাইজরি কমিটি উপস্থিত প্রতিনিধিদের মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে আলাদা আলাদা করে দল গঠন করে এর মধ্যে ১৮টি দল অনলাইনের পক্ষে ও ১৫টি দল পোস্টাল ব্যালটের পক্ষে এবং প্রক্সি ভোট কে সমর্থন জানিয়ে ইসিতে স্ব স্ব মতামত দিয়েছে আরও ৮টি দল।
পরিশেষ কথা হলো পরবাসে থেকে নিজের দেশে নাগরিকত্বের রায় বা ভোট দিতে পারাটা বাঙালী হিসেবে আমাদের গর্বের। একইসাথে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রতি গণ মানুষের আস্থা এবং দায়বদ্ধতা বাড়বে। ফলে বাংলাদেশ বিনির্মিত হবে গৌরবের নন্দিত রেমিট্যান্স হাব।

লেখক;
সাংবাদিক, নাগরিক অধিকার ও নির্বাচন বিশ্লেষক।


আরও পড়ুন